বছর খানেক আগের কথা। এই দেশের মোটামুটি একজন সাহিত্যিকের সাথে পরিচয় হইলো আমার। বাজারে তার দশ বারোটা উপন্যাস আছে, কয়েকটা গল্পের বই, দুতিনটা কবিতার বইও বের হইছে। তো উনি আমারে বললেন, গালিব তুমি তো লেখালেখি করো, আমি একটা সাহিত্য পত্রিকা বাইর করবো, তুমি এখানে নিয়মিতভাবে লিখতে থাকো। হাত পাঁকা করো সাহিত্যের সাথে থাইকা।
আমি তো সেই খুশি হইলাম, সাহিত্য পত্রিকা থেইকা লেখার অফার, আমার জন্য বিরাট কিছু।
তো, উনি পত্রিকা বাইর করলেন। প্রথম সংখ্যায় "ঘোড়ার ডিম" নামে আমার একটা গল্প বাইর হইলো। তারপরের সংখ্যায়ই আমাকে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি বানায়া দিলেন তিনি। আমি প্রতি সংখ্যাতেই লিখতে থাকলাম, গল্প লিখি, কবিতা লিখি। সম্পাদক সাহেব আমারে উৎসাহ দেন, লেখা তোমার দিন দিন ভালো হইতাছে, লিখতে থাকো বেশি বেশি।
উনার উৎসাহে আমার লেখায় গতি বাড়ে, খুশি হই আমি।
দিন যায়, পত্রিকাটা জনপ্রিয় হইতে থাকে, দেশের প্রতিথযশা লেখকেরা এই পত্রিকায় লিখতে থাকেন, বড় বড় লেখকদের লেখা ছাপা হয়, সাক্ষাৎকার বাইর হয়। তারমাঝেই আমার নামে কোন লেখাও বের হয়। আমি খুশি হই।
তারপর, সময় আসে। সম্পাদক সাহেব আমারে বলেন, গালিব, এখন থেকে দুইমাস পরে পরে তোমার লেখা ছাপা হইবো, প্রতিমাসে না।
- কেনো?
- বড় লেখকেরা লিখতেছেন পত্রিকায়। তাদের জন্য স্পেস ছেড়ে দিতে হইবো।
- কিন্তু ভাই, আমরা নতুন, আমাদের যদি সুযোগ বেশি দেন তাহলে আমরাও একদিন বড় হবো।
- তোমার নামে তো পত্রিকার কাটতি হইবো না। একজন বড়, পরিচিত লেখকের লেখা পত্রিকায় থাকলে পত্রিকার কাটতি বাড়ে। তাই, এখন থেকে দুই তিন মাস পরপর তোমার লেখা ছাপা হইবো।
বুঝলাম, পত্রিকার প্রতিষ্ঠায় আমার মতো ছোট মানুষদের লেখা উনার প্রয়োজন ছিলো। আমাদের মতো ছোট লেখকদের লেখা নিয়া পত্রিকা প্রতিষ্ঠা কইরা যখন পত্রিকাটা জনপ্রিয় হইলো তখন আর আমারে উনার প্রয়োজন নাই। কষ্ট পাইলাম।
সেই পত্রিকা এখন অনেক বড় হইছে। দেশের নামকরা লেখকেরা তাতে লিখে থাকে। অনেক নাম তার। কিন্তু আমি আর তাতে লিখিনা। সম্পাদক সাহেব সেদিন আবার লেখা চাইলো, কিন্তু দিইনাই আমি লেখা।
এখন আমি ভাবি, এই পত্রিকাটার প্রতিষ্ঠায় আমার হাত ছিলো। এটা ভেবেই সান্তনা নেই।
এখনকার সাহিত্য পত্রিকাগুলার আচরণ এমন যে, অপেক্ষাকৃত ছোটো লেখকদের, যারা লিখতে চায় তাদের সুযোগ না দিয়ে বড় লেখকদের জন্যই সব স্পেস রাখা হচ্ছে। যার জন্য তরুণেরা বড় হইতে পারেনা। এই সংস্কৃতি থেকে বের হওন দরকার, না হইলে সাহিত্য বড় হইব না।
.
© গালিব আফসারী।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৭:৩৫