somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিটেকটিভ গল্প: ওয়াইম্যাক্স - পর্ব ৮, ৯

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব:
পর্ব ১, ২ (Click This Link)
পর্ব ৩, ৪ (Click This Link)
পর্ব ৫, ৬(Click This Link)
পর্ব ৭(Click This Link)


৮.
সপ্তপুরী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট থানা থেকে হেঁটে দশ মিনিটও হবেনা। অথচ এই অল্প সময়টুকুতেই হাসনাইনের মাথার ভেতরে রীতিমতো যুদ্ধ চলতে থাকে, পুরো ঘটনার চর্বিত চর্বন তাকে অস্থির করে ফেলে যেন। নিজের অনুমানগুলোর সূতো ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে একটার সাথে আরেকটি মেলানোর চেষ্টায় রত হাসনাইনকে দেখে হঠাৎ অন্য কোন মানুষ বলে ভ্রম হয় হয় রাজুর। যদিও তোজাম্মেল ছাড়া পাবার পর পুরো কেইসটি প্রায় জিরোপয়েন্টে ফিরে আসে এবং সেখান থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখে একটি ভৌতিক ব্যাখ্যায় রূপ নিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিলো, তবুও হাসনাইনের কাছে কেইসটি কিন্তু কখনোই একেবারে শূণ্যে ফিরে যায়নি। বরং খুনী বা খুনীচক্র সম্পর্কে একটি খুব নিশ্চিত সিদ্ধান্তে সে পোঁছাতে পেরেছিলো, যেটা হলো, 'অপরাধীরা অত্যাধুনিক টেকনোলজীর বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে খুব ভালোভাবে পরিচিত'। কারণ, বাংলাদেশে যা তা ধরনের অপরাধীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নকল আইপি ফোন নাম্বার তৈরী করে দেশী মোবাইল নেটওয়ার্কে ফোন করতে যে পারবেনা -- এব্যাপারে সে নিশ্চিত।

হাসনাইনের ভাবনাটা ছিলো এরকম -- খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেলের দাবী করা চাঁদাবাজদের অস্তিত্ব যদি সত্যিই থেকে থাকে, এবং সে চাঁদাবাজরাই যদি খুন করে থাকে ভদ্রমহিলাদ্বয়কে, তাহলে এটা নিশ্চিত যে অপরাধীরা আই টি টেকনোলজীর সাথে আপডেটেড। আর যদি চাঁদাবাজদের কাহিনীটি খন্দকার-মোজাম্মেল চক্রের বানানো কোন ঘটনা হয়, তাহলে যা বুঝতে হবে তা হলো, খন্দকার-মোজাম্মেল চক্র নিজেরাই টেকনোলজীর সাথে আপডেটেড। কারণ খন্দকারের মোবাইলে আসলেই এমন সব নাম্বার পাওয়া গেছে যেগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তাই চাঁদাবাজরা বাস্তবে থাকুক আর না থাকুক, অপরাধী যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে কোন বাঁধা থাকার কথা না। এই সিদ্ধান্ত থেকেই খুনের ঘটনার কুশীলবদের মাঝ থেকে হাসনাইন মনে মনে খুঁজছিলো সেই লোকটিকে যে হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি ও সমমানের টেকনোলজীর সাথে খুব বেশী আপডেটেড।

কুশীলবদের সবাইকে তাই এক এক করে ব্যবচ্ছেদ করে চলেছে গত দেড়মাস ধরে, শহরের চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ব্যুৎপত্তির ওপর তথ্য সংগ্রহ করেছে, মামলার ফাইলপত্র বারবার ঘেঁটে দেখেছে, কোন ক্লু বের হয় কিনা তা দেখার জন্য। কোন ক্লু না পেয়ে হাল ছেড়ে দেবার মতোই যখন অবস্থা, তখনই ভেসে উঠলো ছোট্ট সেই কাগজের টুকরো, যেটি পকেটে পুরে রাজুকে নিয়ে এক কাপ চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করার জন্য সে এখন সপ্তপুরী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের পথে। গত কয়েকসপ্তাহ ধরে কিছু একটা খুঁজছিলো সে মনে মনে, কিন্তু বুঝতেও পারছিলোনা যে আসলেই সে কি খুঁজছে। সেই জিনিসটি এভাবে নিজে নিজেই ধরা দেয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে করতেই হঠাৎ মামলাটির সমাধানের ব্যাপারে সে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

