আমি ব্লগার হব।
হঠাৎ করেই একদিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। কেনইবা নেব না। হয়ত নতুন কারো সাথে পরিচিত হচ্ছি। হাত বাড়িয়ে দিয়ে- আমি অমুক। একজন ব্লগার। বস্।আর যায় কোথায়! পাশের জন সাথে সাথে- ওয়াউ! আপনি ব্লগার? তা দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনারা লেখনির মাধ্যমে..ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর তখন আমি! ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি অপ্রস্তুতের অস্বস্থি নিয়ে। ইচ্ছা হয় তখনই ছুটে গিয়ে ‘ব্লগার’ হই।
এইতো সেদিন ক্লাশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে এক বন্ধুর মতের বিরোদ্ধে যেইনা মত দিতে গেলাম, এমনি সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে হুমকির সুরে বলে বসল, তুই বেশি জানিস আমার থেকে? আমি একজন ব্লগার!!
এসব হুমকি তাও সহ্য হচ্ছিল। কিন্তু যেদিন দেখলাম আমার প্রেমিকা একজন ব্লগারের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করছে ফেইসবুকে, আর আমার সামনে এসে যুক্তি দিয়ে বলছে- ব্লগাররা কত কিছু জানে! তাদের সাথে কথা বললেও আরাম পাওয়া যায়! সেদিন আর সহ্য করা সম্ভব হলনা। অন্তরটা ব্লগারদের প্রতি বিদ্বেষে জ্বলে উঠল।
ক্ষেপে গিয়ে ব্লগারদের গোষ্টি উদ্ধার করতে শুরু করতেই সে থামিয়ে দিয়ে বলল- এই, ব্লগারদের নিয়ে কোন বাজে কথা সহ্য করব না। প্রয়োজনে তোমার আমার পথ ভিন্ন হতে পারে।
সেদিন বুঝলাম, না, ব্লগার না হলে বুঝি প্রেমটাও বাঁচাতে পারবো না।
তো পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। আমি ব্লগার হব।
কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেইতো হয় না। ব্লগের নিয়ম কানুন, লেখার ধরন ইত্যাদিতো জানতে হবে। তাই ফেইসবুকে ব্লগারদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে শুরু করলাম। ওমা! এখানেও দেখি অপমানের চুড়ান্ত। কেউ এ্যাকসেপ্ট করেননা। মুলার মতো ঝুলিয়ে রেখে দেন। আমিও চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। ফলাফল একমাসের মতো ব্লক খাইলাম। অবশ্য দুই-একজন দয়া বশতঃ ফলোয়ার বানালেন।
দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আমি ব্লগে একাউন্ট খুলতে বসলাম। সামহোয়ার ইন ব্লগ লিখতে দেখে এক বন্ধু আঁতকে উঠলো। বলল, করিস কি? সামু- এতো বাংলাদেশের ব্লগ জগতের গুরু। অন্য একটা দিয়ে শুরু কর।
আমি বললাম, লিখলে এখানেই। দেখনা কি বাজিমাত করি।
তো একাউন্ট খুলতে বসলাম। প্রথম দেখায় বিষয়টা সহজ মনে হলেও ভুল ভাঙ্গতে একটুও সময় লাগেনি। একবার নাম ঠিক হয় তো কাম ঠিক হয়না। কাম ঠিক হয়তো পাসওয়ার্ড ভুল হয়। এভাবে ভুল সংশোধনের খেলা খেলতে লাগলাম। একবার, দুইবার, তিনবার, অসংখ্য বার..হ্যাঁ। শেষ পর্যন্ত আমিই সফল হই। আনন্দে চিৎকার করে বলতে যাব- আমি এখন ব্লগার--এমনি নজরে পড়ল এক কোনায় লেখা আপনি সাত দিন অবযার্ভে থাকবেন। বুকের ভিতরটা শুকিয়ে গেল। কয় কি? অবযার্ভ মানেতো নজরদাড়ি, পরীক্ষা! অথচ কে না জানে, পরীক্ষা মানেই আমার জন্য যম সমতুল্য আতঙ্ক।
আমার কী বোর্ড একেবারেই থেমে গেছে। বিশ্বাস করুন, এখানে এ অবযার্ভ শব্দটা ব্যবহার না করলে আমি ভাল কিছু লিখতে পারতাম। কিন্তু এখন আর সম্ভব না। যে আমি জীবনে কোন পরীক্ষায় শিক্ষকের বিশেষ কৃপা ছাড়া পাশ তো বহু দূর, একটা উত্তরও লিখার যোগ্যতাসম্পন্ন নই সে আমি এবার কোন পদ্ধতিতে পাশ করি? ইস কেন যে এ অবযার্ভ !!!
বিশ্বাস করুন, সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি। সকালের দিকে একটু তন্দ্রামত এল। আর এতেই এসে হানা দিল আমার প্রেমিকা। দেখি কি, এক কুৎসিত দর্শণ যুবকের হাত ধরে হেটে যাচ্ছে ও। যুবকের টিশার্টের পিছনে বড় করে লেখা ‘ব্লগার’।
সাথে সাথে তন্দ্রাভাবও কেটে গেল। ভাবলাম একাউন্ট চালু হোক না হোক, খুলেছিতো। কল দিলাম প্রেমিকাকে। গলায় আনন্দের সুর ফুটিয়ে তুলে বললাম, ওগো আমি এখন ব্লগার !!
আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। অন্তত এ পরীক্ষায় যেন পাশ করতে পারি। আর নয়তো আমার ‘ও’ আর থাকবে না।।