রাত সাড়ে নয়টায় ‘এবিসি’ রেডিওতে একটা প্রোগ্রাম হলো খুব সম্ভবত ‘শব্দ কল্প গল্প’ বা এই ধরনের কোন নামে। অনেকদিন পর রেডিও’র কোন প্রোগ্রাম শোনলাম, তাদের আজকের টপিক ছিল সাম্প্রতিক ইভটিজিং এর ঘটনা, এর একপেশে আলোচনা শুনে আমি খুব হতাশ। আগে দেখতাম ‘এবিসি রেডিও’ বাংলার প্রমিত উচ্চারনটা বজায় রাখার চেষ্টা করে, এখন হয়তো তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে, তারা হয়তো বুঝে গেছে প্রমিত বাংলা পাবলিক খায়না! ৭০% বাংলার সাথে ৩০% ইংরেজী মেশানোর কথা বাদই দিলাম, এদের আজকের কন্টেন্ট নিয়েও আমার তীব্র আপত্তি আছে।
সেই অনুষ্ঠানের আজকের আলোচনায় গিয়েছিলেন আমাদের কয়েকজন ব্লগার, আমি এই প্রোগ্রাম মিনিট সাতেক শুনেছি, সেই সময়ের মাঝে ব্লগারদের কোন কথা বলার সুযোগই দেয়া হয়নি, যত পকপক শুধু আরজে সাহেব আর তাঁর মহিলা সঙ্গীই করলেন, জানিনা তারা আলোচক হিসেবে কেবল নিজেদেরই যথেষ্ট মনে করেছিলেন কিনা! কথা সেটাও না, কথা হচ্ছে আরজে সাহেবের আক্রমনাত্নক ভঙ্গি, তাঁর সেই কথা কয়েকটা শুনেই বাকী প্রোগ্রাম শোনার আগ্রহ হারাই। তিনি ঢালাওভাবে একটা ভার্সিটিকে দায়ী করলেন, বললেন, ‘একটি বিশেষ ভার্সিটির ছেলেরা ইভটিজিং করে ধানমন্ডিতে, তারা মানুষকে ধরে টাকা পয়সা ছিনতাই করে’ ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেককিছু। তাঁর কথা শুনে মনে হলো সেই বিশেষ ভার্সিটিতে ছিনতাই আর ইভটিজিং নামে কোন কোর্স চালু আছে, আর সেই ভার্সিটির ছাত্ররা ধানমন্ডির রাস্তাঘাটে সেই কোর্সের প্র্যাকটিকাল ক্লাশ করে। আমি বোঝলাম না কয়েকজন দুস্কৃতকারীর করা অপরাধের দায়িত্ব কেন পুরো ভার্সিটি নিবে, কেন ঢালাওভাবে সেই ভার্সিটির সব ছাত্রছাত্রীকে এর জন্যে দায়ী করা হবে, অবশ্য আমি এখনো সন্দিহান আরজে সাহেব কথাগুলো বুঝে বলেছিলেন কিনা!
কোন ভার্সিটি তাদের ছাত্রদের ইভটিজিং করতে শেখায় না, কোন ভার্সিটির সকল ছাত্র ইভটিজার হতে পারেনা। ইভটিজিং আমাদের দেশের একটি সামাজিক সমস্যা, এমন ইভটিজাররা তাদের কালো মন নিয়ে আমাদের আশেপাশেই থাকে, শুধু সেই বিশেষ ভার্সিটিতেই নয় বরং বিভিন্ন মেলা, বাস কিংবা জনাকীর্ণ স্থানে নারীদের অসহায়ত্বের সুযোগ তারা প্রায়ই নেয়, কেবল একটা ঘটনা আলোতে এসেছে বলে সেটা নিয়ে পুরো একটা ইন্সটিটিউটকে দায়ী করা এবং সেই বিদ্যায়তনের সকল ছাত্রকে ঢালাওভাবে দোষী করা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। তারা অপরাধী হলেও পাপীকে নয় বরং পাপকে ঘৃনা করা উচিত, একজনের অপরাধের ভার সকলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া অনুচিত, আমাদের উচিত সামগ্রিকভাবে ইভটিজিং এর বিরোধিতা করা।
সামগ্রিক ইভটিজিং এর প্রতিবাদে ফেসবুকের ম্যাঙ্গোপিপল/আমজনতা গ্রুপ এক ব্যাতিক্রমী প্রতিকী প্রতিবাদী কর্মসূচী আয়োজন করতে যাচ্ছে আগামী ১৮ই মে শুক্রবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে। প্রতিকী ইভটিজারের গায়ে ডিম নিক্ষেপ, কুশপুত্তলিকা দাহ এবং প্রতিবাদী গানের কর্মসূচী, শুরু হবে বিকেল চারটায়। অবশ্যই কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয় সেটি, এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “পেছন থেকে যাকে উত্যক্ত করলেন মুখ ফেরালে যদি দেখেন সে আপনার বোন...?”
