রাতে ভালো ঘুম হলে মনে হয় চেহারায় সুখী সুখী ভাব চলে আসে। অনেকদিন পর কাল টানা ৯ ঘন্টা ঘুমালাম। আরও পারতাম যদি অফিসে না আসতে হতো। আসার পথে বাসে ড্রাইভারের ঠিক পিছনের সিটে বসলাম। সামনে একটা সেপারেটর, ড্রাইভারের সাথে বাসযাত্রীদের। তার আবার কিছুটা কাঁচের। সেইখানে নিজের চেহারার প্রতিফলন দেখছিলাম, পাশ থেকে সূর্যের আলো পড়ছিল। ভালই। আশেপাশে লোকজন না থাকলে নিজের দিকে তাকিয়ে হাসা যেতো। কি আর করা, এইভাবে দেখলাম যেন দেখলাম না।
বাসস্টপে সব সময় এক মোটামুটি বুড়ি বলা যায় এমন একজনের সাথে কথা হয়। তাকে আমার বেশ ভালোই লাগে। সবসময় কাশে যদিও। চেইন স্মোকার মনে হয়। বৃটিশ মহিলা, তবে নিউজিল্যন্ডে আছে অনেকদিন। আগে একটা স্কুলে মাস্টারী করতো। রিটায়ার করার পরে এখন অকল্যান্ড সিটি কাউন্সিলে কাজ করছে। তার এক মেয়ে আছে engineer আর মেয়েরও মেয়ে আছে একটা। এইসব বাসস্টপের পরিচয়ের মজার একটা ব্যপার আছে । অনেককিছু জানা হয়, অনেক কথা হয় কিন্তু নাম জানা হয় না। সাধারণত অন্য আর যে কোন পরিস্থিতিতে কারো সাথে কথা বলতে গেলে প্রথমেই পরিচয় দেয়া হয়। এখানেই আলাদা শুধু। কথা হয় বাস আসা পর্যন্ত, তারপর কোন ভবিষ্যতে দেখা হওয়ার পরিকল্পনা ছাড়াই বিদায়। পরের দিন দেখা হবে কিনা কে জানে। হয়ও না অনেক সময়।
যেমন একটা মেয়েকে আমি এখনো অনেক খুঁজি। আমার আগের অফিসের সামনের বাস স্টপে দেখা হতো। ভারতীয়। মনে হয় আর্কিটেক্ট ছিল। সাথে সবসময় বিশাল এক ছবির ক্যানভাস নিয়ে ঘুরতো আর দেখতে কেমন উদাস উদাস। আবার স্বাস্থ্য সচেতন। অন্যদের দেখতাম, চিপস- চকোলেট খাচ্ছে দাঁড়িয়ে, এই মেয়ে খাইতো carrot sticks।
একদিন তার সাথে তুমুল আলাপ হলো বাসে বসে। হিন্দি সিনামা নিয়ে । আমি তখন swades দেখেছি। শুনেছি যে ইন্ডিয়াতে ফ্লপ। আমার তবু অনেক ভালো লাগছে। দেখলাম যে ওরও খুব প্রিয় ছবি। কথায় কথায় ওর নাম জানা হয়ে গিয়েছিল, এটাও exception বাসস্টপ নিয়মের। নাম হলো প্রগতি! আগে কোনদিন এইরকম নাম শুনিনাই। তার বাবা মা মনে হয় ইন্টারেষ্টিং আছে ভালোই। সেইদিনই প্রথম আর শেষ আলাপ। এরপর একবছরেরও বেশী সময় কোন দেখা নাই!
কি আর করা কত কাউকে না দেখেই দিন পার করে দিতেছি! এবার অফিসের কাজ করি একটু, কে জানে আজ কেমন যাবে। এ পর্যন্ত তো ভালোই।