ইন এন ওপেন রিলেশনশিপ!
ফেসবুকে অনেকেই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়
“”ইন এন ওপেন রিলেশনশিপ “”
এই বিষয়টা নিয়ে আমি আজো ক্লিয়ার না। তারা কেনো এটা দেয় আর এটার মানেই কি? কেমন যেন সব খোলা খোলা লাগে,যার ইচ্ছা সে আসতে যেতে পারে টাইপের। অনেকটা গ্রামের ভাঙ্গা বেড়ার ঘরের মত। কুকুর ভাঙ্গা দিয়ে আসে আর যায়,ইচ্ছামতো!
আগষ্ট মাস নাকি শোকের মাস!,সবাই শোকে কাতর,শোকের মাসে হাসতে নেই, তাই শোকের একটা গল্প দিয়েই ওপেন করি লিখাটা।
বিস্তারিত বলার আগে আপনাদের একটু বলি যে..
“”২০১৫/১৬ এর আগ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হত,মেয়েরা লিষ্টে থাকা মানেই আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিষ্টের জায়গার অপচয়। এরা শুধু Hi,Hello friends,Good morning, Good night টাইপ স্ট্যাটাস ,চ্যাকইন,শপিং,রেস্টুরেন্ট এবং ছবি আপ ছাড়া কিছুই পারেনা। আর ইনবক্সে ন্যাকামি। ওনারা যদি গুড মর্নিং না দিত তাহলে জাতি বুঝতই না যে সকাল হইছে আর গুড নাইট লিখে স্ট্যাটাস না দিলে জনগণ জানতই না যে রাত হয়েছে,ঘুমাতে যেতে হবে। এবং সেই সব পোষ্টে লুলামি করা ছেলেদেরও অভাব হতো না।
তাই ডিসিশন নিয়া নিলাম লিষ্টে কোন মেয়ে রাখব না,এবাউটে খুব সুন্দর করে লিখে দিয়েছিলাম,মেয়েদের রিকোয়েস্ট দেয়া নিষেধ, গল্প লিখা পড়তে চাইলে,ফ্ল করেন। ফেসবুক প্রেমে বিশ্বাসী না। তাই ট্রাই করে লাভ নাই,ধরা খেলে বিনা নোটিশে ব্লক।
এর পরে যখন একটা শর্টফিল্মের জন্য গল্প অনুযায়ী নাইকা পাচ্ছি না,খুঁজতেছি। মেয়েরা অনেকেই ফেসবুকে যোগাযোগ করত,তারা যদি দেখে আমি ডিরেক্টর, মেয়ে নিয়ে এমন ভাবমারা আর চুলনাকি যুক্ত কথাবার্তা এবাউটে লিখে রাখছি,কাজ পরের কথা,মেয়ে আগে আমাকে ব্লক দিব। সো ডিসিশন চেঞ্জ। এর ভিতর অনেক মেয়ে লিখালিখি করা শুরু করল,তারাও শিখেগেল ভালো লিখায় লাইক বা কমেন্ট করে লেখককে উৎস দিতে হয়,তার মানে এরা আর অলস থাকলো না। ওয়াও,হট,কিউট,সেক্সি টাইপ কমেন্টে এরা আর পটে না।””
ত সেই যুগে ৫/৭ টা মেয়ে ছিল আমার লিষ্টে,যারা ভালই। হঠাৎ দেখলাম এক আপু বা মেয়ে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিছে
“”ইন এন ওপেন রিলেশনশিপ “”
কথাটায় আমার কেমন যেন চুলকানি যুক্ত মনে হলো,ভাবলাম কিছু বলি। পরে ভাবলাম না থাকুক,যার যা ইচ্ছা দিক। তবে জানার ইচ্ছা হলো এটা কেমন রিলেশনশিপ? জিজ্ঞাস করেই ফেললাম
“”-আপু সবাই কি ঢুকতে পারে?
--কিশে?
-আপনার রিলেশনশিপে! সবাই ইচ্ছামত ঢুকতে আর ভালো না লাগলে বের হতে পারে?
