বাংলালিংকের হেড অফিস টাইগার ডেন আজকে ডগ ডেনে পরিণত হয়েছিলো। বেসরকারি সিকিউরিটি "এলিট ফোর্সের" সশস্ত্র গার্ড আর ডগস্কোয়াডের তৎপরতায় বাংলালিংকের অফিসগুলো আজকে হয়ে উঠেছিলো কর্পোরেট প্রিজন। সেই কর্পোরেট ডেনে ঢুকতে গিয়ে প্রাইভেট ডগ স্কোয়াডের কামড়ে আহত হয়েছেন সদ্য বুয়েট পাশ করা এক ইন্টার্ন নারী কর্মী যিনি মাত্র ১ মাস হলো ইন্টার্ন হিসেবে বাংলালিংকে যোগ দিয়েছে। বেচারা জানতনা আগের দিন রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে এই ইমেইল দিয়ে এইচ আর ডিরেক্টর মনজুলা মোরশেদ অফিস টাইম সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে ৮টায় নিয়ে এসেছে। সে এসে দেখে পুরো টাইগার ডেনের চেহারাই অন্যরকম। এ সময় ঢুকতে গেলে তার হাতে কামড় দেয় প্রাইভেট ডগ। চিকিৎসা নিতে তাকে এরপর একাধিক হাসপাতালে দৌড়াতে হয়েছে।
এদিকে কর্পোরেট ইন্টারোগেশনের শিকার হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের এইচডিইউ'তে ভর্তি হতে হয়েছে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(প্রস্তাবিত) এর সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলি মোস্তাক আহমেদ কে।
বাংলালিংকের ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সেলিম কবির, সিকিউরিটি ম্যানেজার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) শেখ মঈনুল হাসান ও হেড অব অপারেশনস মারুফ আহমেদ বেলা ১২টার দিকে মোস্তাককে অফিস ভবনের লেভেল থ্রিতে ডেকে নিয়ে যান।
তারা তাকে ‘ইন্টারোগেট’ করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে মোস্তাক ‘সেন্সলেস’ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঐ সময় কর্মীদের কাউকে তার কাছে পর্যন্ত ঘেষতে দেয়া হয়নি।
বিস্তারিত সংবাদ এখানে: Click This Link
আজ সকালে বাংলালিংকের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পরিকল্পনা ছিল ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে টাইগার ডেনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা। এর মাধ্যমে ম্যানেজমেন্টকে তাদের ৩টি দাবী মেনে নিতে বাধ্য করা। দাবী তিনটি হলো: গত বৃহস্পতিবার শরীফুল ইসলাম ভূইয়ার অবৈধ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার, এর পেছনে দায়ী ব্যাক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে সকল ছাটাই প্রকৃয়া বন্ধ করা। কিন্তু কর্মীদের বিক্ষোভ পরিকল্পনা ভন্ডুল করার জন্য কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এক চতুর কর্পোরেট চাল চালে- সকাল ৮টার সময় এক ইমেইলে সিইও এরিক অস ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম(ভিএসএস) নামের এক কমপেনসেশান প্যাকেজ ঘোষণা করে ইমেইল ছাড়ে।
প্যাকেজ অনুসারে কোন স্থায়ী কর্মী যদি সেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে চান তাহলে তাকে তার লেভেল অনুযায়ী ২৪ থেকে ৩০ মাসের বেসিক সেলারি বা মূল বেতন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হবে। এর জন্য তাকে ১৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। তবে আবেদন করলেই যে কেউ এই স্কিমের আওতায় চলে যেতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই, কোম্পানি চাইলে তাকে ভিএসএস দেবে, না চাইলে দেবে না। সেই সাথে এই শর্তও জুড়ে দেয়া হয় যে, যদি কেউ কোন সময় কোম্পানি বিরোধী তৎপরতায় যুক্ত থাকে বা যুক্ত হয়, তাহলে সে এই প্যাকেজের সুবিধা পাবে না। ফলে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, এই প্যাকেজের উদ্দেশ্য- আন্দোলনের মধ্যে বিভক্তি তৈরী করার জন্য ক্ষতিপূরণের মূলা ঝোলানো এবং আন্দোলনে যেন কেউ যুক্ত হতে সাহস না পায় সে জন্য কোম্পানি বিরোধী তৎপরতার সাথে যুক্ত থাকলে ক্ষতিপূরণ না দেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। বাস্তবে ভিএসএস এর আওতায় কতজন কর্মী ২৪ থেকে ৩০ মাসের বেসিক নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন তা নিয় যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। এরকমও হতে পারে, এই স্কিমের মুলা ঝুলিয়ে একদিকে কর্মীদেরকে শান্ত করা হবে অন্যদিকে আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদেরকে শরীফুল ইসলামের মতো একে একে ছাটাই করতে থাকবে। এবার ছাটাই করলে আর কেউ আন্দোলন করতে সাহস পাবে না- কারণ ভিএসএস হারানোর ভয়! এভাবে একবার সংগঠকদেরকে ছাটাই করে ফেলতে পারলে পরে ভিএসএস অল্প কিছু কর্মীকে দিয়ে বাকি কর্মীদেরকে খালি হাতে বের করে দিলেও তখন আর আন্দোলন করার মতো কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না!
আন্দোলনরত কর্মীদের একটা অংশ চক্রান্তটা বুঝতে পেরেই হয়তো পুরো বিষয়টা সম্পর্কে আরো পরিস্কার হওয়ার জন্য এবং শরীফুল ইসলাম ভুইয়ার ছাটাই প্রত্যাহার সহ আর কোন ছাটাই না হবে না এরকম নিশ্চয়তা চাইতে সপ্তম তলায় ম্যানেজমেন্টের লোকজনকে রীতিমত ঘেরাও করে ফেলে। তবে আবারো বৃহস্পতিবারের মতো পরিস্থিতি যেন না হয় সেজন্য ম্যানেজমেন্ট আগে ভাগেই দুপুর ২টার সময় হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করে দেয়।
এখন দেখার বিষয় সামনের দিনগুলোতে কর্মীরা কর্পোরেট চক্রান্ত মোকাবিলা করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারে কি না পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