বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কালজয়ী "বিদ্রোহী" কবিতাটি যখন প্রকাশিত হলো, তখন সেই সময়কার আলেম সমাজ প্রচন্ডরকম ক্ষেপে গেলেন!
কারনটা ছিলো, এই কবিতার একদম শেষের দিকের একটি লাইন! এখানে কবি বলেছেন "আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!",
অনেক আলেমগন এটা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন এটা বলে যে ওর এতো বড় সাহস! ও ভগবানের বুকে পদ চিহ্ন একে দিতে চায়!
বিচার গেলো তৎকালীন মোড়লের কাছে। মোড়ল সবাইকে ডাকলেন, সাথে নজরুলকেও। সবার সামনে মোড়ল সাহেব নজরুল কে বললেন, "নজরুল, গাও, একটা গান আগে গাও তো শুনি"!
উপস্থিত সবাই এটার প্রতিবাদ করলো, বিশেষ করে ইসলামিক স্কলারগন! উনারা বললেন, আমরা কি এখানে গান বাজনা করতে এসেছি যে গান শুনবো?
সব প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নজরুল একটি নাতে রসুল তাৎক্ষনাত রচনা করে নিজ গলায় গাইতে শুরু করলেন,
"তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে,
মধু পূর্নিমারই সেথা চাঁদ দোলে.."
মনোমুগ্ধকর নাতটি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। সবার রাগ প্রশমিত হলো। পরে ঠান্ডা মাথায় নজরুল তার কবিতার সারমর্ম বোঝালেন। তখন তিনি আলেমদের প্রশ্ন করেছিলেন খোদার কি আকার আছে? তারা বলেছিলেন না...! তিনি তখন বলেছিলেন, নিরাকার খোদার তো বুক থাকার কথা নয়, তাহলে যে খোদার বুকই নেই সে খোদার বক্ষে পদচিহ্ন কি করে আকা সম্ভব! উপস্থিত সবাই তখন নজরুলের সাথে একমত পোষণ করেন এবং নজরুল বলেন, এই ভগবান বলতে তিরোষ্কার করে স্বৈরাচারী বৃটিশদের বুঝানো হয়েছে। আর তাছাড়া মুসলমানরা তো তাদের রব কে ভগবান বলে ডাকেন না, কাজেই, এটাতো উনাদের প্রতিবাদের কারন হবার কথা নয়!
আজকে এই অসাম্প্রদায়িক, সাম্য, স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার কবি, বিদ্রোহীর জন্ম বার্ষিকি।
আজীবন দুঃখ আর অবহেলায় কেটে গেছে কবির জীবন। কবি ভালোবাসা নাও, ওপারে সুখে থাকো কবি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