--আপনি ত একটা খারাপ মানুষ,আপনাকে আমি ভালো মনে করছিলাম,মেয়েদের সাথে কথাও বলতে জানেন না……
-আপু আপনিই ত রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিছেন
‘ইনা এন ওপেন রিলেশনশিপ ‘
ভাবলাম আমি আমেরিকা চলে আসছি না আমেরিকা বাংলাদেশে চলে আসছে! ঐ খানে এসব মানে ত ডোন্ট মাইন্ড সেক্স। ইচ্ছা হলে করলাম,ভালোলাগেনা বাদ…
তিনি আমাকে আর কিছু বলেন নাই,আমাকে ফ্রেন্ড থেকে বাদ দিয়ে ব্লকে জায়গা দিলেন কিন্তু আমার দোষ কি সেটা আজও বুঝি নাই””
তার পরে আমিও কিছুটা ওপেন হলাম,লিষ্টে শুধু সুন্দরী মডেল আপুরা না ভালো লিখালিখি করা আপুরাও যুক্ত হলো। তাদের অনেকের রিলেশনশিপের অবস্থা দেখি করুন,জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছা করে কিন্তু ঐ ঘটনা মনে হলে আর করি না। এখন পিচ্ছি পাচ্ছা ছেলেরাও এমন রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়,বুঝি এরা জন্ম থেকেই প্লে বয়।
খুব কাছের এক ছোটবোন ছ্যাকা খেয়ে রিলেশনশিপ ওপেন করেফেলছে। চিন্তা করলাম একটা ছেলের সাথে এমন হলো আর সে উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করল! আর স্ট্যাটাসে ছেলেদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছে। তারেই জিজ্ঞাস করলাম।
“” -একটা ছেলে না হয় তোমার সাথে প্রতারণা করছে,তাই বলে তুমি উল্টাপাল্টা কাজ করে বেড়াবা সবার সাথে?
--ভাইয়া, আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝি না।
-না,ঐ যে ‘ইন এন ওপেন রিলেশনশিপ’ সাইনবোর্ড দিছ!
--ভাইয়া, এটা ত এভাবেই দিয়েছি।
-এটার মানে জানো?
-না!
--এটার মানে হলো ওপেন সেক্স,বিয়ে ছাড়া যে যার মত। লিভটুগেদার টাইপের চেয়েও ভয়ানক। আজকে একজনের সাথে আছি কালকে অন্যজন। এটা ইউরোপ, আমেরিকায় বেশি দেখাযায়। পছন্দ হলো একসাথে থাকলাম,না হলো ছেড়ে দিলাম। দেখোনা পত্রিকায়,হলিউডের বড়বড় সেলিব্রেটিরা, আজকে এর সাথে ত কয়েক মাস পরে অন্যদের সাথে। সোজা কথা এখানে কোন রিলেশনশিপ নাই,সব ডোন্ট মাইন্ড সেক্স!
- আল্লাহ্, ভাইয়া সরি সরি, আমি এমন না,আমার পরিবার আমাকে এমন শিখায় নাই,আমার একটা সম্মান আছে। আমি ত এত কিছু জানতাম না আর এটার মানেও যে এমন তাও ত জানি না। আচ্ছা ডিলিট দিচ্ছি””
মেয়ে কিন্তু ভার্সিটিতে পড়ে সে এটার মানে বুঝে না। আমাদের অনেক আপু ভাইয়ারা আছে এদের মত। না বুঝে অথবা বুঝে নিজেদের কে এই সমাজের ফ্রী পতিতা,যা আবার সবার জন্য ওপেন, সাইনবোর্ড লাগায় ফেসবুকে। তাদের এইসব ব্যপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ। তমুক সেলিব্রেটি দিছে দেখেই যে আমাকে দিতে হবে তা ত না। তার কালচার আর আমার কালচার অনেক অনেক তফাৎ।
একজন বাঙ্গালি মেয়ে তার রিলেশন তথা সংসার টিকানর জন্য কত কষ্ট করে,কত ঝামেলা সহ্য করে,যা ইউরোপ, আমেরিকানদের দিয়ে সম্ভব না। আমাদের এখানে বন্ধনটাই কেমন যেন মজবুত, তাই ত বাবা,মা,দাদি, চাচা,মামা সবাইকে নিয়ে একসাথে, একই ছাদের নিচে থাকতে পারি। এটা অন্যকোথাও নাই,খুবই বিরল।
আপনার ফেসবুক আইডি,আপনার পরিচয় বহন করে। এখানে আমরা যা লিখি সবই কিন্তু আমাদের ভিতরের কথা,মানে আমি কেমন ভাবি,কি চিন্তা করি,আমার মানুষিকতা কেমন তা প্রকাশ পায়। আপনি কিছু লিখতেগেলে ফেসবুক কিন্তু জিজ্ঞাস করে
“What's on your mind?”
