২০০৮ এ আমি খুব বেশী বই পড়ি নাই। তার মধ্যেও কি কি পড়েছি বেশীর ভাগই মনে নাই। আমার স্বভাব হলো একবার লাইব্রেরীতে গেলে যে বইয়ের মলাট দেখতে ভালো লাগে সব ধরে নিয়ে আসি। I was always one to judge a book by it's cover. একগাদা বই নিয়ে নাড়তে চাড়তে অনেক ভালো লাগে। পড়ি হয়তো এখান থেকে একটু, সেখান থেকে আরেকটু আর তারপর না পড়া অবস্থাতেই বেশীর ভাগ ফেরত দিতে হয়।
কোন কোন বই শুধু নামের জন্যই পড়তে আগ্রহ হয়েছে। আর কিছু কিছু নামের কারণে পড়তে দেরী করেছি। The White Tiger দেরী করাদের দলে। আমি সাধারণত ম্যান বুকার প্রাইজের ওয়েব সাইটটা দেখি প্রায়ই। এখন তো শুরু থেকেই ধারা বিবরণী চলতে থাকে, আবার প্রতি বছর জাজরা ব্লগও লিখেন। ওইভাবে অনেক বইয়ের নামও জানা যায়। এর নামও জেনেছি আগেই অনেক । কিন্তু ভেবেছিলাম, বাঘ ভাল্লুক নিয়ে বই এখনই পড়বোনা। শেষমেষ যখন লঙ লিস্টে চলে এলো, ভাবলাম দেখি।
অনেকদিন পর আমি সারারাত ধরে এই বইটা পড়েছি। এবং শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার শুরু করেছি। প্রথম লাইন পড়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম আর সেটা ধাপে ধাপে বেড়েছে - Neither you nor I speak English, but somethings can be said only in English. এই ছিল প্রথম বাক্য।
বইটাতে এক ড্রাইভার যে পরবর্তীতে একটা ট্যাক্সি কোম্পানির মালিক হয়েছে, চিঠি লিখছে চায়নার প্রিমিয়ার ওয়েন জিয়াবাও কে। সাত রাত ধরে সাতটা চিঠিই হলো বইটা। সবাইকে ছেড়ে হঠাৎ জিয়াবাও কে চিঠি কেন? কারণ খবরের কাগজে এসেছিল চৈনিক প্রিমিয়ার ভারতে আসছেন Entrepreneurship সম্পর্কে জানতে আর বইয়ের Protagonist এর মনে হয়েছে এ সম্পর্কে কেউ যদি কিছু জেনে থাকে তাহলে সে নিজে।
চিঠিগুলির মাধ্যমেই সে তার জীবনের কথা বলে। বাবা ছিল রিকসাওয়ালা, ভাই একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। তারও এরকম একটা গন্ডীতেই থাকার কথা ছিল কিন্তু সবকিছুর পর সে একটা বিশাল ঝাড়বাতিওয়ালা অফিস ঘরে টেবিলের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে জিয়াবাওকে চিঠির লেখার কথা ভাবছে - তার এই সফর নিয়েই গল্পটা।
বেশী কিছু বলে দেবনা। তাহলে কেউ যদি পড়তে চান সেই রকম ভাবে অবাক হবেন না। কিন্তু কিছু কিছু ডায়ালগ একদম মনে গেঁথে যাওয়ার মতন, যেমন এক জায়গায় আছে -
Like eunuches discussing the kamasutra, voters discuss the elections in Laxmangarh.
এরকম আরো অনেক খুব অন্যরকম বাক্য আছে। আরেকটা খুব মনে করার চেষ্টা করছি, মনে পড়ছেনা। যাই হোক নিজেরাই পড়ে নিয়েন। বলতে পারি যে একই সাথে এমন হাসির. দুঃখের এবং রাগের বই আমি আর পড়ি নাই।
পুনশ্চ ১: White Tiger কয়েক পুরুষে একবার জন্ম নেয়। অনেকটা লেজেন্ড এর মতোন। এই জন্যই বলরাম হালুইকর (protagonist) নিজের এই নাম দিয়েছিল।
পুনশ্চ ২: অরবিন্দ আদিগার কিছু সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। এক জায়গায় বলেছেন। এই বইটা নাকি অনেক আগে একদম অন্য একটা স্টাইলে লেখা ছিল। এবং তার মনে হয়েছিল এই পান্ডুলিপি দিয়ে কিছুই হবেনা। তাই ফেলে রাখা ছিল। অনেক বছর পরে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারত ফিরে এক দেড় মাসের মত সময় তার হাতে কোন কাজ ছিল না। ওই সময়টুকুতে বইটা আবার লিখেছেন
পুনশ্চ ৩: বুকার জেতার পরে আদিগাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল 'টাকাটা দিয়ে কি করবেন?" তাঁর জবাব ছিল 'প্রথমে একটা ব্যঙ্ক খুঁজে বের করে টাকাটা জমা দিব!'
পুনশ্চ ৪: আদিগার জন্মদিন অক্টোবারের ২৩ তারিখ, আর আমার জন্মদিন অক্টোবারের ২৪, আমি তাই মহা খুশী হইছি।
পুনশ্চ ৫: পুনশ্চ লেখার এই কায়দা আমি অনাহুত আগন্তুকের থেকে নকল করেছি।