##
-ভাই আজ কি বার?
-বিসিএস বার।
##
তিন দিন ধরে একটাই প্রশ্ন- সীট কোথায় পড়ছে? বলে দিলাম- নারায়নগঞ্জ শামীম ওসমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বলেন কি? এত দূর?
কাছে আনার চেষ্টা করছি। নারায়নগঞ্জের উপর অনাস্থা জানিয়ে পি.এস.সি বরাবর আবেদন করেছি। দেখা যাক। দোয়া করিস ভাই।
দিন যেতেই আবার প্রশ্ন, ভাই কী হলো? সীট কোথায়?
নরসিংদী বেলানগর ডিগ্রি কলেজ।
বলেন কি!এত দূর!!
আরেকটু দূরে নেয়ার চেষ্টা করছি। পি.এস.সি বরাবর অনাস্থা আবেদন করেছি। দেখি, নরসিংদী ছাড়িয়ে হবিগঞ্জ নেওয়া যায় কি না। বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিতে পারলে ভালই হবে। দোয়া করিস ভাই।
এরপর যে-ই সীট কোথায় জানতে চায় তাকেই একটা গল্প বলি। বলি, প্রথমে সীট পড়ল নারায়নগঞ্জ। পছন্দ হল না। রিফ্রেশ বাটন টিপলাম। এবার দেখি নরসিংদী। হবিগঞ্জ যেতে মাঝখানে শুধু ভৈরব। বড় আশা নিয়ে আবার রিফ্রেশ দিলাম। দেখি আমিনবাজার। ভাবলাম ভূল হয়েছে। আবার রিফ্রেশ দিলাম। দেখি জাবি স্কুল এন্ড কলেজ। এর পর আর রিফ্রেশ দেই নি। বোঝলাম, এখন রোড চেঞ্জ করেছে। আরেকবার রিফ্রেশ দিলে হয়তো পাটুরিয়া চলে যাবে।
##
আমার ফেসবুকে আসক্তি আছে। সেলফিতে মারাত্নক দুর্বলতা। বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢোকেই একটা সেলফি পোস্ট দিতে হবে। ফিলিংস জানাতে হবে। সমস্যা হলো আমার মোবাইল নাই।
রুমমেটের মোবাইল চাইলাম। সে দশ হাজার টাকা জামানত চায়। বলে, যদি মোবাইল আটক করে নিয়ে যায় তার জন্য জামানত। রুমমেট বলে সে এক হাজার ছাড় দিয়েছে। ১১ হাজার টাকার মোবাইল ১০ হাজার টাকা!
৭ হাজার মেনেজ করেছি। আর ৩ হাজার টাকার জন্য দৌড়ের উপর আছিরে ভাই!
##
ক্যালকুলেটর, মোবাইল না নিলেও সমস্যা নাই। এনড্রয়েট ফোন নিতে দেয়া উচিত! অন্তত ফেসবুকিং-এর জন্য।
আচ্ছা, নিতে দিলে কেমন হতো?
• হলে ঢোকেইঃ ফিলিং- এক্সাইটেড!! পাশে সুন্দরী এক মেয়ে বসেছে।
• ১০ মিনিট পরঃ পুরো প্রশ্নটা পড়লাম। বেশ সহজইতো মনে হচ্ছে!
আচ্ছা, নিকারাগোয়ার রাজধানি কি? অপশন আছে-ক. ব্রাসেলস খ. মানাগোয়া গ. ভোদাপেষ্ট ঘ. কাঠমুন্ডু।
আমারতো মনে হচ্ছে কাঠমুন্ডু। নিকারাগোয়া কি কোন দেশ? প্রশ্নটা ভূল নাতো! আপনাদের কি মনে হচ্ছে?