রাজুকে নিয়ে সপ্তপুরীতে ঢুকতে দেখা যায় সেই আত্মবিশ্বাসী (যদিও চিন্তামগ্ন) হাসনাইনকে। সপ্তপুরী নামটিতে বেশ কাব্যিক বা সাহিত্যিক আমেজ থাকলেও, মূল নামকরণের পেছনে সেরকম কোন ইতিহাস নেই। স্রেফ সাত ধরনের স্বাদের পুরী তৈরী হয় এখানে, আর সেখান থেকেই এই নামকরণ। কাউন্টারে দাঁড়িয়ে গোটা দশেক পুরী আর দুই মগ চা অর্ডার করে বিল না দিয়েই টেবিলে চলে আসে হাসনাইন, ল্যাপটপ খুলে বসে, কিছুক্ষণ পর বয়কে ডেকে বিরক্তকন্ঠে বলে, 'তোমাদের রেস্টুরেন্টগুলোতে ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করা যায়না?'

'যাইবো, আগামী মাস থেকা যাইবো।' হেঁয়ালী উত্তর বয়ের।

'ঐ ব্যাটা, ওয়াইম্যাক্স কি বুঝস?' বলতে ইচ্ছে হয় হাসনাইন, বলেনা, পাছে ছেলেটি আবার বলে বসে, 'আমি না বুঝলে আমারে জিগান ক্যা?'। বিনিময়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি ফেরত দেয় হাসনাইন।

ছেলেটি কি বুঝে কে জানে, টেবিলে রাখা অন্ততঃ সাত-আটটা পানির গ্লাস মুহূর্তের মধ্যে একহাতে চমৎকার কায়দায় সরিয়ে নিয়ে বলে, 'স্যার দাঁড়ান, ফিল্টার করা ঠান্ডা পানি আনতাছি।'

হাসনাইনের বিল না দিয়ে চলে যাওয়ার আচরণে খানিকটা বিরক্ত হয় রাজু, মাস-শেষের এই টানাটানির সময়েও পঞ্চাশ টাকার বিল তাকেই মেটাতে হয় এবারের মতো। 'যত ছোটখাটো আহারপর্বই হোক, খেতে ডেকে এনে বিল দিলেননা হাসনাইন ভাই, এটা কেমন আচরণ হলো' ভাবতে বাধ্য হয় রাজু। তবে সাথে সাথে এটাও চিন্তা করে, যেরকম এক রহস্যময় মামলা নিয়ে বেচারা হাসনাইন ভাই উঠে পড়ে লেগেছেন, তাতে বেশ স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যে তিনি যাচ্ছেন তা তো বলাবাহুল্য। হয়তো খাবার অর্ডার দেয়ার পর বিল নামক একবস্তু দিতে হয়, সেটাই তাঁর মাথায় নেই। তারপরও টেবিলে এসে হাসনাইনকে একটু খোঁচা দেবার জন্যই তার চোখের সামনে বিলের রিসিপ্টটি মেলে ধরে রাজু, বলে, "দেখেন সামান্য নাস্তায়ও এখন পঞ্চাশ টাকা লাগে"।

