বাং-গালি, ওয়ান্স এগেইন!
বাঙ্গালি খুব ধর্মপ্রাণ জাতি। ধর্মকর্ম নিয়ে তারা খুবই সিরিয়াস। তারা এতটাই সিরিয়াস যে কোনদিন পশ্চিম দিকে ভুলেও উষ্ঠা খায়া না পরলেও দিব্যি হাদিস কোরআন নিয়ে সেই পরিমান তর্ক করতে পারে। এরাই ঠিক করে দেয় কে জান্নাতে যাবে কে যাবে না!
“”নায়ক রাজ্জাক মারাগেল,তার জন্য দুয়া করে ফেসবুকে লিখা হলো ‘আল্লাহ্ যেন তাকে ক্ষমা করে এবং জান্নাত দান করে-আমিন’”
কিছু কমেন্ট দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম, বলতে থাকলো জান্নাত এত সহজ? জাহান্নামে যাবে। তাদেরকে বলা হলো আল্লাহ্ যদি ক্ষমা করে তাহলে কার সাদ্য আছে তাকে জাহান্নামি করার? আল্লাহ ত ওয়াদা করেছেন, সমুদ্রের ফেনা সমান,পাহাড়ের সমান উঁচু, বড় গুনাহ হলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন। সেখানেও বাঙ্গালি যুক্তি দেখায়,সে যে ক্ষমা চেয়েছে জানলেন কিভাবে? ভালো কাজ ত করে নাই! আরও আরও কত কি।
অথচ একজন মুসলিম,নামে মাত্র মুসলিমও যদি মারা যায় তার পাপ গোপন রাখা এবং তার জন্য দুয়া করা সকল মুসলিমের দায়িত্ব।
নিজে যে কত পাপ করেছি,তার হিসাব না কষে অন্যের পাপের হিসাব মিলাতে আমরা ব্যস্ত।
আগে আমাদের কিছু সিক্রেট গ্রুপ ছিল,যে গ্রুপের কাজ থাকত নাস্তিক আইডি,শুধুই নাস্তিক আইডি না যারা ধর্মের অবমাননা করে তাদের আইডি রিপোর্ট দিয়ে ডিজেবল করে দেয়া। আমি কিছু লিখালিখি করতাম এবং সেই গ্রুপের বাবু সাহেব আবার ইসলামিক বিষয় নিয়ে লিখালিখি করতেন, আমাকেও তাই সেই গ্রুপে জয়েন করালো। কয়েকদিন ভালই চলছিল।
এরপর দেখলাম নিজের পারসোনাল সমস্যার কারনে,কেউ হয়ত কোথাও ঝগড়া লাগছে বা কোন মেয়েকে ম্যাসেজ দিছে পটাতে পারে নাই,গ্রুপে আইডি লিংক দিয়ে,
“”ফ্রান্স নাস্তিক দে রিপোর্ট “”
সবাই বুঝে না বুঝে ধুমায়া রিপোর্ট। সে যুগের অবসান হয়েছে। এখনো কিছু আছে।
বাঙ্গালি নাস্তিকের মানে বুঝে না,যারা বুঝেনা তাদের বলছি
“”যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেনা তাদের নাস্তিক বলা হয়””
জামাত,শিবির বা অন্য ইসলামিক দল এবংকি কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বল্লেও সে নাস্তিক না। ভারতীয় অনেক হিন্দু যারা মুসলিম নির্যাতন করে বা ইসলামকে কটাক্ষ করে তাই বলে সে নাস্তিক না। এরা উগ্র, নাস্তিক তারাই যারা কোন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না।
রাজাকার কারা? ৭১ এ রাজাকার,আলবদর, আলশামস নামক কিছু গ্রুপ ছিল,যারা হানাদারদের সাহায্য করত। এদের ভিতর রাজাকার গ্রুপের সদস্যরা বেশি সক্রিয় ছিল,সেই গ্রুপের সদস্যরাই রাজাকার।
আওয়ামীলীগের বিপক্ষে কথা বললেই বা পাকিস্তান নিয়ে কথা বললেই কেউ রাজাকার হয় না।
“এসকে সিনহা রাজাকার ছিল!
