বৃষ্টি,
তুমি রিনরিনে বৃষ্টি নও মোটেও, তুমি বালতির ধারায় প্রবাহিত ঝনঝনে বৃষ্টি। তোমার কন্ঠে এ ঝনঝনে বৃষ্টির সুরই আমি শুনেছি।
ভাবিনি কখনো কাউকে চিঠি লিখব। যুগটাও এমনই। চিঠি লেখার সব পথ বন্ধ। তাতে কী। আমার জন্যতো আজ চিঠিই ভরসা। ধন্যবাদ তাই জগতের সকল প্রাগৈতিহাসিক প্রেমিক অগ্রজদের, যারা চিঠি নামক অদ্ভুত আনন্দদায়ক এক বস্তুর স্রষ্টা।
ভাবতে পার এ আবার কোন আপদ! বলা নেই, কওয়া নেই- একদম চিঠি নিয়ে হাজির! কিন্তু এছাড়া কি আমার আর কোন উপায় ছিল? তুমি আসবে, আমি ট্রান্সপোর্টে বসব আড্ডায়, আর দেখব অতর্কিতে এক ব্যতিক্রমি নারী, যার চোখের দিকে তাকালে কাক ডাকা ভোরের নির্মল ছবি ভেসে ওঠে। পিছু নেব তার। সব বাঁধা ভয় ডিঙ্গিয়ে কথা বলব তার সাথে- এইতো ঘটে গেল কেমন স্বপ্নের মত! একে অদ্ভুত ভাগ্যের খেলা ছাড়া আর কী বলা যায়? এ চিঠিও তাই ভাগ্যের খেলার অংশ। আমি-তুমি কী করতে পারি! ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণতো আর আমাদের হাতে নেই!!
হ্যা, তোমাকে দেখেই আমার কন্ঠে কবিতা বেজে ওঠেছিল। তোমার পিছু না নিয়ে আমার কোন উপায় ছিল না। কোন বাঁধা আমাকে আটকাতে পারেনি। জীবনের এতটা বছর প্রেম বিষয়ে উদাসিনতা অল্প সময়েই আমাকে কাতর করে তুলল। কী যেন এক আবিস্কারের আনন্দে মেতে উঠল মন। নেচে উঠলাম আমি। সফল একটি কবিতা লেখার পর কবির চোখে মুখে যে যে আনন্দের ঝিলিমিলি খেলা করে আমার মাঝেও তাই করছিল। রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি আমার কন্ঠে বেজে ওঠে-‘আমি পাইলাম, ইহাকেই পাইলাম।’
কীভাবে কী হল এখন ভাবলে অস্পষ্ট লাগে। মধুর স্বপ্ন দেখেছ কখনো? স্বপ্ন জাগরনের পর ঘটনাক্রম মনে করলে মনে হয় অনেক দূরের অস্পষ্ট রেখাচিত্র সময়ের মত প্রবাহমান। ঠিক যেন দেখা যায়, আবার দেখা যায়ও না। অথচ অদ্ভুত এক ভাল লাগা আমেজ লেগে থাকে সমগ্র সত্ত্বায়। আমারও আজ এমনই লাগছে। বিশ্বাস কর, স্থিরচিত্রের মত একটি ছবি আমার চোখের সামনে আটকে আছে। আর সেটা হল তোমার পকেটে হাত রেখে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকার স্পষ্ট অবয়ব। এ দৃশ্যটা আমাকে একটুও স্বস্তি দিচ্ছে না। প্রতি মুহুর্তে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।
বৃষ্টি, কী ভাবছ? আমাকে চেননা, দেখনি কোন দিন এর আগে, জাননা কিছুই আমার সম্পর্কে- অথচ সামনে দাঁড়াচ্ছি বিশাল প্রত্যাশা আর স্বপ্ন নিয়ে। পাগলের মত যা মন চায় লিখে যাচ্ছি তোমাকে নিয়ে। ওহে, আমাকে আবার সত্যিই পাগল ভেবে বসছ নাতো! খবরদার, আমি কিন্তু দিব্যি সুস্থ্য মানুষ!!