'হুমম, বেশী তো না', বলে নির্বিকারভাবে রিসিপ্টের কাগজটি হাতে নেয় হাসনাইন; ছোট্ট একটা কাগজ -- ছাপার অক্ষরে সুন্দর করে কেনাকাটার যাবতীয় তথ্য তাতে সাঁটা; কি কি কেনা হয়েছে, কত টাকা জমা নেয়া হয়েছে, কত ফেরত দেয়া হয়েছে -- সব। একটু উপরের দিকে তারিখও লেখা আছে।
কৌতুহলী চোখে রাজুকে জিজ্ঞেস করে হাসনাইন, "আচ্ছা, রাজু, এই যে কোন কিছু কিনলে আমরা একটা রিসিপ্ট পাই, সেটাতে যে কেনাকাটার দিনতারিখ, সময় এসব লেখা থাকে তা কি তুমি খেয়াল করেছ কখনও?"

"জানি যে লেখা থাকে, তবে কে খেয়াল করে বলেন? এত পিচ্চি একটা কাগজ! আমার তো মনে হয় অধিকাংশ মানুষ এটা জানেও না যে রিসিপ্টের মধ্যে কেনাকাটার তারিখ বা সময়কাল লেখা থাকে।"

"ঠিক, যেমন এই সপ্তপুরী হোটেলের রিসিপ্টে তারিখ লেখা থাকলেও, ক'টার সময় কেনাকাটা হয়েছে সেটা লেখা নেই। এখানে ওয়াইম্যাক্সও ব্যবহার করা যায়না।"

রাজু ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা হাসনাইন কেন হঠাৎ রিসিপ্ট নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, আর ওয়াইম্যাক্স দিয়েইবা উনি এই দশ মিনিট এখানে কি করবে! যদিও হাসনাইনের কথায় কথায় ওয়াইম্যাক্সকে টেনে আনার অভ্যাসের সাথে সে ইতোমধ্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

হঠাৎরাজুকে চমকে দিয়ে বুকপকেট থেকে ভিনাইল প্যাকেটের ভেতর জব্দ করা একটি কাগজের টুকরো বের করে আনে হাসনাইন, রাজুর সামনে টেবিলের ওপর রেখে বলে, "কিন্তু দেখো মিঃ রাজু আহাম্মেদ, এই রিসিপ্টে, এটা অরিয়ন ক্লাবের লাউঞ্জক্যাফের রিসিপ্ট, নাম রেইবো, এ্যান্ড ইউ সি, এতে কিন্তু সময়ও উল্লেখ করা আছে।"

"হুমম, তাইতো দেখা যাচ্ছে", রাজু আর কথোপকথনে আগ্রহ পায়না।

"এখন আমাকে বলো", হাসনাইন রীতিমতো উত্তেজিত, "কেউ যদি তার এ্যালিবাই হিসেবে এরকম একটি রিসিপ্টকে উপস্থাপন করে, তার সম্পর্কে আমরা কি ধারনা করতে পারি?"

"কত কিছুই তো ধারনা করা যায়! যেমন সে হয়তো ঐ রেস্টুরেন্টে আগে চাকুরী করতো, তাই রিসিপ্টে সময়ের উল্লেখের ব্যাপারটা সে জানে। অথবা গিয়ে দেখুন সেই হয়তো সফটওয়্যারটা বানিয়েছে।"

"সেটাই!" হাসনাইন লুফে নেয় রাজুর কথা, "সেই লোক সফটওয়্যারটা বানাক বা না বানাক, এটা বলা যায় যে এসব আইটি সিস্টেম বা তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে তার মোটামুটি জানাশোনা আছে, ঠিক?"

"হুমম, এটা ঠিক। কারণ আই.টি সম্পর্কে ভালো আইডিয়া না থাকলে এটা মাথায় আসার কথা না। যেমন আমি নিজেও এরকম সমস্যায় পড়লে এই রিসিপ্ট দেখিয়ে যে এ্যালিবাই দাঁড় করানো যায় তার কথা ভাবতে পারতামনা হয়তো।" রাজুর কথায় সমর্থনের সুর।

"তুমি কি জানো অরিয়ন ক্লাবের এই রিসিপ্টটা কার এ্যালিবাই?"

