- "বাবুসোনা, ঘুমুবে কখন?" নীরা খুব আস্তে করে বললো। নীরার শীতল সুন্দর কণ্ঠে নিশ্বাসের গরম বাতাসও যেন ফোনের এই প্রান্ত থেকে আমার কানে এসে সুরসুরি দিয়ে গেলো। আমি বললাম,
- হ্যা গো, ঘুমুবো তো। কিন্তু আরো কিছুক্ষণ যে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব....
- ইশ, আর কথা বলতে হবে না। জানো কত রাত হয়েছে? সাড়ে তিনটা বাজে এখন, কাল সকালে আবার তোমার ক্লাস আছে। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
-উহু, আরেকটু কথা বলো না পাখি।
-আর একটুও না। এখন না ঘুমুলে তুমি আবার কালকে ক্লাস মিস করবে, আমারতো আর ক্লাস নেই কাল। যাও সোনা, ঘুমোও তো।
-আচ্ছা, ঘুমুতে পারি ,যদি তুমি...
-যদি কি?
-যদি তুমি একটা পাপ্পি দাও....
-ইশ্ রে, শখ কতো, যদি পাপ্পি দাও.. কোন পাপ্পিটাপ্পি হবেনা, তুমি ঘুমোও।
-তুমি পাপ্পি না দিলে সারারাত আজ একটুও ঘুমুবোনা, কালকে ক্লাসেও যাবোনা। বললাম।
-না গেলা, তো আমার কি ?
-আচ্ছা, তাই তো? মনে থাকে যেন___
এই বলে রাগ করে ফোন কেটে দিলাম। ওদিকে নীরা ভাবতে পারেনি এভাবে আমি ফোন রেখে দিবো। বেচারী বারবার ফোন করেই যাচ্ছে। করুক, এতো দ্রুত ফোন উঠাবোনা। কমপক্ষে ১০ বার ফোন করবে, তারপর পিক করবো, ভেবেছে কি।
-হ্যালো...
-এতো রাগ কই পাও সোনা? এমন হুট করে ফোন রেখে দাও যে। আচ্ছা সরি। এখন ঘুমোও। অনেক রাত হয়েছে..
-আগে আমার পাপ্পি...
-তুমি যে কি জ্বালাও না আমাকে। ওকে ঠিকাছে, এই নাও দিলাম, উম্_________
মাত্র একসপ্তাহ আগে নীরার সাথে আমার পরিচয়। আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে ও। আমার জুনিয়র।
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার, বিকেলবেলা। বাসার ছাদের ছায়ায় বসে আছি। হঠাৎ একটা মেসেজ এলো, "ভাইয়া, কেমন আছেন?"
নীরা প্রথম কয়েকঘন্টা আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো। নীরার সাথে আগেই একটু পরিচয় ছিলো, ক্যাম্পাসে চলতে ফিরতে হঠাৎ দেখা হয়ে যেতো। দূর থেকে তাকিয়ে থাকতাম। নীরা ও আমাকে লক্ষ্য করতো। একদিন দুদিন তিনদিন, এভাবে দূর থেকে চোখাচুখি করতেই সময় চলে গেলো। তারপর, যা ভাবিইনি, তাই হলো। ও আমাকে ফেসবুকে নক করলো। আমরা কথা বলতে শুরু করলাম। খুব দ্রুতোই বুঝতে চাইলাম একে অপরের মন। মনদুটো কেনো জানি হঠাৎ করেই দুজনার খুব কাছে এসে গেলো। আমি ওকে ভাইয়া ডাকতে মানা করলাম, আপনি থেকে নীরা তুমিতে নেমে এলো। এতো অল্প সময়েই ওকে আমার অতীত বলে দিলাম, বললাম- আমার আগের কিছু গল্প আছে, ভালোবাসতাম অন্য একজনকে। কিন্তু ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, অবশ্য ধোকা ও দেয়নি, নিরুপায় হয়েই। তারপর এইভাবে একা কেটে যাচ্ছিলো সময়। এখন তো আর একলা চলার দিন শেষ নীরা, তুমি যে পাশে এসেছো। তোমার হাত ধরে জোছনা জ্বলা জোনাকির লক্ষ কোটি রাতগুলো পার করে দিবো আমরা, তারপর আমাদের পড়ালেখা শেষ হবে, আমি ছোট্ট একটা চাকরী নেবো। শহরের এক কোণে ছায়াময় শীতল সমীরের মাঝে আমাদের একটা বাড়ি থাকবে, তারপর আমাদের ছেলেমেয়েরা...
এভাবেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম নীরাকে নিয়ে। নীরা আমাকে ভালোবাসার কথা শুনাতো, আমাকে সাহস দিতো। বলতো, তোমার শক্তিকে কখনোই অবিশ্বাস করবে না, আমি জানি তুমি পারবে, অনেক বড় হবে তুমি।
অবশ্য বড় হওয়ার স্বপ্ন নীরারও ছিলো, কিন্তু ওর আর আমার স্বপ্ন তখন জোড় বেঁধেছে।
নীরা বলতো, আচ্ছা সোনা, এই এত অল্প সময়ে তুমি আমাকে এমন ভালোবাসলে কেমন করে?
-ভালোবাসতে কি বছর বছর সময় লাগে, বলো? কারো প্রেমে পড়ার জন্য সময় হিসেব করতে হয়না, মাত্র মুহূর্তেই কাউকে ভালোলাগতে পারে, ভালোবাসা হয়ে যায় এক সেকেন্ডেই।
-ওহ, তাই বুঝি। আচ্ছা, এত দ্রুত তোমার কাছাকাছি এসেছি, দ্রুতই আবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো তুমি?
-নীরা, এমন কথা কখনো বলবেনা, প্লিজ। কলিজায় এসে আঘাত করে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তোমাকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারবোনা। আমার ভালোবাসা স্বস্তা কিছু না নীরা। শুধু তুমি আমার পাশে থেকো, দেখবে পৃথিবীর সবচে আকাঙ্ক্ষিত সুখগুলো আমি তোমাকে এনে দেবো।
রাতকে রাত, দিনকে দিন, নীরার সাথে ফোনে কথা বলতাম। ভার্সিটিতে গেলে দেখা করতাম। তারপর নির্জন এক যায়গা দেখে বসে যেতাম। কত কথাই না জানতো মেয়েটা, সারাক্ষণ কথা বলতো। আমি অবাক হয়ে শুনতাম, এত সুন্দর মিষ্টি কণ্ঠ, কোকিলের সুর বেজে ওঠে প্রতিটি কথায়।
আজ দুদিন হয়ে গেলো। যে নাম্বারে কথা বলতাম, নীরার সেই ফোন নাম্বারটা অফ দেখাচ্ছে। ফেসবুকে মেসেজ করতেছি, কিন্তু নীরা সীন করছেনা। কি হলো ওর? অসুখ করেনি তো? সেরকম কিছু হলে ফোন অফ রাখবে কেনো? একবার একটা মেসেজও তো করতে পারে, ওর কি কোন বিপদ হয়েছে? নাহ, কিছুই আর ভাবতে পারছি না আমি। নীরাকে ছাড়া আমার সময়গুলো দমবন্ধ করে মুষড়ে পরে আছে। আমি কি করবো, রাতে ঘুম হচ্ছেনা, ভার্সিটিতে ক্লাস করতে পারছিনা। শুধু নীরার কথা ভাবছি। কি হলো নীরার? সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, নীরার তুমি কোন বিপদ দিও না।
ওর বান্ধবীদের কাছে খোজ নিলাম। নীরা এ দুইদিন ক্যাম্পাসেও আসেনি। কেউ কিছুই জানেনা ওর সম্পর্কে।
তারপর, তৃতীয় দিনে। আমার ফেসবুকে একটা মেসেজ এলো। "রিহান, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। তুমি খুব ভালো একজন ছেলে, এই কয়েকটা দিনেই অনেক জেনেছি তোমাকে। কিন্তু এই পরিচয়টুকু সামনে বাড়াতে পারছিনা। আমাকে ভুলে যেও। আমাকে আর ভেবোনা, ধরে নিও, তোমার নীরা পৃথিবীতে আর নেই। কোনোকিছু না বলেই হঠাৎ আমি এরকম কেন করছি, জিজ্ঞেস করোনা, আর আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করিওনা প্লিজ, যদি আমার ভালো চাও। তুমি আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করো। ভালো থেকো। বাই।"
মেসেজটা পড়ার পর থেকে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছি। বাতাস থেমে গেছে, চারদিকে কোন শব্দ নেই, মাথার ওপরে আকাশ নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই, আমি বলতেই কিছু নেই। মনে হচ্ছে সব কিছু পৃথিবীতে আমার শত্রু হয়ে গেছে। কিছুই সহ্য হয়না এখন আর।
তারপর, কেটে যাচ্ছে সময়। বেঁচে আছি, যেভাবেই হোক। নীরা কেন এমন করলো এখনও জানতে পারিনি। শুনেছি, আজকাল নীরা ভালোই আছে। এখন ও ক্যাম্পাসেও আসে। ভাগ্য তবুও আমা
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫১