মাঝে মাঝে প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে সকালে বাসা থেকে বের হতে হয়। প্রচন্ড ভীড় ঠেলে বাসে উঠে জানালার কাছে সীট নেয়ার চেষ্টা করি। এরপর কানে হেডফোন লাগিয়ে হয়তো বসে আছি। জানালায় বসে নিত্যদিনের অভাব স্বভাব আর টানাপোড়েনের ঝড় বুকের ভেতর দিয়ে বয়ে যায়। তাকিয়ে থাকি বাইরে ঠিক এইসময় গুলোতে কাকতালীয়ভাবে আমার বাস ধানমন্ডি ৫ এর আশেপাশে জ্যামে আটকা পডে। চোখে পড়ে লাল ড্রেস পরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুল যাচ্ছে। কেউ ট্রাফিক আইল্যান্ড লাফ মেরে, কেউ কেউ দল বেঁধে স্কুলে যায়। বাচ্চাদের দেখলেই মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তার উপর লাল ড্রেসের জামা পড়া বাচ্চাগুলোকে দেখলে মনটা আরো বেশি ভালো হয়ে যায়। মনের আবছা পর্দাটা নিমিষেই সাদা হয়ে যায়।
কারন এইসব লাল ড্রেসপড়া প্রতিটা বাচ্চাই সুবিধাবঞ্চিত। এরা অধিকাংশই আশেপাশের বস্তিতে থাকে। এদের বাবা মারা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করে, রিক্সা চালায়, পার্কে চা বিক্রি করে। আমি এমন একজনকে ছাত্রকে চিনি যে ধানমন্ডির ভিকারুন্নিসা স্কুলের কাছে ফুটপাথে থাকে। যখন ভিকারুন্নিসার সামনে বড়লোকের ছেলেমেয়েদের পাজেরো, মার্সিডিজ, করোলার মিছিল শুরু হয় তখন তার মা তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুল পাঠিয়ে পানের দোকান নিয়ে বসে।
লালবাচ্চারা যে স্কুলে যায় তার নাম 'সুরভি'। সুরভির ব্যাপারে আমার এই লেখায় ডিটেইল দেয়া আছে যার ঢাকাসহ সারাদেশে অনেকগুলো শাখা রয়েছে। এখানে শিক্ষার সাথে এখানে খাবার, জামাকাপড়। তবে একটা কথা বলে নেই আজ থেকে ৩৫ বছর আগে এই স্কুলটার যাত্রা শুরু হয়েছিল সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু নামে একজন মহিলার গহনা বিক্রি করে। এখন তার বড় মেয়ে এই স্কুলটা দেখাশোনা করেন। তিনি সকলের নিকট বিন্দু আপা নামে পরিচিত। এই বিন্দু আপার ছোট বোন ডা. জোবায়দা রহমান। যিনি খালেদা জিয়ার পুত্রবধু। সুরভি বেঁচে থাকুক। সুরভি চিরন্তন হোক।