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে একটা টার্ম আছে ‘হলি ফিলিং’, এর ভাবানুবাদ বলতে পবিত্র অনুভূতি বোঝায় না, এর মানে হচ্ছে যার সাথে আপনি একটা অন্যায় করলেন তাঁর জায়গায় নিজে থাকলে কেমন অনুভূতি হতো সেটা কল্পনা করা, ওই অবস্থানে নিজেকে ভেবে ভুক্তভোগীর যাতনা বেদনা উপলদ্ধি করা। একজন নারীর পরম আরাধ্য বিষয় হচ্ছে তাদের লজ্জ্বা, সম্ভ্রম এবং সতীত্ব যা আমাদের সকলের মা বোনেরই আছে, তাদের সেই সব অনুভুতিতে শারীরিক কিংবা মানসিক আঘাত হলে তারা বিচলিত হয়। তাই একটু কি ভাববেন ইভটিজার ভাইয়েরা, যাকে ইভটিজিং করলেন সে যদি আপনার বোন হয় তবে কেমন হবে ব্যাপারটা, সে হয়তো আসলে আপনার বোন নয়, কিন্তু কারো না কারো তো বোন। আমাদের ম্যাঙ্গো পিপলের উদ্দেশ্য থাকবে মানুষের মধ্যে সেই হলি ফিলিং টা জাগ্রত করা, মা কিংবা বোন শব্দগুলো শোনলেও তো আত্না বিচলিত হয়, সেই অর্থে একে পবিত্র অনুভুতিও বলা যায়। যাদের মধ্যে সেইসব বোধ নেই তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার রূপকস্বরূপ এই ডিমনিক্ষেপ কর্মসূচীর আয়োজন।
আমি আশা করবো ইউল্যাবের সচেতন শিক্ষার্থীরাও তাদের একটি ব্যানার নিয়ে চুপিচুপি আমাদের এই কর্মসূচীর সাথে একাত্নতা প্রকাশ করতে চলে আসবেন, ইভটিজিং এর প্রতি তাদের ঘৃনা প্রকাশ করে যাবেন সেইদিন, সেইদিন তারা কথা দিয়ে যাবেন তাদের ক্যাম্পাসের আশেপাশে আর কোনদিন তারা এমন ঘটনা ঘটতে দিবেন না, আর কাউকে ইভটিজিং করতে দেখলে তাদের প্রতিরোধ করতে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাবেন। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরাও মনে প্রাণে ইভটিজিং বিরোধী, হয়তো তাদের কতিপয় বিপথগামী সহপাঠীর জন্যে আজ তারা এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন যেমন বিপথগামী ছাত্র সব ভার্সিটিতেই কিছু না কিছু থাকে। আমি ইউল্যাবের সাধারন ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছি, আপনাদের কোন সহপাঠী কোন অন্যায় করে থাকলে তার জন্য আপনারা কিংবা আপনাদের প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়, কিন্তু আপনারা যদি এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদ না করেন তবেই কেবল মানুষ আপনাদের দায়ী করবে, আপনাদের নপুংসক ভাববে- বলবে আপনাদের ক্যাম্পাসের আশেপাশে ইভটিজিং হয় আর আপনারা এর বিরোধিতা করেন না। আমি সেদিনের কর্মসূচীতে আপনাদের পাশে চাচ্ছি, আমি চাই আপনারা আপনাদের প্রতি অভিযোগকে মিথ্যা প্রমান করে দিন, আপনারাও একটা একটা করে ডিম হাতে নিয়ে এসে ইভটিজারদের প্রতি আপনাদের ঘৃনা প্রকাশ করে যান।
আর ইউল্যাব কর্তৃপক্ষের কিছু সমালোচনা না করে পারছি না, তারা প্রথমে উঠেপড়ে লেগেছিলেন সেই ছেলেগুলো ইউল্যাবের নয় সেটা প্রমাণে, এটা তাদের একটা ভুল স্টেপ ছিলো, দুস্কৃতকারীরা ইউল্যাবের শিক্ষার্থী না হোক-ইউল্যাবের ক্যাম্পাসের আশেপাশে কোন অঘটন ঘটলে আর অপকর্মকারীরা ইউল্যাবের নাম ব্যবহার করলে অবশ্যই ভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে এর দায়ভার কিছুটা হলেও নিতে হবে। তারা যদি বলতে চান তাদের নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ অপকর্ম করছে, তবে সেই অন্য কাউকে খুঁজে বের করার দায়িত্বও তাদের, এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর সাহায্য নিতে পারেন এবং আমি আশা রাখি তারা অনতিবিলম্বে অপকর্মকারীদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
বিদ্রঃ প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ ডিম সাথে করে নিয়ে আসতে হবে, একটা ডিম= ৮ টাকা= একটা বেনসন সিগারেট। এই কর্মসূচীর ব্যাপারে আপডেট পাবেন ম্যাঙ্গোপিপল/আমজনতা গ্রুপে, গ্রুপের লিঙ্কটা নিচে দিচ্ছি...
http://www.facebook.com/groups/mango.people.bd
কমেনট করতে হলে নিচের লিনক
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৯