somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোলরিজের বিখ্যাত কবিতা: বুড়ো নাবিকের গান (প্রথমাংশ-অনুবাদ)

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূমিকাঃ ইংরেজ রোমান্টিক কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ তাঁর এই কবিতা “দ্যা রাইম অব দ্যা এইনশানট মেরিনার” এর জন্য সুবিখ্যাত। কবিতাটা মূলত কাহিনী নির্ভর। প্রশান্ত মহাসাগরে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে, অদ্ভুত সব ঘটনা আর এডবেঞ্চারের পর কিভাবে এক বৃদ্ধ নাবিক দেশে ফিরে আসে সেই লোমহর্ষক কাহিনী বুড়ো লোকটি মানুষকে ধরে বসিয়ে শোনায়। একবার, দুইবার, বারবার। কবিতাটা শুরু হয় একটা বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে। কবিতার কাহিনী সিনেমার মতই মাঝে মাঝে বিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। আবার মূল কাহিনীতে ফিরে যায়। কবিতাটার সাতটি অংশ। একটু দীর্ঘ হলেও কবিতাটা পড়তে গিয়ে ক্লান্তি আসেনা। মূল কবিতা অন্তমিলে লেখা হলেও অনূদিত কবিতায় কোন ছন্দমিল নেই।

-------------------------------

ইনি হলেন একজন বৃদ্ধ নাবিক,
এবং তিনি প্রতি তিনজনে একজনকে ডেকে দাড় করান,
হে নাবিক, তোমার দীর্ঘ ধূসর দাড়ি আর চকচকে চক্ষু,
এখন আমার পথ কেন আগলে দাঁড়িয়েছ?

বরের ঘরের দরজা গুলো হাট খোলা,
এবং আমিই পরবর্তী কুটুম,
নিমন্ত্রিতরা জড়ো হয়েছে, ভোজন পর্ব শুরুঃ
হয়তো এখন কানে আসবে উচ্ছ্বাসের আওয়াজ।

লোকটাকে আঁকড়ে ধরল হাড্ডিসার হাতে,
“একদা একটা জাহাজ ছিল”, বলল সে।
“ছাড়ো!” ছেড়ে দাও আমায়, দাড়িওয়ালা বুড়ো পাগল!
দ্রুত তাঁর হাতটা ছেড়ে দিল সে।

এখন সে হাতে নয় তাঁকে আটকে রেখেছে তাঁর চকচকে চক্ষু দ্বারা —
বিয়ের-অথিতি লোকটা থমকে দাঁড়িয়েছিল,
এবং সে শুনে যাচ্ছে ঠিক তিন বছরের বাচ্চার মতইঃ
নাবিকের গল্প বলার ইচ্ছাটাও তীব্র।

অথিতি লোকটা বসে পড়ল একটা পাথরের উপরঃ
এখন গল্প শোনা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাঁর;
অতঃপর সে কথা ছুড়ল বৃদ্ধটার উপর,
সেই উজ্জ্বল চক্ষুর বৃদ্ধ নাবিকটা।

‘হর্ষধ্বনিতে ভরে উঠেছিল জাহাজটা, খালি করা হয়েছিল বন্দরটা,
উচ্ছ্বসিত আমরা ধীরে চলতে শুরু করলাম
গির্জার নিচ দিয়ে, পর্বতের নিচ দিয়ে,
উঁচু ঐ বাতিঘরটার নিচ দিয়ে।

সূর্যটা উদিত হল বাঁ দিকটায়,
যেন সে সমুদ্রের নিচ থেকে ভেসে উঠল!
এবং সে ছড়িয়ে দিল তাঁর উজ্জ্বল আলো, ডান দিকটায়,
তারপর আবার ডুব দিল সমুদ্রে।

উঁচুতে, আরও উঁচুতে প্রতিটা দিন,
ঠিক অপরাহ্ণে ঐ মাস্তুলের মাথা পর্যন্ত —’
এখানে এসে অথিতি লোকটা বুকে চাপড় মারল,
বিয়ে বাড়ির বাদ্য যন্ত্রের প্রবল আওয়াজ শুনে।

নববধূকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হল ঘরটায়,
তাঁকে গোলাপের মতই রাঙ্গা দেখাচ্ছিল;
বিয়ের গায়করা গান গেয়ে, মাথা নেড়ে
অভিবাদন জানাচ্ছিল তাঁকে।

