somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাল্লা! একটি স্মৃতি।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাল্লা! একটি নাম। একটি স্মৃতি। শাল্লা আমার জন্মভুমি নয়, কিন্তু তার চেয়ে কম কিসে? এখানেই আমার ক্ষুদ্র জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে। জীবন শব্দের মর্মার্থ এখানেই যে শিখেছি।

সুনামগঞ্জ জেলার অতি ক্ষুদ্র একটি উপজেলা শাল্লা। বিচিত্র রুপের সমাহারে গঠিত এই শাল্লা আজ আমার কাছে অনেক কিছু। এতদিন শাল্লা শব্দটা যেমন মনে হত, আজ আর তেমনটি মনে হয়না। এতদিন মনে হত শাল্লা একঘেয়েমি পরিবেশ, ক্ষুদ্র সংকির্ণ এক ভাবাবেগহীন পল্লী এলাকা। কিন্তু এখন আর তা মনে হয়না। বরং মনে হয় এর চেয়ে সুন্দর জায়গা বুঝি আর কোথাও নেই। বর্ষায় শাল্লার বুকে স্থান পাওয়া অথৈ পানিতে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ কত সুন্দর! গাছে গাছে কদম ফুলের সমাহার এবং তার মিষ্টি মধুর গন্ধ কত সুন্দর! এসবই আমার কাছে এখন স্বর্গের মতো সুন্দর মনে হয়। মনে তীব্র আকাঙ্কা, কেন কিছু দিন আগে এমন সৌন্দর্য অনুভব করতে পারি নি। এখন শেষ সময় এসে কেন এত সুন্দর মনে হয় রুপ রসহীন এই শাল্লাকে?

শেষ সময়? হ্যাঁ! আমি আমার শেষ সময়ের কথাই বলছি। শাল্লা থেকে যখন চলে যেতে হবে, কৃপন শাল্লার বুকে যখন আর আমার জায়গা নেই, তখন এ শেষ সময় নয়তো কি? দীর্ঘদিন লেখাপড়া করেছি আর চেষ্টা করেছি ভাল ফলাফলের জন্য। কারণ ভাল ফলাফল ছাড়া উন্নত মানের কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রায় অসম্ভব। করেছিও তাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে জিপিএ ৫ পেয়ে আমার এবং অন্য সবার আশাকে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এতদিন আমি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করিনি যে, ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি মানে শাল্লা হতে বিদায় হওয়া। আজ বিদায়ের পূর্ব মুহুর্তে আমি বুঝতে পারলাম বিদায় জিনিসটা আসলে কি!
শাল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ আমার কাছে স্মৃতি। আজ মনে পড়ছে সেই আনন্দঘন মুহুর্তগুলি। মনে পড়েÑ হেমন্তের বিকেলে নদীর তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখা; সেখানেই প্রকৃতির সবুজ গালিচায় নামাজ আদায় করা। ক্ষেতের সংকীর্ণ আঁকা বাঁকা আইলে মিলে মিশে হৈ হুল্লোর করা। দখিনা বাতাসে ধানের শীষের সবুজ ঢেউ দেখা। নদীর কোনও বিশেষ স্থানে ঝাঁকে ঝাঁকে বক পাখির এক পাঁ তুলে দাঁড়িয়ে শিকারের দৃশ্য দেখা। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য অবলোকন করা। সবশেষ নদীর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে সাতার কাটার মতো আনন্দময় দৃশ্যগুলো।
আর কি পারব এমন আনন্দ করতে? পারব কি নদীর বুকে ঝাপিয়ে সাতার কাটতে? পারব কি বর্ষার অথৈ পানিতে নৌকা নিয়ে দূরে কোথাও আমরা ক’জন হারিয়ে যেতে? পারব কি আজ অতীতকে সামনে নিয়ে আসতে?
আহ! এনে বড় আশাÑ যদি এভাবে আনন্দ করে চিরদিন কাটানো যেত! যদি বন্ধুদের হারাতে না হত! কিন্তু তা কি সম্ভব? শ্রেষ্ট জীব মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছি তখনতো আর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলা যাবে না। ভবিষ্যত বলেতো একটা কিছু আছে! আর হ্যা, এ ভবিষ্যতের জন্যেই আজ চলে যেতে হবে মায়াবি এ শাল্লা ছেড়ে। যে শাল্লায় আমার মন পড়ে আছে, যে শাল্লায় আমার বন্ধুরা আছে, যে শাল্লায় আমার শত শত স্মৃতি পড়ে আছে, যে শাল্লার বুকে আমার আমার সকল সুখ দুঃখ পড়ে আছে..।।
এতদিন শাল্লার মর্যাদা বুঝিনি। বন্ধুদের মর্যাদা বুঝি নি। শাল্লার সৌন্দর্যে অভিভ’ত হইনি। বন্ধুদের দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাইনি। সুখের সময় হাসিনি, বরং বলেছি এ আর এমন কি? আহ, আফসোস! কেন বুঝলাম না? কেন সবাইকে দুঃখ দিলাম? কেন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম না? কেন আনন্দে হাসলাম না?
আবার যদি পেতাম আমার অতীতকে তবে সব ভ’লের সংশোধন করতাম। সব ভ’লের জন্য ক্ষমা চাইতাম। হয়তোবা এখনও ক্ষমা চাওয়া যায়। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার এখন আর কি দরকার? এখন ক্ষমা চেয়ে বরং বন্ধুদের মানহানি করা, বন্ধুদের হেয় করা, তাদেরকে লজ্জিত করা, শাল্লার গর্বে বাঁধা দেয়া......
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×