ভোর ৫ঃ৩০ এ চাঁদের গাড়ি আমাদের হোটেল থেকে নিয়ে যাবে টেকনাফ এর উদ্দেশ্যে। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন। চাঁদের গাড়িতে করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে টেকনাফ যাওয়া জীবনের অন্যতম মনে রাখার মতো ঘটনা। এক পাশে পাহাড় আর অন্য পাশে সুমুদ্র পুরোটা পথ জুড়ে!
জাহাজ এর যাত্রা শুরু হবে নাফ নদীর বুক চিরে। এক পাশে বাংলাদেশ অন্য পাশে মিয়ানমার মাঝে সীমান্ত হয়ে আছে এই নাফ নদী। জাহাজ ছাড়ার পরেই আপনাকে সঙ্গ দিতে ছুটে আসবে শতশত গাঙচিল। গাঙচিল গুলো যাত্রীদের দেওয়া না না ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। নাফ, পাহাড়, গাঙচিল মিলিয়ে অপূর্ব এক যাত্রা!
সেন্টমার্টিন এর কাছাকাছি আসলে না না ধরনের জলযান চোখে পরবে, তার মাঝে ভালোমান হাসপাতালও আছে।
এমন অপূর্ব মনোরম সব দৃশ্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন স্বর্গের দুয়ারে।
স্বর্গের দুয়ারে তো পোঁছে গেলেন, এবার কি করবেন? চলেন জেলে নৌকা, তাদের সুমুদ্রের বুক থেকে ধরে আনা মাছ, আর সেই মাছ দিয়ে বানানো শুঁটকি মাছ দেখে আসি।
সেন্টমার্টিন বেশী পরিচিত প্রবাল দ্বীপ হিসাবে। চারিদিকে শুধু প্রবাল আর প্রবাল! যেনো পুরো দ্বীপই প্রবাল দিয়ে তৈরি!
সেন্টমার্টিনে লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর বাড়ি আছে জানেন তো? সেই বাড়ি এখন ভাড়া দেওয়া হয় পর্যটকদের কাছে। চলেন চলেন দেখে আসি।
হুমায়ুন স্যার এর বাড়ির ভেতর বাহির দেখা শেষ? তার বাড়ির ঠিক সামনে দিকে সুমুদ্রেরর মাঝে একটা দ্বীপ আছে, যেখানে 'দারুচিনি দ্বীপ' সিনেমার শুটিং হয়ে ছিলো। চাইলে আপনিও যেতে পারেন সেখানে। এই দ্বীপ খুবই ছোট। ভাঁটার সময় জেগে ওঠে আর জোয়ারের সময় কিছুটা অংশ বাদে পুরোটাই তলিয়ে যায়। যেতে হলে আপনাকে কোমর পানি হেঁটে মাছ ধরার ট্রলারে উঠতে হবে, তারাই আপনাকে পোঁছে দেবে অদ্ভুত সুন্দর, মনোমুগ্ধকর 'দারুচিনি দ্বীপে'।
এতো ঘুরে ক্লান্ত? একটু রেস্ট দরকার? আরে ভাই সুমুদ্র পারেই আছে দোকান আর সেখানেই পাবেন তাজা তাজা ডাব। ডাব খেয়ে নিজেকে প্রশান্ত করুন। এই দ্বীপে আছে প্রচুর নারকেল গাছ, তাই এই দ্বীপ নারকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। আরো আছে না না জাতের গাছ গাছালি। একটা গাছে সুন্দর ফল হয়, সুন্দর হলেও সেই ফল খাওয়া যায় না।
ডাব খেয়ে রেস্ট নিয়ে আপনি ফ্রেস হয়েছেন তো? এবার আপনার সামনে আসবে এই স্বর্গের সবথেকে সুন্দর মুহূর্ত, আর সেটা হচ্ছে সন্ধ্যা! এতো অপূর্ব সন্ধ্যা নামা আপনি পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না, আমি শিওর।
সন্ধ্যা শেষ, চারিদিকে আঁধার নেমে এসেছে এবার কি করবেন? রুমে বসে আঙ্গুল চুষবেন? আরে ভাই সুমদ্র পারের দোকান দেখালাম না? সবাই মিলে সেই দোকানের বেঞ্চে বসে আড্ডাদিন না! এক পাশে সাগেরর গর্জন আর অন্য পাশে অসীম নীরবতা এর মাঝে আড্ডা দিতে বা শুধু চুপ করে বসে থাকার মাঝেও স্বর্গীয় সুখ আছে। সময়ের সাথে সাথে জোয়ারের কারণে পানি বাড়তে থাকবে। এক সময় আপনার পায়ের পাতা ভিজিয়ে দেবে। ইশ! কি শান্তি! কি শান্তি! আলহামদুলিল্লাহ্! পানির জন্য আর বসে থাকা গেল না। তো করবেনটা কি ডিনার করে ঘুমিয়ে পরবেন? আমি বলব না, একদম ঘুমাবেন না!! কেন বলছি এই কথা? কারন সাগরের তাজা মাছ দিয়ে বারবিকিউ করা এখোন বাকি আছে তো মশাই! চলুন তবে শুরু করে দেই।
ভাই অনেক হয়েছে, এবার ঘুমান গিয়ে। ভোরে উঠতে হবে তো! সন্ধ্যার মতো, ভোরও অনেক অপূর্ব।
এরপর সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর সবথেকে রোমাঞ্চকর অংশ সামনে আসবে। এখানে প্রচুর সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়, আপনি সাইকেল চালাতে পারলে সাইকেল চালিয়ে আর না চালাতে পারলে পায়ে হেঁটে/ট্রলারে/স্পীডবোডে করে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থান ছেড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এতো সুন্দর একটা জায়গা! এতো স্বচ্ছ পানি! পানির মাঝে সব মাছ দেখা যায়। আমি কথা দিতে পারি, ছেড়া দ্বীপ আপনার মন কেড়ে নেবে। (বিঃ দ্রঃ আমার মোবাইলে চার্জ না থাকায় ছেড়া দ্বীপ এর কোন ছবি নেই! আমার সব ছবিই মোবাইলে তোলা)
অনেক দেখেছেন চলুন বাড়ি ফিরে যাই। ফেরার পথেও আসার সময়কার অপূর্ব মনোরম সব দৃশ্য দেখতে দেখতেই আসবেন। এবার তাহলে বলুন বিদায় সেন্টমার্টিন! বিদায় স্বর্গ!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০০