গত মার্চ মাসের শেষের দিকে ঘুরে এলাম বাংলাদেশের অন্যতম নয়নাভিরাম অঞ্চল খাগড়াছড়ি + সাজেক থেকে। রাত ১০ টার দিকে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আমাদের বাস। বাস কুমিল্লা পৌঁছানোর আগে একটুও ঘুমাতে পারিনি। কুমিল্লা থেকে খাগড়াছড়ি এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবার পরে কিছু ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, তারপর সাপের মত এমন আঁকাবাঁকা পথ যে বাস কখন সোজা পাহাড় থেকে নিচের খাদে গিয়ে পরে সেই ভয়ে আর ঘুমাতেই পারিনি! অবশেষে দীর্ঘ যাত্রা শেষ করে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ঘুম ঘুম চোখে আমরা গিয়ে হাজির হই খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা এর সদর দরজায়। তখন শুরু হয়নি সেখানকার কার্যক্রম, তাই আমরা সেই ফাঁকে ম্যাজিক টুথ পাউডার দিয়ে মুখটা ফ্রেস করে আর দোলনায় দোল খেতে খেতে অপূর্ব প্রকৃতি এর সাথে সময় কাটাতে লাগলাম।
ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পর শুরু হয় সেখানকার কার্যক্রম। স্থানীয়দের কাছে থেকে বাঁশ দিয়ে বানানো মশাল নিয়ে শুরু হয় অভিযান। অনেক ধাপ সিঁড়ী ভেঙ্গে নামার পরে দেখা পাই গুহার মুখের।
গুহার ভিতরে দেখা পাওয়া যাবে গাঁড় অন্ধকার, পানি, বাদুর, ব্যাঙ আর প্রচণ্ড গরম এর দেখা। ১০ মিনিট চলতেই শেষ দেখতে পেলাম গুহার। শেষের অংশটাই সবথেকে সুন্দর।
আলুটিলা গুহা পর্ব শেষ না হতেই ছুটলাম রিসাং ঝর্না দেখতে। আগে থেকে ভাড়া করা চাঁদের গাড়ি আমাদের কে পৌঁছে দিয়েছে ঝর্না এর কাছে। গাড়ি থেকে নেমে অনেক ঢালু পথ নেমে, অনেক সিঁড়ী ভেঙ্গে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ঝর্না দেখে আমাদের আশাহত হতে হয়েছে।
নামতে যত না আমাদের কষ্ট হয়েছে সেই একি পথ উঠতে গিয়ে আমাদের অজ্ঞান হবার দশা! মাঝ পথে স্থানীয়দের ডাবের দোকান থেকে ডাব কিনে খাওয়াতে কিছুটা শান্তি। রিসাং ঝর্না পর্ব শেষ করে আমি বাঘের বাজারে গিয়ে সকালে নাস্তা শেষ করে পথের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পানি আর খাবার কিনে চাঁদের গাড়িতে রওনা হলাম সাজেক এর উদ্দেশে।
চারিদিকের অপরূপ পাহাড়ি শোভা, রোলার কোস্টার টাইপ রাস্তা, বিশাল বিশাল পাহাড়, পাহাড়ি মানুষদের সরল জীবন, সবুজ আর সবুজ দেখতে দেখতে পৌঁছেছি সাজেকে। রেস্ট নিয়ে বিকালে নাম মনে করতে পারছি না এমন একটা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছি। পাহাড়ের ওপর থেকে মনোমুগ্ধকর সব দৃশ্য চোখে পরেছে।
সন্ধ্যা নামতেই রিসোর্ট এর কাছেই একটা হেলিপ্যাড গেলাম। দেখলাম সবাই এখানে এসে জড়ো হয়ে আড্ডা দিচ্ছে, গান গাচ্ছে, ফানুস ওড়াচ্ছে। আহারে জীবন!
অনেক রাতে রিসোর্টে ফেরার পর ডিনার সেরেই সারা দিনের ক্লান্তিতে মরার মতো ঘুম। তবে বেশি ঘুমালে চলবে না, ভোরে অপেক্ষা করছে সাজেকের সবথেকে আকর্ষণীয় পার্ট। ভোরে পুরো সাজেক পেজা তুলোর মত মেঘে ঢেকে রাখে ঠিক যেন কাশ ফুলের বন! হাতের কাছে মেঘ! চাইলে হাত দিয়েও নাকি ধরা যায়!
ফেরার সময় বাঘাইছড়ি থেকে চাঁদের গাড়িতে লংগদু। লংগদু থেকে ট্রলার ভাড়া করে নদী পথে রাঙ্গামাটি। ইশ! এই নৌভ্রমণ কি যে অসাধারন ছিল!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:২২