২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মহাবিশ্ব সম্পর্কে সারা পৃথিবীতে এ ধারনা প্রচলিত ছিল যে, এই মহাবিশ্ব অসীম এবং চিরস্থায়ী এবং সবসময়ই তা এমন থাকবে। এই মতবাদটি ‘ Static Universe Model’ নামে পরিচিত যাতে বলা হয়েছিল এই মহাবিশ্বের কোন শুরু বা শেষ নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে এই মডেল ভুল প্রমাণিত হয়। বর্তমান ২১ শতকে পৃথিবীর প্রখ্যাত কিছু বিজ্ঞানী এবং গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গানিতিক গণনার ফলশ্রুতিতে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এই মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে। এটি শূন্য থেকে তাৎক্ষণিক এক মহাবিস্ফোরণের ( Big Bang) মাধ্যমে সৃষ্টি। আমারা আরও জানতে পারি যে এই মহাবিশ্বের একটি শুরু যেমন আছে তেমনি এর শেষও আছে। এটি স্থায়ী স্থির নয়। এটি ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল, পরিবর্তনশীল এবং একটি নির্দিষ্ট গতিতে গতিশীল।
Fig: বিগ ব্যাং
মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে কোরআনে বলা আছে “যারা (নবীর কথা মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা কি চিন্তা করে না যে, এসব আকাশ ও পৃথিবী এক সাথে মিশে ছিল, তারপর আমি তাদেরকে আলাদা করলাম এবং পানি থেকে সৃষ্টি করলাম প্রত্যেকটি প্রাণীকে। তারা কি (আমার এ সৃষ্টি ক্ষমতাকে) মানে না? আল-কোরআন ( ২১:৩০) “ কোরআনের এই কথাটি বৈজ্ঞানিকদের প্রাপ্ত তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন যে যখন মহাবিশ্বের সর্বমোট ভর একটি নির্দিষ্ট সীমাতে পৌঁছাবে তখন মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারনে এই সপ্রসারনের সমাপ্তি ঘটবে এবং এটি নিজের ভেতর সঙ্কুচিত হতে থাকবে। তারা ধরনা করছেন এই সংকোচনশীল মহাবিশ্ব পরিশেষে প্রচণ্ড তাপে পরিণত হবে। অর্থাৎ ভর পরিবর্তিত হয়ে তাপে বা শক্তিতে পরিণত হবে। এই থিউরি কে বলা “ Big Crunch”.
Fig: বিগ ক্রাঞ্চ
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Renata Kallosh এবং Andrei Linde বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন “ এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে একসময় শূন্যে মিলিয়ে যাবে। আমাদের মহাবিশ্বের সবকিছু সংকুচিত হয়ে একটি প্রোটনের চেয়ে ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিণত হবে। তখন কিছু ডার্ক এনার্জির সৃষ্টি হতে পারে যা ক্রমান্বয়ে ঋণাত্মক হতে থাকবে এবং মহাবিশ্বকে অস্থিতিশীল করবে এবং একসময় সংকুচিত করবে। আমরা এখন মহাবিশ্বকে যেমনটা দেখছি তাতে ধারণা করা যায় আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং ধবংস চক্রের মাঝামাঝিতে আছি। “
বিজ্ঞানীদের এই অনুমিত Big Crunch থিউরি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে
সেদিন, যখন আকাশকে আমি এমনভাবে গুটিয়ে ফেলবো যেমন বাণ্ডিলের মধ্যে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত কাগজ, যেভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম ঠিক তেমনিভাবে আবার তার পুনরাবৃত্তি করবো, এ একটি প্রতিশ্রুতি, যা আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং এ কাজ আমাকে অবশ্যই করতে হবে।আল-কোরআন ( ২১:১০৪)
Big Crunch অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব প্রথমে ধীর গতিতে সংকুচিত হতে থাকবে। ডার্ক এনার্জি যত বাড়তে থাকবে তত এই সংকোচন গতিও বাড়তে থাকবে। এই প্রক্রিয়ার শেষে এই মহাবিশ্ব প্রচণ্ড শক্তিতে পরিণত হবে। এই বিগ ব্যাং এবং বিগ ক্রাঞ্চ থিউরি যা কিছু দিন আগে আবিষ্কৃত হলো কোরআন এ সম্পর্কে বলেছে ১৪০০ বছর আগে। কারন কোরআন হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার বাণী।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ১১:১৭