আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা এই শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে রূপগন্জ এলাকায়। বইতে একটা শব্দ আছে, নদীর এপার ভান্গে ওপার গড়ে এইতো নদীর খেলা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই এই নদীর দুপারে তেমন ভান্গন দেখিনি, তেমন কোন বড় চর পড়তেও দেখিনি। ভরা বন্যাতেও এই নদীতে তেমন বড় ঢেউ উঠেনা।মুরুব্বীদের মতে এই শীতলক্ষ্যা নাকি অন্যসব সব নদীর মা। এই কারনে এই নদীর এমন শীতল ও লক্ষী আচরন। আর এই শীতল আর লক্ষী শব্দ থেকেই এর নাম হয়েছে শীতলক্ষ্যা। আর এই নদীর পানি খুবই স্বচ্ছ আর খুবই পরিষ্কার।
যখন স্কুলে পড়তাম, তখন প্রতিদিন এই নদীতে গোছল করতাম। কলেজ ভার্সিটি বা এখনো সুযোগ পেলেই নদীতে নেমে যাই গোছল করতে। ছোট বেলা থেকেই লক্ষ্য করতাম, বছরের একটা বিশেষ সময়ে(মার্চ-এপ্রিল) নদীর পানি হালকা ঘোলা হয়ে যায়। ২-৩ দিন এরকম ঘোলা থেকে তারপর আবার ঠিক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর লক্ষ্য করলাম এই ঘোলাপানির স্হায়ীত্ব ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত বছরও এই ঘোলা সময়কাল ছিলো ১৫ দিনের মত। তারপর আবার ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। ঢাকা শহরের উত্তরের তুরাগ নদীর দূষিত পানি বালু নদী হয়ে ডেমরা এলাকা দিয়ে এই শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়ে তখন এর কিছু অংশ উত্তর দিকে আসে এবং যখন বৃষ্টিতে অথবা অন্য কোন উপায়ে উজানে পানির প্রবাহ একটু বেড়ে যায় তখন এই পানি দক্ষিন দিকে মেঘনার মোহনায় বিলীন হয়ে যায়।
এবার এই ঘোলাপানির শুরু হয়েছিলো ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ঘোলা পানি আরো ঘোলা হয়ে ঘন কালচে রুপ ধারন করলো। চরম দূর্গন্ধযুক্ত। তুরাগ আর বালু নদীর পানি যেমন কালো, তেমনই কালো। পানির উপর তৈলাক্ত জিনিষের আবরনের ছাপ সুষ্পষ্ট। এই তৈলাক্ত আবরনের কারনে নদীতে এখন কোন ঢেউ নেই বললেই চলে। একটা ছোটখাট পুকুরেও এর চেয়ে বড় ঢেউ দেখতে পাওয়া যায়। অনেক মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখা যায়, এবং জাল দিয়েও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গোছল তো দুরের কথা, পানি গায়ে লাগালেই গা চুলকায় আর ফুলে উঠে।
গতকাল পহেলা বৈশাখের সকালে বাড়িতে গেলাম। বৈশাখের আগে ২/৩ দিন কয়েকদফা বৃষ্টি হওয়ার পর ধারনা করেছিলাম উজানে পানির প্রবাহ বেড়ে এই কালো পানিকে ধুয়ে নিয়ে আমাদের চকচকে পানি উপহার দিবে। কিন্তু কালকেও নদীর পানির রংয়ের কোন তফাৎ দেখতে পেলাম না। প্রায় ৩ মাস যাবৎ নোংরা দূর্গন্দ যুক্ত পানি এই নদীটার উপর চেপে বসে আছে। এরকম ভাবে পানি নোংরা কখনোই হয়নি আর এত লম্বা সময় কখনো নদীর পানি এমন ছিলো না। আমার প্রানের নদীটার এমন অবস্হা হবে কখনো ভাবতে পারিনি। কালকে এই নদী পার হবার সময় একেবারে চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। হাতে ছোট ক্যামেরাটা ছিলো। কয়েকটা ছবি তুললাম ব্লগে পানি অভাবনীয় পানি দূষনের ব্যাপারটা শেয়ার করার জন্য।
এই ছবিগুলোতে নদীর পানি দূষনের ভয়াবহতার ছিটেফোটাও ফুটে উঠেনি। বরং পানিতে তেলের আবরেনর কারনে ছবিতে ক্লাসিক রিফ্লেশন পাওয়া গেছে।
এই অন্যায়ের কি কোন শেষ নেই? এভাবেই সবকিছু সুন্দর শেষ হয়ে যাবে!!!! এভাবে প্রকৃতিকে ধংশ করে দেওয়ার ফল অবশ্যই পেতে হবে।
১> এই প্রথম ছবিটা শুধু পানি দূষনের আগে তোলা। মাঝির পিছনে নদীর পানি দেখুন। টলটলে স্বচ্ছ পানির আরো অনেক ছবি ছিলো, কিন্তু আমার সুকন্যা আমার মোবাইলটা হাতে নিয়েই ছবি ডিলিট করা শুরু করে। তাই, এখন সেগুলা নেই।

২>

৩>

৪>

৫>

৬>

৭>

৮>

১০>

১১>

১২>

১৩>

১৪>

১৫>

১৬>

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:০৫