∥০১∥
আজ বিকালে শহিদ মিনারের রাস্তাটা ধরে টিএসসি অভিমুখে হেটে যাচ্ছিলাম, একটা উৎসবে যোগ দিতে। সাথে ছাত্রদের বিশাল মহড়া, প্রায় শ'দুয়েক ছাত্র একসাথে হাটতেছি। এতগুলো মানুষ একসাথে চললে রাস্তা এমনিতেই কেঁপে ওঠে, তার ওপর জোরগলায় শ্লোগান ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা প্রায় বন্ধ, আমাদের মহড়ার এক পাশ দিয়ে একটু খালি ছিলো, সেখান দিয়ে রিক্সা/গাড়ি ধীরেধীরে পার হওয়ার চেষ্টা করতে থাকলো।
আমাদের এই দুশোজনের যে নেতা তিনি বলে দিয়েছেন রাস্তার একপাশ ফাঁকা রেখে চলতে, যাতে গাড়িঘোড়া চলতে পারে।
শ্লোগানে মহড়া এগিয়ে যাচ্ছে, ছেলেপুলে প্রায় পুরো রাস্তা দখল করে হাটতেছে। এমন অবস্থায় পাশ দিয়ে একটা রিক্সা পার হওয়ার চেষ্টা করতেছিলো, রিক্সায় এক রোগী বসা। রিক্সাওয়ালা মামা পাশের ছেলেদের সাইড দিতে বললো, ছেলেরা সাইড দিচ্ছে। এমন অবস্থায় রিক্সার সাথে একটা ছেলের ধাক্কা লেগে গেলো, সামান্যই ব্যপার। রিক্সাওয়ালা মামাও বয়স্ক। ছেলেটা উল্টো ঘুরে রিক্সাওয়ালা মামাকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো, গালাগালি করলো, কেনো মিছিল চলা অবস্থায় রিক্সা এগিয়ে নিলো।
মামা কিছুই বললো না, অসহায় একটা চাহনি দিয়ে রিক্সা পিছিয়ে নিলো। আমি চোখ তুলে ছেলেটাকে দেখলাম, আমার মতোই বয়স!
∥০২∥
আমাদের মহড়া এগিয়ে যাচ্ছে। টিএসসির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি। সমবেত শ্লোগানে দৃষ্টি উঁচু করে সামনে এগোচ্ছি। হঠাৎ দেখি শ্লোগানরত একটা ছেলে নীচু হয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে একটা কলাগাছ টেনে বাইরে ফেলে দিলো। কলাগাছ বললে ভুল হবে, কলাগাছের চারা। রাস্তার মাঝখানে পড়ে ছিলো, গাড়ির চাকার নীচে পরে থেঁতলে গেছে। এ অবস্থায় গাছটা রাস্তার মাঝে থাকলে অনেক বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিলো। এক্সিডেন্ট হতে পারতো, চাকার নীচে পড়ে গাড়ি পিছলে যেতে পারতো।
আমাদের এতোগুলো ছেলের মাঝে ঐ একটা ছেলেই রাস্তার মাঝখান থেকে তুচ্ছ একটা কলাগাছ দুইহাতে টেনে টেনে রাস্তার বাইরে ফেলে দিয়ে আমাদের নিরাপদ করলো। জঙল সাফ করে রাস্তাটাও পরিষ্কার করলো।
আমি চোখ তুলে ভালো করে ছেলেটাকে দেখে নিলাম, আমার মতোই বয়স!
মিছিল টিএসসির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেছে। মাথার ভেতর আমার ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে, ওরা দুটো ছেলে, আমার মতোই বয়স। দুজন দুটো বিপরীত কাজ করলো, আমি নির্বিকার চেয়ে দেখলাম। ওরা তো আমারই সমবয়সী, অথচ দুজনের মাঝে কত পার্থক্য।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:৪২