মুসলিম শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম খন্ড, সতেরো পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ হাদীসের কিতাব সমূহকে মোটামুটি ভাবে পাঁচটি স্তর বা তাবাকায় ভাগ করা হয়েছে। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দীস দেহলবী (রঃ) ও তাঁর ’হজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’ নামক কিতাব এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন।
প্রথম স্তর ঃ এ স্তরের কিতাব সমূহকে কেবল সহীহ হাদীসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটি ঃ “বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মুআত্তা ইমাম মালিক”
দ্বিতীয় স্তরঃ এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারণতঃ সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। যইফ হাদীস এতে খুব কমই আছে। নাসাই শরীফ, আবু দাউদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরেরই কিতাব। সুনানে দারিমী, সুনানে ইবনে মাজা এবং শাহ ওয়ালী উল্লাহ এর মতে মুসনাদ ইবনে আহমদকেও এ স্তরের শামিল করা যেতে পারে।
তৃতীয় স্তরঃ এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ ও মুনকার সকল রকমের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়ালা, মুসনাদ আবদুর রাজ্জাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবরানী (রঃ)-এর কিতাব সমূহ এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যতীত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা যেতে পারে না।
চতুর্থ স্তরঃ এ স্তরের কিতাব সমূহে সাধারণতঃ যঈফ ও গ্রহনের অযোগ্য হাদীসই রয়েছে। ইবনে হিব্বানের কিতাবুল-জুআফা, ইবন-আছীরের কামিল ও খাতীব বাগদাদী, আবু নুআয়েমের কিতাব সমূহ এ স্তরের কিতাব।
পঞ্চম স্তরঃ উপরি উক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতারই এ স্তরের কিতাব। হানাফী মাযহাবের ’মকছদুল মু’মেনিন’ সহ প্রায় আশি খানা কেতাব এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
আমার লেখার উদ্দেশ্য হল; সাধারণত মসজিদের হুজুররা আমাদের বোকা বানিয়ে বিভিন্ন যঈফ হাদীদ বর্ননা করে থাকেন এবং শুক্রবার জু’মার নামাযে বসে বসে যে বয়ান দেন তাহাতে রেফারেন্স ছাড়া শুধুই বলেন ‘এক হাদীসে আছে’ এই জাতীয় কথা। আমরা অন্ধের মত মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি এবং তার কথাকে দলীল বলে মেনে নিয়ে সত্যের সাথে তর্ক করি। কেউ সহীহ হাদীস নিয়ে সামনে এলেও বলিঃ “আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেব কি আপনার থেকে কম জানেন? যান তার সাথে গিয়ে কথা বলেন”
আমার লেখা তাদের জন্য যারা সত্যকে জানতে ভয় পায় না। কেহ যদি সত্যিকারের নবীর উম্মাত দাবী করে থাকেন তাহলে তাকে অবশ্যই তার রেখে যাওয়া বিধানই মানতে হবে। কিন্তু কথা হল এই বিধান আমরা কিভাবে জানব, কার কাছ থেকে শুনব? উত্তরে বলছিঃ আপনি যদি শিতি হয়ে থাকেন তাহলে শোনা কথায় কান না দিয়ে আল কোরআন এবং প্রথম স্তরের হাদীদ গুলো মৃত্যুর আগে হলেও একবারের জন্য পড়ে যান।
একটা উদাহরন দেই আমাদের সমাজের আলেমদের জ্ঞান গরিমার মাধুর্য দেখেঃ টিভিতে অনুষ্ঠান চলছে কয়েকজন বিশিষ্ট হুজুর নিয়ে। বিষয় হলো নবী কিসের তৈরী? মাটি না নূর?
হুজুরদের বক্তব্যঃ আমাদের মহান নবী যার সংগে মানুষের কোন তুলনা হয় না তিনি নাকি মাটির তৈরী ! নাউযুবিল্লাহ !! উনি হলেন নূরের তৈরী এক শ্রেণীর মানুষ নবীকে আমাদের সমক করার চেষ্টা করছে, এদের পরকালে স্থান হবে জাহান্নামে। আব্দুল্লাহ মা-আমীনার কপালে চুমু খান এবং তা হতেই নবীর জন্ম, কোনরূপ প্রসাব বেদনা ছাড়াই নবী এই পৃথিবীতে এসেছেন। উনি যদি মাটির তৈরী হতেন তাহলে এমনটা কি হত ? এর সাপেে আরো অনের যুক্তি হুজুররা দেখিয়েছেন।
যারা কোনদিন কোরআন পড়েনি তারা এই অনুষ্ঠান দেখলে কি ভাবে বিষয়টা মেনে নিবে বলুন। এসব হুজুররা আল্লাহর দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে ফেলছে বিনা দ্বিধায়।
আপনারা যদি ভাল করে কোরআন পড়ে থাকেন তাহলে সেখনে দেখতে পাবেন, মহান আল্লাহ ত’আলা তাঁর পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলেছেনঃ
তোমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরাঃ আম্বিয়া- ২১ ঃ ৩)
আপনি বলে দিন, আমিতো তোমাদের মত একজন মানূষ। আমার নিকট ওহী করা হচ্ছে যে, তোমাদের মা’বুদ, এক মা’বুদ। (হা মিম আস সাজদা- ৪১ ঃ ৬)
ইনি তোমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা যা থেকে খাও তিনিও তা খেতে খান। আর তোমরা যা থেকে পান কর তিনিও তা থেকে পান করেন। (মোমেনুন- ২৩ ঃ৩৩)
এবার আপনারা আল্লাহর বাণীর সাথে হুজুরদের টিভি অনুষ্ঠান মিলিয়ে দেখতে পারেন। যদি তাদের কথা মানেন তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করলেন আর যদি না মানেন তাহলে হুজুরদের কি শাস্তি দিবেন ?
জানতে চাই।