এই মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, অন্তরীক্ষ, আমাদের সৌরজগত এবং আমাদের বাসস্থান এই পৃথিবী অনেকগুলো বিষয় দ্বারা পরিচালিত। মানুষের বসবাস এবং জীবন ধারণের জন্য এইসব নিয়ম এবং সাম্যতা গুরুত্বের সাথে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হচ্ছে। আমদের এই মহাবিশ্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করে পাওয়া যায় যে গুরুত্বপূর্ণ মহাবিশ্বের সুত্র থেকে শুরু করে জটিলতর পদার্থের বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত, ক্ষুদ্রতম সাম্যতা থেকে অতিক্ষুদ্র অনুপাত পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ততটুকুই আছে যতটুকু মানুষের বেঁচে থাকার এবং জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ছায়াপথে পৃথিবীর অবস্থান, সূর্যের বিকিরিত রশ্মির পরিমান, পানির সান্দ্রতা, পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্ব, বায়ুমণ্ডল সৃষ্টিকারী গ্যাসেগুলোর অনুপাত এবং অন্যান্য বিষয়গুলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সঠিক পরিমানে আছে। এসব হাজার হাজার বিষয় এবং অবস্থাগুলো একত্রীত হয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করেছে। এসব কিছুর সামান্যতম ব্যাতিক্রম হলেই পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেত। কোনো coincidence এর মাধ্যমে এতগুলো বিষয় সঠিক হওয়া অসম্ভব। হঠাৎ ঘোটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে এত কিছু সঠিক ভাবে তৈরি হওয়াটা অসম্ভব। কোনো অলৌকিক শক্তির সাহায্য ছাড়া আপনা আপনি এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। এই মহাবিশ্বের এই নিয়ন্ত্রিত অবস্থাই প্রমাণ করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব।
নাসার জ্যোতির্বিদ প্রফেসর জন ও’কিফ এর মতে “ আমরা (মানবজাতি) পরিকল্পিত ভাবে সৃষ্টি করা একটি জাতী। যদি এই মহাবিশ্ব সঠিক ভাবে তৈরি না হত তাহলে আমদের অস্তিত্বই থাকত না। এসব দেখে আমার মনে হয় এই মহাবিশ্ব মানুষের সৃষ্টি এবং বসবাসের লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে। “
ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ প্রফেসর পল ডেভিস বলেন “the laws [of physics] ... seem themselves to be the product of exceedingly ingenious design…. The universe must have a purpose."
ব্রিটিশ গণিতবিদ প্রফেসর রজার পেনরোস এর মতে “I would say the universe has a purpose. It's not there just somehow by chance."
মহাবিশ্ব থেকে প্রাপ্ত সব তত্ত্ব ও তথ্য এটাই নির্দেশ করে যে হঠাৎ বা দুর্ঘটনা ক্রমে বা coincidence এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়নি। এটি মহান সৃষ্টিকর্তা দ্বারা পরিকল্পিত এবং পরিচালিত। এ সম্পর্কে কোরআনে বলা আছে
যারা বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাত্রদিনের অনবরত আবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টিধারার মধ্যে, যা আল্লাহ বর্ষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করেন এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্যা নিদর্শন রয়েছে।সূরা আল বাক্বারাহ (১৬৪)
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হার এর বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে।যদি এই হার সামান্য কম হত তবে আমাদের এই সৌর জগত সৃষ্টি হওয়ার আগেই পুরো মহাবিশ্ব আবার সঙ্কুচিত হয়ে মিশে যেত। যদি এই সম্প্রসারণের হার সামান্য বেশী হত তবে এই মহাবিশ্বের সবকিছু ইতস্তত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেত অন্তহীন অন্তরীক্ষে। ফলে সৌর জগত, তারকারাজি, ছায়াপথ এসব গড়ে উঠার সুযোগ পেত না।
উপরের যেকোন একটি ঘটলেই আমাদের সৌর জগত, পৃথিবী প্রান তথা মানুষের জীবনধারণের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠত না। কিন্তু এমনটা হয়নি। এর কারন সঠিক সম্প্রসারণ হার। কিন্তু এই সম্প্রসারণ হার আসলেই কতটুকু নিয়ন্ত্রিত? অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গণিত ও পদার্থবিদ অ্যাডলিডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর পল ডেভিস এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে কিছু গানিতিক গণনা এবং গবেষণা করেন। এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি অভূতপূর্ব একটি ব্যাপার খুজে পান। তা হচ্ছে, যদি এই মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণের হার 1/10^18 অর্থাৎ ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০১ পরিবর্তন হতো তবে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতো না। এই সম্প্রসারণ হার ঠিক ততটুকুই যতটুকু হলে মহাবিশ্ব নিজের মহাকর্ষ আকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করতে পারে। এর সামান্য কম বেশী হলেই মহাবিশ্ব আজকের এই অবস্থায় থাকত না। যদি বিগ ব্যাং এর শুরুতে মহাবিশ্বের সকল বস্তুর ঘনত্ব যা ছিল তার চেয়ে সামান্য বেশী হতো তবে আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি সূত্র অনুযায়ী মহাবিশ্বের বস্তু সমূহের আকর্ষণের ফলে সম্প্রসারিত হতে পারত না। পুনরায় তারা একে অপরকে আকর্ষণ করে সঙ্কুচিত হয়ে যেত। আর যদি ঘনত্ব সামান্য কম হত তবে তা খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হতো। তখন বস্তুকণাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে ছায়াপথ, গ্যালাক্সি, সৌর জগত, গ্রহ ইত্যাদি গড়ে তোলার সময় পেত না। ফলে পৃথিবী তথা মানুষের সৃষ্টি হতো না।
Allan Guth, যাকে বলা হয় father of the inflationary universe model, মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের উপর ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এক অসাধারন ফলাফল পান। তিনি বলেন এই সম্প্রসারণের হার এতটাই নিয়ন্ত্রিত, যেখানে ভুলের সম্ভবনা ১/১০^৫৫ । এত সূক্ষ্ম এবং সুনিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থা বা প্রক্রিয়া কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা হতে পাওয়া অসম্ভব। বিগ ব্যাং যদি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা হতো তবে এই প্রক্রিয়া এতটা সঠিক এবং উপযুক্ত ভাবে চলতে পারত না। তাই বলা যায় এটি অবশ্যই একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া যা মহান আল্লাহতায়ালা নিয়ন্ত্রন করছেন।
নাস্তিক হওয়া স্বত্বেও পল ডেভিস একথা বলেন , “It is hard to resist that the present structure of the universe, apparently so sensitive to minor alterations in the numbers, has been rather carefully thought out… The seemingly miraculous concurrence of numerical values that nature has assigned to her fundamental constants must remain the most compelling evidence for an element of cosmic design”
বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রাপ্ত এসব তথ্য পল ডেভিস কে বলতে বাধ্য করে যে এই মহাবিশ্ব একটি মহাপরিকল্পনার ফসল। অন্যকথায় এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনার ফল নয়।
এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে “যারা (নবীর কথা মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা কি চিন্তা করে না যে, এসব আকাশ ও পৃথিবী এক সাথে মিশে ছিল, তারপর আমি তাদেরকে আলাদা করলাম এবং পানি থেকে সৃষ্টি করলাম প্রত্যেকটি প্রাণীকে। তারা কি (আমার এ সৃষ্টি ক্ষমতাকে) মানে না?”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:৫২