শেখ হাসিনা নোবেলের সংক্ষিপ্ত ১০ এ,নিউজ কতটা সত্য??
আমার কাছে এই নিউজটা প্রথম আসে ভোরে, তিনটা বা সাড়ে তিনটার দিকে। দ্যা এশিয়ান এজ নামক এক ইংলিশ পোর্টালের মাধ্যমে। এর পরে দেখলাম আমাদের দেশিও অনলাইন পোর্টালগুলোও সেই নিউজের বাংলা অনুবাদ হুবোহুব ছেপেছে।
এবার আমার বিশ্বাসে কিছুটা চিড় ধরল,কারন কিছু নিউজ বিশ্বাস করা যায় এমন লিংকেও এমন নিউজ দেখলাম,বড় ভাইরাও দেখি ২/১ জনে একই নিউজ জানাচ্ছে। শেখ হাসিনা নোবেলের সংক্ষিপ্ত তালিকায়।
আর নিউজের একটা অংশে লিখাটাও এমন ছিল
“”......................নোবেল কমিটি কখনো নামের তালিকা বা সংক্ষিপ্ত তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনা। তবে, যারা মনোনয়ন দেন এবং বিভিন্ন সূত্রে সংক্ষিপ্ত তালিকা বেরিয়ে আসে।””
তালিকায় ১০ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামও দেয়া আছে। যারা বলেন তালিকা প্রকাশ পায় না,আজপর্যন্ত পায় নাই,তারাও ভুল। নোবেল পাওয়ার আগেই এগুলা প্রকাশ হয়ে যায়। প্রতিবারই হয়,গতবারও হয়েছে।
মহুর্তেই ফেসবুক সয়লাব এই নিউজে।
আমার সন্দেহ অন্যজায়গায়। শেখ হাসিনা নোবেল মনোনয়ন পেয়েছে,এই নিউজ কবে প্রকাশিত হয়েছে??
নোবেল পেতে পারেন এই নিউজ কবে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর দিচ্ছি,তার আগে এই ইনফরমেশনটা জেনে নিন
“”.....এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩১৮ টি নাম আসে। এটি নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাম। গত বছর ৩৭৬ জনের নাম এসেছিল। নোবেল কমিটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মনোনয়ন প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখের মধ্যে তারা তাদের প্রস্তাব জমা দেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৭ এর জন্য মনোনীতদের মধ্যে ২১৫ জন ব্যক্তি এবং ১০৩ প্রতিষ্ঠান। মার্চে এই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তা প্রেরণ করা হয় উপদেষ্টা মূল্যায়নের জন্য। জুলাই মাসে উপদেষ্টা মূল্যায়ন চূড়ান্ত হয়। উপদেষ্টা মূল্যায়নের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা উপস্থাপিত হয় কমিটির কাছে। কমিটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান করেন।”’
খেয়াল করুন,উপরের লিখায়।
★ফেব্রুয়ারিতে মনোনয়ন নেয়া হয়
★মার্চে যাচাই বাছাই
★ জুলাইয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকা
**শেখ হাসিনা নোবেলের মনোনয়ন পেয়েছেন তা কিন্তু ফেব্রুয়ারি বা মার্চে কেউ বলে নাই!
**জুলাই মাসেও কেউ বলে নাই ১০ এ আছে,আগস্টেও কেউ বলে নাই তিনি নোবেল দাবীদারদের তালিকায় আছেন।
তাহলে আজ হঠাৎ করে এমন নিউজ কেন??
এর উত্তর জানার আগে জেনে নিই,কি কারনে শেখ হাসিনা নোবেল পাবেন বা যে কারনে তিনি নোবেল পেতে পারেন বলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
“”......এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম আছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি শান্তির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।””
★বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জঙ্গি দমন
★রোহিঙ্গা সমস্যা
এই কারনে তিনি নোবেল পাবেন। **জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা বিশ্বে না বাংলাদেশে চেষ্টারত,কতটা আমাদের দেশে জঙ্গি আছে আর কতটা সফল তা আমরা ভালই জানি। আওয়ামীলীগ অনেক নেতা এবং মন্ত্রীরা ত বলেন দেশে কোন জঙ্গিই নাই। তাহলে কিশের উপর ভিত্তি করে সে নোবেল মনোনয়ন পায়?
** রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হয়েছে কবে? শেখ হাসিনাই বা সে বিষয়ে কথা বল্লো কবে? ১ মাস আগে? তাহলে নোবেলের জন্য মনোনয়নের যুক্তিই ত টিকল না,সংক্ষিপ্ত ১০ ত পরে।
এবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার প্রথম চায় নাই,সরাসরি না বলে দিয়েছে। এর পরে যখন জনস্রোত বাড়ল, হঠাৎ নোবেল প্রসঙ্গ আসলো শেখ হাসিনা চেঞ্জ,রাতারাতি মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের সুর কথা সব চেঞ্জড।
তবে হ্যা শেখ হাসিনা যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং ভালো লবিং করতে পারে,২০১৮ সালে নোবেল সে পেতে পারে!!
ড.ইউনুস লবিং করে,অর্থনৈতিক কাজের তথা সুদের ব্যবসায় অবদান শান্তিতে নোবেলের মাধ্যমে যার শান্তিময় স্বীকৃতি। ২০০ কোটি টাকা এবং নরওয়ের মোবাইল অপারেটর টেলিনরই যে নোবেল পাওয়ার বিষয়ে বেশি হেল্প করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়াযায়। সেখানে শেখ হাসিনার নোবেল পাওয়া অবিশ্বাস্য ছিল না।
আর এই ১০ জনের তালিকা যদি সত্য হত,সব নিউজ চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ আকারে তা দিত। দিছে কোন চ্যানেল?? দেয় নাই। আর লিংক যদি খুঁজেন তাহলে আন্তর্জাতিক এবং পরিচিত মিডিয়ায় কিন্তু এই নিউজ আসে নাই। এই সব নিউজ ফাশ করে আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি। তাদের কাছেও এই তথ্য নাই,অথচ দেশের হাতি-ঘোড়া ডটকমে এই নিউজ ভরপুর। তাহলে বলাই যায় এই নিউজ সম্পুর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট!
তাহলে এই নিউজ কই থেকে আসলো?
সরকার,শেখ হাসিনা সবাই মুখিয়ে আছে একটা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য। তাইত,আর্থ,সাউথ সাউথ নামে বেনামে কিছু পুরস্কার পাওয়ার পর দেশে কত সংবর্ধনা। এবারও কি এক এওয়ার্ড পেয়েছে বলে সংবর্ধনার আয়োজন হয়েছিল কিন্তু কি এক কারনে তা বাতিল করা হয়। পরে জানাযায় আসলে এমন কোন পুরস্কার শেখ হাসিনাকে এবার দেয়াই হয় নাই। কিন্তু সবখানেই প্রচার হয়েছিল তিনি এওয়ার্ড পেয়েছেন।
কোন ভাবে যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় যে শেখ হাসিনা নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং সেরা ১০ জনের তালিকায়ও ছিলেন,এটা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গলাবাজি এবং সামনে নির্বাচনী প্রচারণায় ভালো কাজে দিবে। সবাইকে বলাযাবে, জনগনের আরও কাছে যাওয়া যাবে।
যেমন জয়কে আওয়ামী অনেক মন্ত্রী, নেতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচয় দেন। নোবেলের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিজেদের
প্লান বা অতি উৎসাহী কোন ভুঁইফোড় নেতা,সাংবাদিক নামের সাংঘাতিকের কাজ!!
এই মিথ্যা নিউজ আমাদের তরুনদের বিশেষ করে যারা লিংকে বিশ্বাসী তারা একটা ম্যাসেজ নিয়ে নিন এখান থেকে।
“”লিংক ইচ্ছা করলেই বানানো যায় এবং তা মিথ্যা নিউজকেও লিংকের মাধ্যমে সত্য করা যায়,আর আমরা যেহেতু লিংকে বিশ্বাসী, কিছু হলেই লিংক দেন,লিংক দেন বলি। সেই লিংকের ভরসা বা ফাদে ফেলেই,আমগাছ ডট কম,গাবগাছ ডট কম টাইপের নিউজ পোর্টাল এমন নিউজ করে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে নিউজ করে”” তাই লিংক বিশ্বাস করার আগে একটু যাচাই বাছাই করে নিন,তরপরেও ভুল মানুষেই করে।
আমার মনে পরে
“” একজনরে বলল্লাম আমি এই ঘটানা সরাসরি দেখছি,সে বলে ভাই লিংক দেন,আমরাও দেখি ""তার কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম,কোন কথাই আর বলি নাই। অবস্থা এমন,গ্রামের বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখার লিংক তারে আমার দিতে হবে।
হিটলারের সময় একটা কাজ করা হত এবং তারা এটা বিশ্বাস এবং নিজেরাও এপ্লাইও করত।
“”মিথ্যাকে বেশি বেশি সত্য বলে প্রচার করলে তা একসময় সত্যি হিসাবে মনে হবে””
আমাদের সমাজেও এমন চলতেছে! সার্কাস!
@kabir ahmed madhob