যা লিখবেন যা পোষ্ট করবেন,যা লাইক কমেন্ট করবেন তা দিয়েই প্রকাশ পাবে আপনার মনোনশীলতা।
অনেকের জব হয় না সিভিতে দেয়া ই-মেইল আইডি দেখে। ই-মেইল আইডি থাকে kuddus_love,jolil420,pintu_jan,akib-lonely-boy @অমুক ডটকম। এসব যদি হয় আমার রুচি তাহলে আপনার পারসোনালিটি নিয়ে তারা সন্দিহান থাকে। ইয়াহু যুগে,সোশ্যাল মিডিয়া ঐটাই ছিল তখন। উন্নত বিশ্বে অনেকেই তাদের জব হারিয়েছে এইসব কারনে।
যারা ছদ্মনাম দিয়ে ফেসবুক চালান তারা কি করে অন্যকে আইডি দেন? ধরুন আপনার এক বড়ভাই বা যাকে আপনি শ্রদ্ধা করেন এমন কেউ আইডি চাইলো,আর আপনি বললেন “ ভবঘুরে তুফান,সিডর সজিব,প্রেমহীন সালমান,আবহেলিত রাহাত,একাকি শিরিন,তোমার অপেক্ষায় কুলসুম!”
একটুও কি বিব্রত বোধ করবেন না? এগুলা কি কারও কাছে দেয়ার মত আইডি? নিজের বাবা-মায়ের দেয়া নামটা কি এতই খারাপ? যে দিতে পারেন না ফেসবুকে,তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া চালায়া লাভ কি?
লাইফে সমস্যা থাকবেই,তাই বলে তা ব্রান্ডিং করে বেড়াতে হবে? ফেসবুক যখন প্রথম দিকে ইউজ করতাম এটা নিছক একটা ফান অনেকে ফ্যাকবুকও বলে। বর্তমানে ফেসবুক শুধু ফানের জায়গা না,এটা আমাদের জীবনের একটা পার্ট হয়েগেছে। আমরা কি করি,আমাদের রুচি,পছন্দ,পারসোনালিটি ফেসবুকের প্রোফাইলে তাকালেই বুঝা যায়। যে যতই ফ্যাক ফ্যাক করেননা কেন,যতই লুকায়া রাখেননা কেন নিজের মনের কথা,নিজের ভিতরের মানুষটা প্রকাশ পাবেই। আপনি খুব ভদ্র,একটা নিউজ দেখলেন,মনে হলো মিথ্যা,আপনি কমেন্টে যেয়ে সেই সেই বকা দিয়ে আসলেন,রেগেমেগে। প্রকাশ পাইলো আপনার ভিতরের মানুষটা? যে রাগলে কি করতে পারে? কিশে রাগ হয়,কিশে খুশি হয়? যতই বলুন,লুকানো যায়না ভিতরটা।
আজকাল ফোন নাম্বারের আগে ফেসবুক আইডি চায় সবাই। ইন্টারে পড়ে একটা ছেলে যখন বলে
“”আমার ফেসবুক আইডি নাই””
সবাই পিকে মুভির আমির খানকে সরাসরি দেখার খায়েশ পুরন করে। এলিয়েন না ত!
তার মানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের লাইফের,যোগাযোগ করার জন্য হোক,নিজেকে আপগ্রেড রাখার জন্য হোক,সোশ্যালিজম ধরে রাখার জন্যহোক দরকারি। আর এর ব্যবহারটাও সেই ভাবেই করা উচিৎ!
ইসলামিক ভাবেই যদি চিন্তা করি
“”আপনি ভালো কিছু শেয়ার দিলেন,এর জন্য কেউ উপকৃত হলো,এর সুফোল আপনি মরার পরেও পাবেন। খারাপ কিছু পোষ্ট দিলে তার জন্য গুনাহ,পাপও যুক্ত হবে। যে যতবার দেখবে,শেয়ার করবে,এথেকে শিক্ষা নিবে ততবার””
তাই ফেসবুকে,ইউটিউব সহ সকল সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্ট দেয়া সম্পর্কে আরও সচেতন হউন। সব হারায়া যাবে কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়া যতদিন থাকবে,আপনিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ততদিন বেচে থাকবেন। আপনার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলেই,নাম লিখে সার্চ দিবে।
“”ফেসবুক একটা ডিজিটাল ডায়রি, বায়োগ্রাফী,যা সাক্ষী দিবে আমি কেমন ছিলাম,যখন আমি থাকব না এ দুনিয়ায়””