-আওয়ামী নেতা হাসান মাহমুদ “
অতিরিক্ত ধর্ম নিয়ে তর্ক করলে বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আপনার পাশের মানুষটি নাস্তিকদের পক্ষে বা পাকিস্তান পন্থী হয়ে যেতে বাধ্য,শুধু আপনাকে থামাতে বা আপনার বিরোধীতা করতে। তাই বাঙ্গালি একটু সাবধানে।
অনন্ত জলিল সাহেবরে নিয়ে একটু বলি।
এই লোকটা যখন সিনেমা করত কেউ তাকে বলে নাই,অশালীন সিনেমা হারাম,অশালীন গান,নাচ হারাম আপনি এসব করবেন না।
যখন তিনি ভালো কাজ তথা ইসলামের কাজ শুরু করলেন বাঙ্গালি শুরু করেদিল তাদের স্বভাবজাত ধর্মকর্ম। তাকে ভন্ডা,লোক দেখানো কত কত কথা বললো,কিন্তু কেন?
অনন্ত নারায়ণগঞ্জ গিয়ে একটা কথা বলেছেন…
“”’আমি ছিলাম সিনেমার লোক,আল্লাহ চেয়েছে আমি ব্যবসায়ী থেকে সিনেমায় আসি,পরিচিত হই,লোকজন আমাকে দেখে ছুটে আসবে আর আমি তাদের ইসলামের দাওয়াত দিব’’””
হচ্ছেও কিন্তু তাই,অনন্ত জলিলকে দেখার জন্য লোকজন আসে তিনি তাদের ইসলামের দাওয়াত দেন,সবার সাথে কথা বলেন,সবাইকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়েন।
এখানে সমস্যাটা কি?
ইসলাম ত বলে
“”আপনি একটি আয়াত বা হাদিস জানলে সেটাই প্রচার করুন,আপনার দাওয়াতের কাজ হয়েযাবে””
আসলে আমরা ইসলামকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করি,পালন করতে হলে ইয়া বড় বড় টুপি,দাড়ি পাঞ্জাবী পরতে হবে আবার এগুলা পড়লেও সমস্যা,খাজনা থেকে বাজনা বেশি বলে কটাক্ষ।
অনন্ত, সাবেক নাইকা হ্যাপি তারা ইসলামের পক্ষে আসলে আবার ফেসবুক চালায় কেন?
“”আপনারা দাওয়াত মানে বুঝেন নামাজের আগে মসজিদ থেকে বের হয়ে যেখানে কিছু যুবক আড্ডা দিচ্ছে,খেলাধুলো করছে সেখানে যেয়ে তাদের বিরক্ত করে দাওয়াত দেয়াকে,অনেক সময় কথায় প্যাচ মেরে মসজিদে নিয়ে আসাকে কিন্তু এখানে কোনটাই সেচ্ছায় হচ্ছে না। সবাই বিরক্ত হয়ে,শুধু হুজুরদের সম্মানের জন্য আল্লাহ ও নবীর কালামকে সম্মান দেখিয়ে অনিচ্ছাকৃত আপনাদের কথা শুনে,আর মাথা ঝুলায়। আর সবারই কমন কথা থাকে ‘এই দুনিয়াটা ভাই কয় দিন?......’ আমাকে এই পর্যন্ত যত তাবলীগওয়ালারা রাস্তাঘাটে বা মসজিদে বসে দাওয়াত দিছে তাদের সবারই শুরুর কমন কথা ছিল এটা। একটু ভিন্নতা আনেন,মানুষের মাইন্ড রিড করে দাওয়াত দিন,কাজ হবে।
যা বলছিলাম,অনন্ত,হ্যাপি এরা সিনেমা জগতের স্টার ছিলেন বা আছেন। এরা যখন কোন কিছু করে তার নিউজ হয়,কারন তাদের ভক্ত আছে,আছে ফেইম। আরা তারা যে সব কিছু ছেড়ে এখন ইসলামের পক্ষে আছে,ইসলামের প্রচারণা চালাচ্ছে তা জানা সবার দরকার,যা থেকে সবাই শিক্ষা নিতে পারে””
এক লোক,খুনি,সন্ত্রাসী কেউ মুখ খুলবেনা তার বিরুদ্ধে অথচ যখন সে মসজিদে যাবে,নামাজ পড়বে ইসলামের পক্ষে আসার চেষ্টা করবে,ধর্মপ্রাণ বাঙ্গালি এবার তার জাত উদ্ধার করে ছাড়বে।
ভুতে ধরলে নাকি মানুষ পিছনে হাটে…
“”ছোটবেলায় হারিয়েযেতে চাইতাম,আমার আম্মু ভয় দেখাতো ভুতের,ভুতে একবার ধরলে আর বাসায় আসতে পারবে না,তুমি যে দিকে যেতে চাইবে ভুত তার উল্টাদিকে নিয়েযাবে তোমায়। ত আমি উত্তর দিতাম,তাহলে আমি বাসার বিপরীতদিকে যেতে চাইব, তাহলেই ত বাসায় চলে আসব "”
আমাদের বাঙ্গালিদের পাইছে ভুতে,ইসলাম বলছে খারাপ কাজে বাধা দিতে এরা ভালো কাজে বাধা দেয়।
হ্যা,এরা খারাপ কাজেও বাধা দেয়,কিভাবে? তাহলে শুনুন….