"না"

"এই তোমার সমস্যা! তুমি কেইসফাইল থরোলি পড়োনা! মোজাম্মেল, বুঝলে, মহান গোয়েন্দা মোজাম্মেলের এ্যালিবাই এটা।" হাসনাইন গলার স্বর নীচু করে আনে, বলে যায়, 'দুই মিসেস হত্যাকান্ডের আশপাশের কুশীলবদের মধ্যে এই একজনকেই আমার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী বা মোটামুটি জানে এমন মনে হচ্ছে।"

"কিন্তু স্যার, মোজাম্মেলকে নিয়েও তো সমস্যা তো সেই আঙুলের ছাপই! তারওপর সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছেন, আমি তো দিব্যচোখে দেখেছি, খুনীর উচ্চতা পাঁচফিট দশের কম না। সেখানে মোজাম্মেল তো পাঁচফিট চার বা বড়জোর পাঁচ হবে!"

"হ্যাঁ সেটা ঠিক। তারপরও! মোজাম্মেলকে আমি সন্দেহের বাইরে রাখছিনা। হতে পারে সে থার্ডপার্সন হিটম্যানকে মূল খুনের কাজে লাগিয়েছে। তবে কুশীলবদের মধ্যে আইটি বিষয়ে তাকেই যেহেতু আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী মনে হচ্ছে, তাই এখন থেকে আমাদের কাজ হবে মোজাম্মেলের ওপর চোখ রাখা। চলো অরিয়ন ক্লাবে চলো।"

"অরিয়ন ক্লাব?"

"হ্যাঁ, মোটামুটি প্রায় প্রতিদিনই মোজাম্মেল অরিয়ন ক্লাবে আসে, এখবর আমি পেয়েছি। এখন চলো আমার সাথে, আর এক মুহূর্তও দেরী করা যাবেনা!"


একরকম টেনেহিঁচড়ে রাজুকে নিয়ে চলে হাসনাইন, রিক্সায় করেই যায় তারা, এবং অবশ্যই সিভিল ড্রেসে; মিনিট চল্লিশের মধ্যেই পৌঁছে যায় অরিয়ন ক্লাবে। সরাসরি একতলার রেইনবো ক্যাফেতে গিয়ে আশেপাশে সতর্কভাবে চোখ বুলায় হাসনাইন; নাহ, কোথাও মোজাম্মেল বা দেখতে তার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। দিনটি ছিলো শুক্রবার, এদিনের সন্ধ্যায় ক্লাব সদস্যরা অনেকেই সপরিবারে ক্লাবে আড্ডা দিতে আসেন; সে হিসেবেই হয়তোবা, ক্যাফের যেদিকে চোখ যায় শুধু সুদর্শনা তরুণীদের ছড়াছড়ি। নানান ঢংয়ের সুন্দরীদের দেখতে দেখতেই একটি খালি দুইসীটের টেবিল পেয়ে বসে পড়ে হাসনাইন আর রাজু, চেয়ারে ব্যাগ রেখে দুজনই উঠে আসে কাউন্টারের দিকে। এসব ক্যাফেতে সপ্তপুরী টাইপের "হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে"র মতো বয় বা ওয়েইটার থাকেনা, কাউন্টার থেকে নিজেদেরই খাবার আনতে হয়। রাজু আর হাসনাইন একটি করে ম্যাঙ্গো জুসের অর্ডার দেয়, কাউন্টারের বিশ বছর বয়েসী ছেলে কামাল বেয়াদবের মতো করে বলে বসে, "স্যার আর কিছু নিবেননা? এখানে তো সবাই ড্রিংকসের সাথে কমবেশী খাবারটাবারও নেয়।"