অথিতি লোকটা বুকে চাপড় মারল,
এখনো তাঁর গল্প শোনা ছাড়া আর কোন উপায় নেই,
অতঃপর সে কথা ছুড়ল বৃদ্ধটার উপর,
সেই উজ্জ্বল চক্ষুর বৃদ্ধ নাবিকটা।

এবং এখন ঝড়ের ঝাপটা আসলো, আর সে ছিল
বড় নিষ্ঠুর আর শক্তিশালীঃ
সে আঘাত হানলো তাঁর প্রশস্ত পাখা গুলো দিয়ে,
আমাদেরকে তাবড়ে পাঠালো দক্ষিণে।

ঢলে পড়া মাস্তুল, ডুবে যাওয়া গলুই,
যেন কেউ খুঁজেছিল চিৎকার করে আর ক্ষিপ্রতায়
এখনো পদদলিত করছে তাঁর শত্রুর ছায়াটাকে,
আর সামনে ঝুঁকে আছে তাঁর মাথা,
জাহাজটা যত দ্রুততর হচ্ছিল, ঝড়টাও তত গর্জে উঠছিল,
আমরা পলায়ন করলাম দক্ষিণাভিমুখে।

এবং এখন আসলো তুষার আর কুয়াশা উভয়ে,
আমরা ডুবে গেলাম বিস্ময়কর ঠাণ্ডায়ঃ
মাস্তুল সম উঁচু বরফ ধেয়ে আসছিল,
সবুজ, পান্নার মতই সবুজ।
এবং বাতাসের ঘূর্ণিপাকে বরফ কণা গুলি
অন্ধকারে পাঠালো এক আলোর ঝলকানি,
না মানুষ, না পশু, কোন আকৃতিই দৃষ্টিসীমায় ধরা দিচ্ছিল না,
যা দেখা যাচ্ছিল, শুধুই বরফ।

বরফ ছিল এখানে, ওখানে, সেখানে,
বরফ ছিল সবখানেঃ
ঝড়টা ভেঙ্গে চুরমার করছিল আর চিৎকার করছিল, গর্জে উঠছিল আর উচ্চস্বরে কেঁদে উঠছিল,
যেন মূর্ছা যাওয়ার তীক্ষ্ণ আওয়াজ।

কিছুদূরেই একটা অ্যালবাট্রস পাশ কাটিয়ে গেল,
কুয়াশা ভেদ করেই এটা এসেছিল,
যেন এটা ছিল একটা ধর্মীয় আত্মা
আমরা এটাকেই প্রণাম করতে লাগলাম ঈশ্বরের নামে।

পাখিটা খাবার খেল, যে খাবার সে জীবনে কোনদিন খায়নি,
এটা ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগল,
বজ্রাঘাতে বরফ গুলো হয়েছিল চূর্ণবিচূর্ণ,
জাহাজ চালক এইসবের ভিতর দিয়েই আমাদের নিয়ে চলল।

তারপর একটা সুন্দর দখিনা হাওয়া বয়ে চলল আমাদের পেছনে;
পাখিটাও পিছু নিয়েছিল আমাদের,
প্রতিদিন খাবারের জন্যে অথবা খেলার জন্যে
এটা চলে আসত নাবিকের কামরায়!

কুয়াশায় অথবা মেঘে, মাস্তুলে অথবা রজগুচ্ছে,
পাখিটা বিশ্রাম নিত সান্ধ্য উপাসনার জন্যে,
সারা রাত্রি, শুভ্র কুয়াশার ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে
শুভ্র চাঁদটি মিটি মিটি জ্বলত।

‘ঈশ্বর তোমাকে নিরাপদে রাখুক, হে বৃদ্ধ নাবিক,
অশুভ আত্মা থেকে, মহামারি রোগবালাই থেকে!—
তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’— আমার হাতের ধনুকটা দিয়ে
আমি তীর বিদ্ধ করলাম অ্যালবাট্রসকে।
---
প্রথম অংশের সমাপ্তি। চলবে...

তর্জমা
১৫/০৩/২০১৬
মূলঃ দ্যা রাইম অব দ্যা এইনশানট মেরিনার — স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×