ভাল লাগা হয়তো এমনই পাগলাটে। পরিচয়ের ধার ধারে না কখনো। কে কার পরিচিত আর কে কার পরিচিত নয়, ভালবাসা এসব পাত্তা দেয় না। প্রেমে পড়ার ধরনতো দু‘টিই। কেউ পরিচিত কারো প্রেমে পড়ে। আর কেউ প্রেমে পড়ে পরিচিত হয়। আমার ক্ষেত্রে না হয় দ্বিতীয়টিই হল।
বৃষ্টি, অনেক আজেবাজে কথা বলছি। আসলে ঠিক কী বলব, আর কী বলতে হবে তা আমার অজানা। তবে ভরসা এই, তুমি বুঝে নিবে আমার মনের কথা। আমার ব্যাকুলতা তোমার চোখে ধরা পড়বেই। আমি নিশ্চিত, তোমার চোখে বুদ্ধির যে ঝিলিক প্রতিমুহুর্তে খেলা করছে, সে বুদ্ধির জোরেই তুমি বুঝে নিতে পারবে আমার সব। আমার অতীত, আমার বর্তমান ও আমার ভবিষ্যত।
গত কাল ছিল আমার জীবনের মোড় ঘোড়ানো এক দিন। অনেকদিন ধরেই সময়টা যাচ্ছিল খারাপ। লেখার টেবিলে মন বসাতে পারছিলাম না মোটেও। বই পড়ার উৎসাহেও কেমন যেন ভাটার টান। কিন্তু হঠাৎ সব বদলে গেল। বললাম না, জীবনের মোড় ঘোড়ানো দিন এল। তোমাকে দেখলাম, খুঁজে বের করলাম, কথা বললাম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কয়েকটা সংক্ষিপ্ত অথচ মধুর মুহুর্ত। এই অল্পক্ষণেই তুমি বৈশাখের অসহ্য দাবানলে নিয়ে এলে ভরা বসন্ত। বৃষ্টি হয়ে সিক্ত করলে আমাকে। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস ছড়িয়ে দিলে আমার চারপাশে। এবং প্রায় নয়মাস পর আমার কন্ঠে কবিতা বাজতে লাগল লাইনের পর লাইন। কোন চেষ্টা সাধনা ছাড়াই আমি লিখলাম অবিরাম।
তোমার চোখ বারবার ভাসছিল আমার সামনে। তোমার অতি আশ্চর্য কুমল মায়াবি মুখ সরাতেই পারছিলাম না আমার সামনে থেকে। আজ কলম নিজেই লিখতে শুরু করেছে কবিতা। কবিতাও ফিরে পাচ্ছে প্রাণ। আহ! কী মধুর, কী মধুর সুরের তান.. .. ..আমি নই। যেন কলম নিজেই লেখে-
তোমার মাঝে আমি দেখি
কাকা ডাকা ভোরের নির্মল ছবি
যা অসহায় করে দেয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনসৃষ্ট দানব
থেকে শুরু করে পৃথিবীর ভয়ঙ্কর সব মানব
অথবা মানব জাতিকে। আমার চোখের সামনে
প্রামাণ্যচিত্রের মত রাজপুত্র এযিয়েলের মৃত্যুমুখে
বাড়িয়ে দেয়া এক পাঁ আর নবী ঈসাচারের ক্ষতবিক্ষত
ধর্মীয় দেহ ভেসে ওঠে, যেন জীবন্ত-অক্ষত।।.. .. ..
সত্যি বৃষ্টি, তুমি এমনই। তোমার আশ্চর্য রূপের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবও অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকবে। আর আমিতো সামান্য এক প্রেমিক মানুষ!!
বৃষ্টি, আমি প্রতীক্ষায় আছি তোমার আগমনের। তুমি কথা দিয়েছ আবার আসবে আমার কাছে। অন্তত আরো একবার গর্বিত ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়াবে আমার সামনে। আরো একবার সিক্ত করবে আমার তৃষ্ণার্ত শরীর-মন। আরো একবার প্লাবিত করবে বৃক্ষ-ছায়াহীন মরুময় আমার পৃথিবীকে। আমি এখন এ অপেক্ষায়ই দিন গুনি।
আচ্ছা, এইযে যা খুশি লিখছি তোমাকে দেব বলে, তুমি যদি না আস? আমি সারাদিন ছটফট করছি, ভাবছি তোমার কথা। বাচালতা আমাকে অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। যার-তার সামনে খেই হারানো মাতালের মত তোমার কথা বলছি। এক বন্ধু হঠাৎ ই বলে বসল, বৃষ্টি আসবেতো! দেখ, তোর কথা হয়ত ভুলেই গেছে।
বিশ্বাস কর, আমি ওর কথায় একটুও কান দিতে চাইনি। কেন জানি তুমি আসবে না এমন সম্ভাবনার কথা আমার মাথায় একবারের জন্যও আসতে চায়নি। তারপরও রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবছিলাম তোমার কথা। তোমার সাথে দেখা হবে, কথা হবে। আমার কন্ঠে আবারও কবিতা বাজবে, আমাকে আবারও তুমি জাগাবে..। হঠৎ বন্ধুর কথাটা মাথায় এলো- আচ্ছা, তুমি যদি না আস! যদি সত্যিই না আস!!
ভাবনাটা মাথায় আসতেই বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠি। কেমন যেন অশান্তি শুরু হয় দেহ-মনে। আমার হার্ট যে এতটা দুর্বল জানা ছিল না। এখন দেখলাম, বুকটা ধর্ ফর্ করছে। সত্যিই তো! যদি তুমি না আস??
আবারও কবিতা চলক দিয়ে ওঠে মস্তিস্কের কোন এক কোণে। লেখলাম কিছু একটা খাতায়। এতেও স্বস্তি পেলাম না। টান দিয়ে হাতের কাছে রাখা কবিতাটা পড়তে লাগলাম শব্দ করে-
আমার চোখ মধ্যদিনের পাখির মত ডেকে বলছে- তুমি এসো...
.......
.... .... ....
জানিনা তুমি সত্যি আসবে কিনা। যদি আস, তবে তোমাকে বলব, তুমি আরো আস, বার বার আসো আমার হৃদয়ে। তুমি আস আমার জীবনে শয়নে-স্বপনে। যদি নাও আস, তবুও বলব, তুমি আস আমার জীবনে প্রাণদায়ী বায়ুর মত। তুমি আস আমার জীবনের পূর্ণতা দানে। তুমি আস আমার শূণ্য বাথানে।
ইতি,
তোমার রূপমুগ্ধ জনৈক কবি।