মুজতবা অনেকটা ধমকের সুরে বললেন, ‘দিবা না মানে? দাও। চিতল মাছ তো খাওয়ার জন্যই রান্না হয়েছে। পাতিল পাতিল সাজিয়ে রাখার জন্য তো আর রান্না হয় নি।’
‘সবাই তো আর ধরো সব মাছ খেতে পারে না, সেইজন্য বললাম।’
‘চিতল মাছের মধ্যে তো আমি না খেতে পারার মত কিছু দেখি না।’
পান্থ মাঝখান থেকে বলল, ‘আরিফের আবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন বাছ-বিচার নেই তো?’
আরিফ বলল, ‘না, আমি সব আইটেমই খেতে পারি।’
পান্থ খুশি-খুশি গলায় বলল, ‘দ্যাটস গুড। সবকিছুই খেতে হবে। একেকটা আইটেমে মনে করো যে তোমার একে ধরনের নিউট্রিশন। শরীরের জন্য সব ধরনের নিউট্রিশনই প্রয়োজন। কথা ঠিক বললাম কিনা?
‘হুঁ।’
‘আমিও তোমার মতই। সব আইটেমই খেতে পারি। খাবার হলেই হল। সব খাবার খাওয়ারই প্রয়োজন আছে। মাইর ছাড়া। মাইর খাওয়ার প্রয়োজন নাই।’
ছোটকাকী ইতিমধ্যে আরিফের প্লেটে চিতল মাছের একটা টুকরো তুলে দিয়েছেন। এবার পান্থর প্লেটে দেওয়ার জন্য চামচ উঁচু করলেন।
পান্থ সাথে সাথে বাধা দিয়ে বলল, ‘এক মিনিট! এক মিনিট! চিতল মাছ তো এখন খেতে পারব না। আজকে গরম-গরম লাগছে। চিতল মাছে আবার অনেক তেল।'
ছোটকাকী হেসে বললেন, ‘তুমি না সব খাও?’
‘সব খাই ঠিকই। কিন্তু আজকে একটু...’
মুজতবা কড়া গলা করে বললেন, ‘একটু আগে বললে সব খাবার প্রয়োজন আছে, মাইর খাবারপ্রয়োজন নাই। এখন তো দেখি তোমার মাইরও খাবার প্রয়োজন আছে। ভালোয় ভালোয় মাছটা খেয়ে নাও। রাজ চিতল বলে কথা... ও, চিতল মাছের ঘটনা তো আরিফকে শোনানো হয় নি।'
আরিফ এতক্ষণ চুপচাপ খাচ্ছিল। এখন বলল, ‘কি ঘটনা?’
মুজতবা টান দিলেন। ‘বললে বিশ্বাস করবা না, আরিফ, ইয়া বড় এক চিতল। এইখানে মাথা রাখলে লেজ যায় সেই পর্যন্ত। দেড় মানুষ সমান লম্বা...’
ছোটকাকী বাধা দিয়ে বললেন, ‘অত লম্বা কিন্তু না।’
মুজতবা কড়া গলায় ধমক লাগালেন, ‘তুমি চুপ থাকো। কথা আমি বলছি। কথার মাঝে কথা বলবা না। মেয়েমানুষের এই এক স্বভাব। অতিরিক্ত প্যাঁচাল।... কোথায় ছিলাম?’
‘দেড় মানুষ সমান লম্বা- এই জায়গায় ছিলেন।’ আরিফ ধরিয়ে দিল।
‘ইয়েস, দেড় মানুষ সমান লম্বা। দেড় মানুষ যদি নাও হয়, অন্তত এক মানুষ তো হবেই। কি তার দেহ!! ওরেব্বাবা।’
পান্থ চিতল মাছের টুকরোটা নিয়ে যুঝছিলো। এখন বলঠ, ‘বুঝলে আরিফ, গিগানটিক সাইজের মাছ।’
‘কথা আমি বলছি। যাহোক মাছ তো ওজন করা দরকার, বাটখারা আনা হল...’
পান্থ বাধা দিয়ে বলল, ‘তুমি যত সহজ করে বলছো, ঘটনা, মামা, তত সহজ না। চেয়ারম্যান সাহেব নিজে বাটখারা আনার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন। তারা পর্যন্ত জোগাড় করতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত আমি, এই আমি...’
‘পান্থ, চুপ থাকো। কথার মাঝে কথা বলবা না। তারপর আরিফ, যা বলীছলাম, চিতল মাছ পাল্লায় তোলা হল। পাল্লার অবস্থা নড়ো-বড়ো। খসে পড়ে যায় টাইপের অবস্থা...’
পান্থ বাধা দিয়ে বলল, ‘অবজেকশন, এখানে একটা মিসটেক করলে। আমি নিজে বাটখারা এনেছি। শক্ত দেখেই এনেছি। এই যে তোমার এত ওজন, তোমাকেসুদ্ধ ওজন করলেও পাল্লার কিছু হত না।’
মো: মুজতবা বিরক্ত হয়ে কথা বলা বন্ধ করলেন।
আরিফ জানতে চাইল, ‘কত ওজন হয়েছিল?’
‘তেত্রিশ কেজি।’ মুজতবা শুকনো কণ্ঠে বললেন।
ছোটকাকী বললেন, ‘আরিফ, আর কিছু লাগবে?’
আরিফ তাড়াতাড়ি করে বলল, ‘না, না। আমরা নিয়ে নিতে পারব। আপনি খেতে বসুন।’
চিতল মাছ যে আরিফের খুব ভাল লাগে তা না। অন্যান্য আইটেমও আহামরি কিছু না। তারা গল্প করতে করতে খাচ্ছে।
আরিফের কেন যেন খুবই ভাল লাগছে।
***
শওকত সাহেব উস-খুস করেছিলেন। তার এই উস-খুসের কারণ সিগারেট। রাতে খাওয়ার পর সিগারেটা না টেনে তিনি থাকতে পারেন না।
তার স্ত্রী জাহানারা বেগম সিগারেটের ধোঁয়া একবারেই সহ্য করতে পারে না। হাতের কাছে কোন সিগারেটের প্যাকেট পেলেই তিনি সেটা ফেলে দেন।
এবারও নিশ্চয়ই সেরকম হয়েছে। এই পরশুদিনও তিনি একটা বেনসন এন্ড হেজেসের প্যাকেট হাটখোলার কাছে একটা দোকান থেকে কিনেছিলেন। মাত্র চারটা সিগারেট খাওয়া হয়েছে।
শওকত সাহেব ঠিক করলেন তার স্ত্রীকে ডেকে কড়া করে একটা ধমক দেবেন। আস্ত সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দেবে, এইটা কেমন কথা!
তিনি খক-খক করে গলা পরিষ্কার করে ডাকলেন, ‘জান্নাত, এই জান্নাত।’
পর্ব ১,২,৩ এখানে ক্রম অনুসারে
(চলবে....................................)