রাজুর ইচ্ছে হয় কাউন্টারের ওপাশ থেকে ছোকড়াকে টেনে বের করে এনে চটাশ চটাশ দুটো থাপ্পড় লাগায়, তবুও কোনমতে রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে সে।

অবশ্য দমন করতে পারার আরো কারণ ছিলো; প্রথমতঃ আশি টাকার বিলটা এবার হাসনাইন ভাই দিয়েছেন, আর দ্বিতীয়ত ঠিক সেমুহূর্তেই কামালের দৃষ্টি অনুসরণ করে রাজু ডানদিকে কয়েকফুটের মতো দূরত্বে এক চপলা উচ্ছলা সুন্দরীর অবস্থান সম্পর্কে সতর্ক হয়ে পড়ে, যার সামনে কামালের মতো একটা সামান্য ছোকড়াকে পিটিয়ে 'ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ' না করাই ভাল বলে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় সে। বলাবাহুল্য, শুধু রাজুই নয়, ক্যাশের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কোনভাবেই নিজের দৃষ্টিকে সামলাতে না পারা কামালের চোখ অনুসরণ করার ফলাফল হিসেবে যুগপৎ হাসনাইনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলে সেই উদ্ভিন্নযৌবনা ঊর্বশী।

এ নারীর সৌন্দর্য্যের বর্ণনা হাসনাইনের মতো কাঠখোট্টা গোয়েন্দার পক্ষে দেয়া সম্ভবনা, এবং সে কারণেই গল্পের লেখকও সে বর্ণনার সাহস করছেননা এখানে। রবিঠাকুর বা নিদেনপক্ষে আহমদ ছফাকে এখানে লাগতো যথাযথ বর্ণনার জন্য। হাসনাইন শুধু এটুকু বলতে পারে যে আশপাশের আর চৌদ্দজনের চেয়ে এ নারীর সৌন্দর্য যে আলাদা একটি আবহ বা চার্ম তৈরী করেছিলো তার কারণ সম্ভবতঃ তরুণীর ঈর্ষণীয় উচ্চতা আর শরীরের অসামান্য বাঁকগুলো, বিশেষ করে যখন তিনি হাঁটেন, যেন রূপসাগরে ঢেউ ওঠে। এটুকু বোঝার পরই হাসনাইন মেঝের দিকে তাকিয়ে যা বোঝার বুঝে নেয়, উচ্চতা ও বাঁকের বিস্তৃতির রহস্য সমাধান হয়ে যায় নিমিষেই, দেখা যায় যে মেয়েটির পায়ের হিলের উচ্চতা নিদেনপক্ষে ছয়ইঞ্চি; যদিও পরবর্তীতে নানান সময়ে এ নারীকে নিয়ে সংঘটিত আলোচনা বা আড্ডায় রাজু সবসময়ই দাবী করেছে যে ঐ হিলের উচ্চতা আট ইঞ্চির চেয়ে এক মিলিমিটারও কম তো হবেইনা, এমনকি কেউ যদি দাবী করে ওটা একফুট হলেও হতে পারে, তার কথাকেও সে এমনি এমনি উড়িয়ে দেবেনা। তবে উচ্চতা যাই হোক, এই সুউচ্চ হিলই যে তরুণীর প্রতিটি পদক্ষেপে শরীরের বাঁকগুলোকে অনেক বেশী আকর্ষণীয় করে তুলছিলো সেটা হাসনাইনের সাথে সাথে রাজুরও বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি।

