প্রতিদিনকার চলার পথেই নিজের দেশকে নিয়ে নিজের দেশের মানুষদের মুখে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরেছি। গতকাল শেষমেশ আমারক কলিগকে বললাম 'ভাই অনেকত নেতিবাচক কথা বললেল এবার নিজের দেশ নিয়ে ৫ টা ইতিবাচক কথা বলুনতো?' তিনি অনেকক্ষণ আআআ করে শেষ পর্যন্ত দুইটা পয়েন্ট বলতে পেরেছিলেন। যারা নেতিবাচক মন্তব্য করে অভ্যস্ত মাকে (দেশকে) নিয়ে ইতিবাচক কিছু খুঁজেই পান না, তাদের জন্য ১০টা ইতিবাচক পয়েন্ট তুলে ধরলাম। এমন হাজারো পয়েন্ট আছে তা নিয়ে না হয় পরে কোন সময় লিখব।
স্বাধীনতাঃ আমাদের সবথেকে বড় গর্বের দিকটি হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা আর সেই স্বাধীনতাকে ধরে রাখা। ১৯৭১ সালের আগে ১৫০ এর থেকে বেশি কিছু দেশ স্বাধীন ছিল মাত্র আর এই ২০১৮ সালে এসেও ৩৪ টি দেশ পরাধীন! আমরা অনেক ভাগ্যবান কারণ দেশের সূর্য সন্তানদের জন্য নরপিশাচ পাকিস্তান এর কাছে থেকে মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশঃ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছর পর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) শ্রেণি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৫ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘ এর তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এই যোগ্যতা অর্জন করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে বাংলাদেশ।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিঃ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে মাথাপিছু আয়ে এগিয়েছে অনেক দূর। বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ গুণ। যদিও আয়ের সুষম বণ্টন হয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ছিল মাত্র ১২৯ মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর মাথাপিছু আয় এখন ১৭৫২ ডলার।
জিডিপিঃ গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৬১০ ডলার। প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। এরপর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। নয় মাসের প্রাক্কলন সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন এ বাংলাদেশের সাফল্যঃ ভারতের বোম্বেতে অনুষ্ঠিত, ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিক্স চ্যালেঞ্জ এর মূল পর্বে বাংলাদেশের তিনটি দল BUET Exponential , RoboSUSTএবং DUET TimeOut অংশগ্রহণকরে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থস্থানঅর্জনকরে তাক লাগিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তিবিশ্বকে। এতো মাত্র একটা উদাহরণ। কোন কম্পিটিশন এ সাফল্য লাভ করেনি? গণিত অলিম্পিয়াডে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান আমাদের দখলে, সার্ক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের মুভি হালদা’ ছবিটি চারটি বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে। বিভাগ চারটি হচ্ছে, সেরা চলচ্চিত্র, সেরা চিত্রগ্রাহক, সেরা সম্পাদক ও সেরা আবহসংগীত। এমন হাজারো উদাহরণ আছে সেসব লিখতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। শুধু এইটুকু বলি, বাংলাদেশের সন্তানেরা অনেক অনেক মেধাবী।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্যঃ আমাদের দেশ এক সময় ছিল হতদরিদ্র। দেশের মানুষদের ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এর মাঝে কি আর খেলাধুলা নিয়ে কেউ ভাবতে পারে? পরের দিনের খাবার যোগার করতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হতো আর আমরা শারীরিক ভাবে এমনিতেই ইউরোপ, আফ্রিকান বা আমেরিকান দেশ গুলর তুলনায় দুর্বল। তাই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেতে আমাদের সময় লাগছে। সময় লাগলে আমরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। এইতো কিছুদিন আগেই ভারত আর পাকিস্থানের মতো অতি শক্তিশালী দেশকে আমাদের সোনার মেয়েরা হারিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট এ। ছেলেরা টি-২০তে আফগানিস্তান এর কাছে হেরে গেলেও এক দিনের ক্রিকেট এ পৃথিবীর যে কোন দেশকে হারাতে পারি। কিশোরী মেয়েরাও দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। আমি মনে করি দেরি হলেও আমরা এই সেক্টরেও এগিয়ে যাচ্ছি।
মহাকাশে স্যাটেলাইটঃ আমাদের অনেকের মাঝে বিরূপ ধারণা থাকলেও আমারা এখন ৫৭তম রাষ্ট্র হিসাবে গর্বিত স্যাটেলাইট এর মালিক। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছে। দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশঃ নানা প্রতিকূলতার পরও তৈরি পোশাক খাতের বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এবারও শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ চীনের পরই অবস্থান। রপ্তানি ৬ শতাংশ বেড়ে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৮ বিলিয়ন ডলার ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে।
নারীর ক্ষমতায়নে অর্জনঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, মাননীয় স্পিকার একজন নারী, প্রধান বিরোধী দল এর শীর্ষ পদে আছেন একজন নারী! এমন কিছু পৃথিবীর আর কোন দেশেই নেই! নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে।
কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনঃ কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে।প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭ টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।
আমি জানি আমাদের অনেক সমস্যা আছে, নেতিবাচক দিক আছে। কিন্তু সে সব নিয়ে আজ আলোচনা করব না। আমি শুধু মায়ের (দেশের) ইতিবাচক দিক গুলো নিয়েই আলোচলা করব। দেশ কখনো খারাপ বা ভালো হতে পারে না নিজে থেকে, দেশের মানুষেরা যা একটা দেশ তাই। তাই চলুন পৃথিবী যেন আমাদের মাকে (দেশকে) নিয়ে গর্ব করে তেমন কাজ করি।
তথ্য সাহায্যঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:০৮