“”নাইকা তানজিন তিশা রমজান মাসে তাড়াবি নামাজের সময় শ্যুটিং শেষে ফেসবুক লাইভে আসছে,সেখানে অনেক অনেক পরহেজগার,ধর্মপ্রাণ বাঙ্গালি প্রশ্ন করতেছে
‘আপনার কি নামাজ নাই? তারাবি নামাজের সময় আপনি লাইভে আসছেন এটা মুসলিম দেশ’
তানজিন তিশা খুব সুন্দর করে বলে দিলেন
“ভাই আপনি আমার লাইভে কি করেন,নামাজ ত শেষ হয় নাই!,আপনি নামজে যাচ্ছেননা কেন? ”
একই টাইপের ঘটনা এক পাকিস্তানি মডেলের লাইভে,সে বিকিনি বা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে লাইভে আসছে,সেখানেও একই প্রশ্ন,আপনি মুসলমান হয়ে এগুলা পরছেন,তার প্রশ্ন আপনি এগুলা দেখেন কেন? ””
আমাদের দোষ আমরা দেখি না,শুধু অন্যের দোষটাই আমরা বেশি করে দেখি।
আমাদের নবী(সা) এর কাছে এক লোক অভিযোগ করল,তার ছেলে মিষ্টি বেশি খায়,হুজুর যেন তাকে মিষ্টি খেতে মানা করেন। আর নবীজীর কথা ঐ ছেলেটা অবশ্যই মান্য করবে এই জন্য তাকে নবীজির কাছে নিয়ে আসা।
নবী(সা) এক সপ্তাহ পর, সেই ছেলেকে ডেকে এনে, মিষ্টি খেতে বারন করলেন।
এর কারন ছিল,নবীজী নিজেই মিষ্টি পছন্দ করতেন,তাই আগে তিনি মিষ্টি ছেড়েছেন,পরে অন্যকে ছাড়তে বলেছেন।
কিন্তু আমরা কি করি?
নিজেরা ক্লিন সেইভ করি আর ইমাম সাহেবের মুখে অল্প দাড়ি কেন! সেটা নিয়ে নানান কথা বলি।
“”সত্যিকারের পরিবর্তন সে দিনই হবে যেদিন নিজে পরিবর্তন হব,বাকিরা হয়েযাবে””
ফ্রেন্ড সার্কেলে অনেকেই আছে যারা দেখবেন প্রেম পিরিতি,১৪-ই ফেব্রুয়ারি নিয়ে সারাক্ষণ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। দুই দিন পর সে আর বিরোধী পক্ষ না,চুপ হয়েগেছে। খুজ নিয়ে দেখেন,সে কারো সাথে প্রেম করতেছে,তাই চুপ।
আমি খুব ভদ্র,আসলেই কি ভদ্র? না সুযোগ পাইনা দেখে?
এক কৃষক খুব গর্ব করে বলে সে সৎ,কারন সে ঘুষ খায় না।
আরেকজন পুলিশ সে বলে আমি ঘুষ খাই না!
কে সৎ? অবশ্যই পুলিশ,কৃষকরে কেউ ঘুষ দিবে না অথচ পুলিশ ঘর থেকে দু পা দিলেই ঘুষের অভাব নাই। আমাদের সমাজে সুযোগ বঞ্চিত ভদ্রলোক বেশি। সুযোগ পেলে কেউ ছাড়তে চায় না।
সব শেষ,
“সাধু সেজো না,সাধু হও”