• ১ ঘন্টা পরঃ মাত্র ৪১ টা প্রশ্ন দাগালাম। সময় আছে আর এক ঘন্টা। আরো ১৫৯ টা দাগাতে হবে। দ্রুত করতে হবে। লাইক দিয়ে দোয়া করবেন ভাই।
##
৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমান উগান্ডায় একটা ছোট্ট স্বাধীন দেশ ছিল। নাম মিরিন্ডা। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সাহিত্য সংস্কৃতিতে খুবই সমৃদ্ধ এক নগর ছিল মিরিন্ডা। যুবকেরা ছিল স্বাধীনেচেতা। সৃষ্টিশীলতার চর্চা ছিল সমগ্র রাষ্ট্র ব্যাপি। এতটাই যে, আশেপাশের রাষ্ট্রগুলো মিরিন্ডার সমৃদ্ধি দেখে হিংসায় জ্বলে মরত।
পাশের শত্রু রাষ্ট্র ফ্যান্টা মিরিন্ডার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে খুবই চিন্তিত। ফ্যান্টা রাজা ক্রেসিনা ছিল খুবই কুটকূশলী। সে ষঢ়যন্ত্র করে তার বিচক্ষণ গুপ্তচর অহিলোকে মিরিন্ডা রাজ্যে পাঠালো। উদ্দেশ্য, যে করেই হোক মিরিন্ডার সৃষ্টিশীল যুবকদের থামাতে হবে।
অহিলো মিরিন্ডার রাজার খুব বিশ্বস্থতা অর্জন করে। সে মিরিন্ডার রাজাকে বুদ্ধি দেয়- হাজার হাজার যুবকদের অহেতুক জ্ঞানার্জন বাদ দেয়াতে হবে। এমন জ্ঞান তাদের দিতে হবে যেন রাষ্ট্রের মঙ্গল হয়। সে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তাব করে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই কেবল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাবে। রাজা তার প্ররোচনায় এক পর্যায়ে রাজি হন।
বিপত্তিটা বাধে পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে। এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্ন কী হবে? অহিলো রাজাকে পরামর্শ দেয় একটি সিলেবাস প্রণয়ণের। যেখানে একটা প্যাটার্ণ থাকবে। বিজ্ঞান থেকে ১০ টি, অর্থনীতি থেকে ১০ টি, গণিত থেকে ১০ টি...এভাবে ১০০ টি প্রশ্ন থাকবে। যারা বেশি পারবে তারাই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
১০ বছরের ভেতর দেখা গেল, মিরিন্ডা রাজ্যের সকল যুবক একই ধরনের বই নিয়ে ব্যস্ত। সবাই এখন নির্দিষ্ট এক-দুইটা বই নিয়ে মাথা নিচু করে মুখস্ত করেই যাচ্ছে। যে যত আগে সিলেবাস মুখস্ত করবে, সে তত আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পেশায় যেতে পারবে।
মিরিন্ডা রাজ্যে এখন আর সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। যুবকেরা আর মাথা তোলে হাটে না। তারা আর আকাশ দেখে না। সবাই একই ধরণের বই নিয়ে মাথা নিচু করে পড়েই চলছে। ফলে মিরিন্ডার সকল যুবকের মেরুদন্ড দিন দিন বাঁকা হতে থাকলো।
এসব দেখে দেখে ফ্যান্টা রাজা হাসে। কারন সে জানে, মিরিন্ডার পতন এখন সময়ের ব্যাপার। হ্যা, মিরিন্ডা রাজ্যের সম্পূর্ণ পতন হতে লেগেছিল মাত্র ৭৩ বছর।
(গল্প ইতিহাস হবে কেন?)
##
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার। কয়েক লক্ষ বইয়ের স্তুপ। ধুলো বালিতে আস্তরণ পড়ে গেছে। পৃথিবীর সকল ধরণের জ্ঞান এখানে রক্ষিত।
সকাল ৬ টা থেকে গ্রন্থাগারের সামনে বিশাল লাইন। হুড়োহুড়ি, ধস্তাধস্তি। কে কার আগে ভিতরে যেতে পারে। একটু পিছিয়ে পরলেই বসার সীট পাওয়া যাবে না।
সবার সাথেই একটি করে ব্যাগ। ব্যাগে বই। নিজেদের কেনা বই। লাইব্রেরির লক্ষ বই ছুয়ে দেখাতো বহু দূর, ওরা তাকিয়েও দেখে না। এমপি থ্রি, ওরাকল বা কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এদের সঙ্গী। বই যাই হোক, বিষয় এক। সবাই মাথা নিচু করে, চোখ আধবুঁজে দ্রুত লয়ে ঠোট চালাচ্ছে। এ যেন এক অদ্ভুত মুখস্তবিদ্যার প্রতিযোগিতা। কে কার আগে কত মুখস্ত করতে পারে!
লাইব্রেরির লক্ষ বই কি এসব দেখে মিটি মিটি হাসে, না রাগে দুঃখে চোখ ফেটে জল ফেলে!!
##
আপনি বাংলা সহিত্য পড়ছেন। প্রাচিন, মধ্য, আধুনিক সকল যুগ আপনার মুখস্ত। আপনি জানেন, কোন বই কে লিখেছে, কবে লিখেছে। এমনকি চরিত্রগুলোও আপনার মূখস্ত। শুধু কী লেখা আছে সেটাই আপনি জানেন না। কারন, গল্প বিসিএস এ আসে না!
ধরুন প্রশ্ন এলো- সখি, প্রান্তিকেতে ধরেছিনো তোর হাত
হেটে হেটে এখন সুইমিং পুলে
পৃথিবীতে নেমেছে নিকষ কালো রাত
বসেই আছি দু’জন, সময়কে ভূলে!
লাইনগুলোর কবি কে? ক. আল মাহবুব খ. মাহবুব গ. এ. মাহি ঘ. এ.এ.মাহবুব।
উত্তরটা আপনার জানা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। জানা থাকলে একটিতে ঠিক দিয়ে আসবেন। আর জানা না থাকলে ভাববেন, চারজনের একজনকেও চিনলাম না। ইস, আরেকটু বেশি পড়া দরকার ছিল!!
অথচ আপনি কিন্তু জানেন না, এ চারজন মূলত একজনই!!
##
অনেক নীতিকথা ঝড়ল। এখন আসা যাক আসল কথায়! বিসিএস এ্যাপলাই না করা মারাত্নক ভূল সিদ্ধান্ত ছিল! সে ভূলকে ঢাকার জন্যেই মূলত এত প্যাচাল।
বন্ধুরা, যারা বিসিএস দিচ্ছ সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।