সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে আমার যতোটা না সাহিত্যিক হিসেবে ভালোলাগে, তার চেয়ে বেশি ভালোলাগে তার পরিব্রাজক স্বভাবের জন্য। তাকে ঠিক পরিব্রাজক বলা যাবে কি না অতোটা আমি জানিনা।
সুনীলের খুব বেশি বই আমি পড়িনি। তার প্রথম বই “একা এবং কয়েকজন” পড়ে কবিতায় বুদ হয়ে থেকেছিলাম অনেকক্ষণ। তারপর যেখানেই সুনীলের বই পেয়েছি, পড়ে ফেলেছি দ্রুতই। সুনীলের প্রতি আমি সবচে বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি তার “ছবির দেশে কবিতার দেশে” বইখানি পড়ে। কেনো জানিনা তার এই বইটি আমার অসম্ভব ভালোলাগে, তার অন্য অনেক গল্প উপন্যাসের চেয়েও বেশি। এই বইটি পড়েই জানতে পারি, আমাদের নীললোহিত সারাবিশ্ব চষে বেড়াতে শুধু ভালোই বাসেন না, বেড়িয়েছেনও যথাসাধ্য।
ভ্রমণকাহিনী পড়তে আমি খুব ভালোবাসি। লেখক দেশ বিদেশের পাহাড়-জঙ্গল, শহর-গ্রামের সৌন্দর্য-কদর্যের বিবরণ দেন, আর আমি তার লেখা বইটিতে মুখ গুজে লেখকের সাথে ঘুরে বেরাই সেইসব দেশে, শহরে, জঙ্গলে। সাধ থাকলেও সাধ্য যে নেই সত্যিকারের ভ্রমণের। তাই বই পড়েই ক্ষুধা মিটাই।
তো যাইহোক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেড়াতে ভালোবাসেন আর সেই বেড়ানোর অভিজ্ঞতাকে একান্তই নিজের সম্পদ না করে বইয়ের পাতায় তুলে এনে তা পাঠকের সম্পদে রুপান্তর করেন। আমি এযাবৎ কাল যতো লেখকের ভ্রমণকাহিনী পড়েছি, সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেছেন মনে হয় সুনীল (অন্যকেউও হতে পারে, আমি যতটুকু জানি আর কি)।
সুনীল তার বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তার বই “পায়ের তলায় সর্ষে, প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে।” সবচেয়ে বেশিবার ভ্রমণ করেছিলেন ফরাসী দেশে, সুনীলের ফরাসী প্রেম নিয়ে অনেক বই আছে, অনেক গল্প-কাহিনী আছে।
এসব বই, গল্প-কাহিনী পড়ে পড়ে আমারও সুনীল হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, কোনো এক মেঘেঢাকা সন্ধ্যের আকাশকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ি, দেশে দেশে ঘুরেবেড়াই। সুনীলের মতো কবিতা পড়ি, কোনো এক পাহাড়ী শহরের পাদদেশে কবিতা সম্মেলনে আমিও শরিক হই।
আজকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন প্রিয় পরিব্রাজক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