বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে যে বিশাল সমাবেশ চলছে- সে সম্পর্কে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি এ ম্যাগাজিনের শনিবারের (১৬ ফেব্রুয়ারি) সংখ্যায় প্রকাশিত হবে। তবে প্রিন্ট ভার্ষণে প্রকাশিত হওয়ার আগেই প্রতিবেদনটি ইকোনমিস্টের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
“বাংলাদেশে গত অন্তত দুই দশকে এত বড় বিক্ষোভ সমাবেশ আর কেউ কখনো দেখেনি। আব্দুল কাদের মোল্লা নামের একজন দাড়িওয়ালা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ফাঁসির দাবিতে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ সমবেত কণ্ঠে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে: জনতা এ কারণে ফুঁসে উঠেছে যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরও কাদের মোল্লাকে শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইন কর্মীদের পক্ষ থেকে ঢাকার মধ্যাঞ্চলীয় ব্যস্ত চৌরাস্তা শাহবাগে বিক্ষোভের ডাক দেয়ার পর থেকে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। তারা কাদের মোল্লাসহ এ মামলার অন্য সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তিনি (মোল্লা) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার স্থানীয়ভাবে এ আদালত স্থাপন করেছে। (কিন্তু) যখন অপ্রত্যাশিতভাবে কাদের মোল্লা মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেছেন তখন তাকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। সেই দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি হয়তো জনরোষকে উস্কে দিয়েছে।
শাহবাগ এখন বিক্ষোভকারীদের অবস্থানস্থলে পরিণত হয়েছে, কেউ কেউ একে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল কিংবা 'প্রজন্ম চত্বর' বলেও অভিহিত করছেন। ফাঁসির দাবিতে নবজাতকসহ অনেক পরিবারের সব সদস্য অংশগ্রহণ করছেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ব্যাপক সম্প্রচারের কারণে সেখানে জনতার ভিড় উপচে পড়ছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হয়তো সেখানে পাঁচ লাখ লোক সমবেত হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দেরিতে হলেও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি পার্লামেন্টে (কাদের মোল্লার) ফাঁসির দাবিতে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরপেক্ষ বিচারকদের উচিত জনতার দাবিকে বিবেচনায় নেয়া। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্ট এমন একটি সংশোধনী পাস করতে যাচ্ছে যাতে সরকার ওই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। মিস্টার মোল্লার সময় হয়তো ঘনিয়ে এসেছে।
এদিকে বিএনপি পড়েছে মহা ফাঁপড়ে। শাহবাগের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে তারা আট দিন পর। এ ছাড়া, যে দলটির বেশিরভাগ নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার কারণে বিএনপির অবস্থা হয়ে পড়েছে আরো শোচনীয়। সেইসঙ্গে দলটির এতবেশি সমর্থক শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এতে অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প বিএনপি'র ছিল না।
সেক্যুলার সরকারের সমর্থনে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাদের বিক্ষোভ ইসলামকে রাজনীতিকীকরণের বিপক্ষে, তারা চান জামায়াত নিষিদ্ধ হোক। জামায়াতের উগ্র ছাত্র সংগঠনের সহিংস কর্মকাণ্ড ওই দাবির আবেদন এতটুকু কমাতে পারেনি। ১৯৭২ সালের সেক্যুলার সংবিধান বাস্তবায়নকারী সরকার হয়তো শিগগিরই জনতার আহ্বানে (জামায়াত নিষিদ্ধ করার) সাড়া দেবে।" সূত্র: আইআরআইবি
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