আজকের দিনটা অতিক্রান্ত হলেই খুব সম্ভবত আগামীকালই মুসলিমদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এটার ব্যাপ্তি ও প্রভাব বহুদূর বিস্তৃত। পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বড় নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মার প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা ও মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ-উৎসবে একাকার হয়ে যায়।
ঈদে করণীয়
ফজরের নামাজ আদায় করাঃ ঈদ এর দিনের প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের ফজরের নামাজ আদায় করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ঈদ এর নামাজ ওয়াজিব কিন্তু ফজরের নামাজ ফরজ।
ঈদের দিন গোসল করাঃ ঈদ এর নামাজ আদায় করার আগে গোসল করতে হবে। ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। শীতের দিনের ঈদ গুলোতে এই সকালের গোসল নিয়ে অনেক মজার মজার স্মৃতি!
ঈদগাহে যাবার পূর্বে কিছু খাওয়া ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।
নতুন বা পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করাঃ সম্ভব হলে নতুন আর সম্ভব না হলে সবথেকে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা আর সুগন্ধি ব্যবহার করা।
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথ দিয়ে ফেরা। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।’
তাকবীর বলাঃ তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।
সাদাকাতুল ফিতর আদায় করাঃ সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন।
ঈদের সালাত আদায় করাঃ ঈদের নামাজ মসজিদে না পড়ে ঈদের মাঠে পড়া তবে বৃষ্টির কারণে মসজিদে পড়া জায়েজ রয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে বের হয়ে দু রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। এর পূর্বে ও পরে অন্য কোন নামাজ আদায় করেননি।’ [সহীহ বুখারি : ৯৮৯] প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবীর এবং ২য় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়ে সলাত আদায় করা। (সহিহআবুদাউদ-১০১৮)
ঈদের খুতবা শ্রবণ করাঃ আব্দুল্লাহ বিন সায়েব রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, বললেন : আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে।’ [সুনান আবূ দাউদ : ১১৫৭]
ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় করাঃ ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়।
ইয়াতীম ও অভাবীকে খাবার খাওয়ানোঃ ইয়াতিমের খোঁজ-খবর নেয়া, তাদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং সম্ভব হলে তাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেয়া। এটা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল কুরআনে বলা হয়েছে, তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে [সূরা আদদাহর : ৮]
আত্মীয়-স্বজনের এবং প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়াঃ ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের এবং প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ [সহীহ বুখারি : ৬১৩৮]
মন-মালিন্য দূর করাঃ জীবন চলার পথে বিভিন্ন পর্যায়ে কারো কারো সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। ঈদের সময় পারস্পরিক মন-মলিন্য দূর করা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উত্তম সময়।
ঈদে যা বর্জনীয়ঃ
*জামাতের সাথে ফরজ সালাত আদায়ে অলসতা করা।
*ঈদ এর দিন রোজা রাখা।
*ঈদের দিন অপচয় ও অপব্যয় করা।
*অশ্লীল পোষাক পরিধান।
*বেহুদা কাজে সময় ব্যয় করা।
*মানুষকে কষ্ট দেয়া।
*ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ ফুর্তি করা।
*সমস্ত হারাম কাজ থেকে বিরত না থাকা।
সবাইকে পবিত্র ঈদ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা, 'ঈদ মোবারক'।
ছবিঃ গুগল
তথ্য সাহায্যঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৫৪