পুলিশের ডিটেকটিভ হোক আর যাই হোক, প্রথমতঃ তারা দুজনই মানুষ। অল্পসময়ের জন্য হলেও অরিয়ন ক্লাবে এসে মোজাম্মেলকে না পাওয়ার দুঃখ ঘোচে মূলতঃ ঊর্বশী-দর্শনে এই দু'যুবকের, মাথা ঠান্ডা করে একমাত্র অর্ডার করা ম্যাঙ্গোজুসও পান করে ফেলে তারা। এর মধ্যে দুজনই যে বারকয়েক আড়চোখে বা খানিকটা ঘাড় হেলিয়ে-দুলিয়ে-বাঁকিয়ে তরুণীটিকে দেখেনি বা দেখার চেষ্টা করেনি, তাও না। অজ্ঞাত কারণেই বারবার হাতঘড়িতে সময় চেক করতে দেখা যায় রাজুকে, হাতঘড়ির ডায়ালটিকে মুখের সামনে ধরে অদ্ভুত কায়দায় এত সময় দেখার কি আছে, আশপাশের টেবিলা বসা কোন ভাবুক খদ্দের হয়তো চিন্তিতও হয়ে পড়ে। মেয়েটিও যেন বুঝতে পেরেছে যে সুদর্শন এই দু'জন যুবক ঠিক এমুহূর্তে কোন কারণে এতটা আলোড়িত, কেন হাতঘড়ি চোখের সামনে তুলে ধরাটা এত প্রয়োজন এই সময়ে, এবং সত্যি বলতে কি, দুই সুদর্শনের কান্ডকারখানা সে মুহূর্তে যথারীতি সুদর্শনার জন্য উপভোগ্যও ছিলো বটে। সম্ভবতঃ সেজন্যই, তাকেও বারবার দেখা গেলো যে কারণে অকারণে নিজেদের টেবিল ছেড়ে হাসনাইনদের টেবলের পাশ দিয়ে কাউন্টারের দিকে হেঁটে চলে যেতে; কখনও বাড়তি সস আনতে যায় তো, কখনও গার্বেজে টিস্যু পেপার ফেলতে! আর প্রত্যেকবার যখন সে পাশ দিয়ে যায়, তখন ঝুঁকে ঝুঁকে ঢেউ তোলা তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপই দুই গোয়েন্দার হৃদকম্পনে বাড়তি ঢেউ তুলে ৎসুনামীর আয়োজন করে ফেলে যেন। তবে এরকম ৎসুনামীতে সব দিশা হারাতে হারাতেও ঠিক কিভাবে যেন সেই দিশাকে আবার হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে পারে হাসনাইন, এবারও তার ব্যতিক্রম তো হলোইনা, বরং দিশা যেন জাগ্রত হলো। কোমরে ঢেউ তুলে মেয়েটি টেবিলের পাশ দিয়ে চলে যাবার মুহূর্তেই মাথায় যে শব্দটা খেলে গেলো তা 'ঢেউ', 'এই ঢেউয়ের উৎস কোথায়?' এহেন কাব্যিক প্রশ্নও জাগলো মনে; এবং পরমুহহুর্তেইএই প্রশ্নজনিত ভাবালুতা থেকে যখন বাস্তবে প্রবেশ করলো পেশায় গোয়েন্দা হাসনাইন, তরতর করে খুলে গেলো আরেকটি জট; 'হালেল্লুয়া' হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে হাসনাইন, "রাজু, রাজু, ইউরেকা! সব মিলে যাচ্ছে। চলো দেরী করা যাবেনা! ওয়াই ম্যাক্স, বুঝলে সবকিছুর মূলে ঐ ওয়াই-ম্যাক্স!"

কাউন্টারের দিকে ছুটে যেতে যেতে রাজুর হাতে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট গুঁজে দেয় হাসনাইন, ফিসফিস করে বলতে থাকে, 'সপ্তপুরীর বিল।'

(চলবে)

(চলবে)
*********************************************
সচলায়তন ব্লগে সুহান রিজওয়ানের লেখা গল্প 'ডিটেকটিভ'(http://www.sachalayatan.com/shu77han/26532)র প্লটটির উপর ভিত্তি করে লেখার একটা প্রচেষ্টা ।

বরাবরের মতো এ গল্পটিতেও নানান বিদেশী গল্পের ছায়া পাওয়া যাবে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিচ্ছি।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×