গুন-গুন করে সে কি যেন একটা গান-ও গাচ্ছে। হিন্দী কোন গান।
জান্নাত লাইনগুলো বুঝতে পারছে না। বুঝতে না পারলেও তার খুবই ভাল লাগছে। একই সাথে কিছুটা কষ্টও লাগছে। জগটা ভরে গেলেই তাকে চলে যেতে হবে। এমন যদি হত যে এরকম একটা মুহূর্তে সময় থেমে যেত তাহলে কতই না ভাল হত!
***
আরিফ এসে সরাসরি জান্নাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জান্নাত, ফুপা তোমাকে যেতে বলছিলেন।’
জান্নাত ব্যস্ত ভঙ্গিতে জগটা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
আরিফ মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে মাত্র এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়েছির, তাতেই পান্থ বলল, ‘কি ব্যাপার, আরিফ? টাসকি খেয়ে গেলে নাকি?’
আরিফ লজ্জিত হল। কিছু বলল না।
‘টাসকি খাওয়ার মতই।... নাও, নাও, টুথ-পাউডার নাও। হাঁটতে হাঁটতে দাঁত মাজার মজাই আলাদা।’
আরিফ কিছুটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। সে ডান হাতের তালু এগিয়ে দিল।
পান্থ হেসে বলল, ‘আরে মিয়া, ডান হাতে পাউডার নিলে মাজবা কোন হাত দিয়া?’
আরিফ দ্রুত সরিয়ে বাম হাত দিল।
পান্থ টুথ-পাউডার ঢালতে ঢালতে আরিফের দিকে তাকাল আর রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল।
আরিফ বুঝতে পারল না, এখানে হাসির কি আছে!
***
জান্নাত এসে তার বাবার সামনে দাঁড়াল।
শওকত সাহেব নারিকেল চিড়া চিবোতে চিবোতে বললেন, ‘শাহানা কই?’
‘ঘরে। আমাকে বলছো কেন?’
‘এমনি বলছি। বস্।’
‘বসব না।’
‘তোর আপু সারাদিন ঘরে বসে বসে কি করে বলতে পারিস?’
‘কিছু করে না।’
‘কিছু করা না মানে কি?’
‘কিছু করে না মানে কিছু করে না।’ জান্নাত কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল।
শওকত সাহেব সিরিয়াস গলায় বললেন, 'তোর আপুর কি কোন সমস্যা... বা সেরকম তিছু... তুই কিছু টের পেয়েছিস?’
‘সমস্যা বলতে মাথাব্যথা। প্রায়ই নাকি মাথাব্যথা করে।’
‘মাথাব্যথা সবারই করে। যার মাথা আছে, তার মাথাব্যথাও আছে। সেটা কোন সমস্যা না। আমি ঐ সমস্যার কথা বলছি না।’
‘তাহলে কোন সমস্যার কথা বলছো?’
‘বেড়াতে এসে মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে কেন? সমস্যা কি? সেটাই জানতে চাচ্ছি।’
‘তুমি সরাসরি আপুকে জিজ্ঞেস করো না কেন?’
‘তুই একটু আগে তোর আপুকে জিজ্ঞেস করে দেখ্।’
‘তোর আপু-তোর আপু করছো কেন? সে তো তোমার মেয়ে। তাই না?’
‘শাহানাকে একটু বলে দেখ্। তুই হাসি-খুশি থাকিস্, তেখতে ভাল লাগে। ও কেমন মন খারাপ করে থাকে!’
‘ঠিক আছে, বলে দেখব।’
‘নারিকেল চিড়া খাবি? টেস্ট আছে!’
‘তোমার নারিকেল-চিড়া তুমিই খাও।’
***
মাথা-ব্যথাটা আবার শুরু হয়েছে। কপালের মধ্যে দপ-দপ করছে। মাথার ভেতরটা গুলিয়ে আসছে।
শাহানা তার মধ্যেই একটা উপন্যাস পড়ার চেষ্টা করছে। ভেতরে ঢুকে যেতে পারলে আর ব্যথাটা মনে থাকবে না। এই ভেতরে ঢোকার কাজটাই কঠিন। মোটেও মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। মনোযোগ ছাড়া ছাড়া-ছাড়া কবিতার লাইন পড়া যায়, উপন্যাস পড়া যায় না। সে বিরক্ত হয়ে বইটা রেখে দিল।
এ সময় জান্নাত এসে বলল, ‘আপু, কি করিস?’ বলেই সে মাথার কাছে এসে বসল। তার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ বিরক্ত করবে।
শাহানা বিরক্ত গলায় বলল, ‘কিছু না।’
‘সারাদিন তুই ঘরে বসে থাকিস কেন?’
‘আমার ইচ্ছা।’
‘আপু, তোর কি হয়েছে বল্ তো?’
‘কিছু হয় নি। তুই যা তো এখান থেকে। বিরক্ত করিস না।’
‘উঁহু, নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে।’
শাহানা কিছু বলল না। প্রশ্নের উত্তর দিতেও তার প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে।’
‘ঢাকায় তো তুই এমন করিস না।’
‘দেশের বাড়িতে এসে ভাল লাগছে না।’
‘কেন ভাল লাগছে না?’
শাহানা জবাব দিল না।
‘তুই এমন মন খারাপ করে থাকিস, আমাদের কিন্তু খারাপ লাগে! তোর কি হয়েছে বল্ তো আপু! আমি তো আমার সব কথা তোকে বলি। তোর কোন সমস্যা থাকলে অ্যাটলিস্ট আমাকে তো বল্।’
শাহানা এবারও কিছু বলল না।
‘খুব ব্যথা করছে? একটু টিপে দেব?’
‘দে।’
জান্নাত যত্ন করে শাহানার কপাল টিপে দিতে লাগল। একসময় শাহানা বলল, ‘আমি এখন থেকে হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করব। আর মন খারাপ করে থাকব না।’
জান্নাত লক্ষ্য করল, শাহানার দেহটা একটু-একটু কাঁপছে। আর চোখ দিয়ে খুব ধীরে জলের ধারা নামছে।
‘আপু, তুই কাঁদছিস?’
শাহানা কাঁপা-কাঁপা গলায় বলল, ‘কই! না তো!’
জান্নাত বলল, ‘কাঁদে না, আপু।’
শাহানা জান্নাতকে ধরে কেঁদে উঠল।
***
পান্থ ব্যস্ত ভঙ্গিতে একটা লিস্ট করছে। ভুয়াপুর থেকে কি কি আনতে হবে তার লিস্ট। এমনিতে সারাক্ষণই মনে হয়, এটা আনতে হবে ওটা আনতে হবে, কিন্তু কোন এক আশ্চর্য কারণে লিস্ট করার সময় কোন সেসব মাথায় আসে না। দারুণ মুসিবত!
লিস্টে যে কয়েকটা জিনিস স্থান পেয়েছে তার মধ্যে আছে.............
পর্ব ১-৬ এখানে ক্রম অনুসারে
(চলবে..................................................................)