আমি একাত্তরের পরবর্তী প্রজন্ম
আমি স্বাধীনতা চাক্ষুষ করিনি
মানুষের রক্তে এ দেশকে রঙ্গিন হতে দেখিনি
তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ছেলেখেলা আমি দেখিনি
তার মানে এই নয়- আামি রক্ত দেখিনি
তার মানে এই নয়- আমি নারীর সতিত্ব লুন্ঠন হতে দেখিনি।
কুরবানির পশুর মতো মানুষের ছটফটানি আমি দেখেছি
সন্তানের লাশ নিয়ে মায়ের আহাজাড়ি প্রতিনিয়তই শুনেছি
আমি দেখেছি সনেহস্পদ পূত্রের কপালে পিতার শেষ অশ্রুসিক্ত চুম্বন
প্রেমিকার কেঁপে কেঁপে ওঠা দেহে বিরহের দীর্ঘশ্বাস
দেখেছি এ বাংলায়, এ স্বাধীন বাংলায়।
আমি আরো দেখেছি স্বাধীনতাকে খাঁচায় বন্দি করে
পুঁথি গন্ধময় নরকতুল্য চিড়িয়াখানায় রেখে দিতে
বিপ্লবের চেষ্টারত মুক্তিকামি মানুষকে ‘বনসাই’র মতো
চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে স্তব্ধ করে দিতে।
আমি প্রতিনিয়তই দেখছি নুংরা রাজনীতির ছোবলে
অকালে ঝরে যেতে তাজা তাজা বাসন্তী প্রাণ
লাশ-মৃত্যু-রক্ত আমার কাছে এখন সহনীয়
অক্সিজেনের সাথে রক্তের গন্ধ নিয়ে আমার ফুসফুস অভ্যস্ত।
একাত্তরে নারীকে লোলোপ শকুনের দল
ছিড়ে খুবলে কিমাকার মাংসপিন্ড বানাতে আমি দেখিনি
তবে আমি দেখেছি রূপসি ভরাট যৌবনা এ বাংলাকে
একদল বিকৃত বিত্তশালী লোকের হাতে ধর্ষিত হতে
তারা আজো লুন্ঠন করছে আমার বাংলা মা কে
তাদের হাতের নিস্পেষণে এখনো কম্পিত মায়ের স্তন
তাদের লালসার কাছে পরাজিত মায়ের নিস্পাপ মুখ
পরাজিত সমগ্র পৃথিবীর স্বর্গীয় পবিত্রতা।
আমি আজ হত্যা-খুন-লুন্ঠন-গুম-ধর্ষণ দেখি
আর ছটফট করি দুর্ঘটনায় পতিত দেহের মতো
ইচ্ছা হয় চিৎকার করে বিদ্রোহের দাবানল ছড়িয়ে দেই
সাদা পৃথিবীটাকে খানখান করে দেই উচ্ছসিত ক্রন্দনে
কিন্তু পারিনা, বোবা যন্ত্রণায় ছটফট করা ছাড়া
আমি আর কিছুই করতে পারি না। কারন
আমিওযে এ রক্তশোষা সমাজের অন্নে পালিত
আমার স্পর্ধা আজরাইলদের ডিঙ্গানোর সাহস রাখে না...
মিথ্যা উল্লস্ফন ছেড়ে দিয়ে দেশমায়ের কাছে এখন একটিই প্রশ্ন-
হে মা, ধর্ষকের কাছে বেশ্যা হয়ে রবে তুমি আর কতদিন !!!