‘ধার করে হলেও ঘি খান’ এই আপ্তবাক্যের উপর আমার গভীর বিশ্বাস। সমমনা আরও যারা আছেন তাদের জন্যেই আমার এই কার্যকরী প্র্যাকটিক্যাল টিপস। ভার্সিটি জীবনের গত কয়েকবছর এসব করেই বেশ মসৃণভাবে চালিয়েছি জীবন, আপনারাও ট্রাই করতে পারেন। আমি জানি এই পোস্ট আত্নঘাতী অর্থাৎ বন্ধুবান্ধব এটা পড়লে আমার নিজেরই ধার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে তবুও জনস্বার্থে আমি এই আত্নত্যাগটুকু করছি, তাছাড়া আমি ভার্সিটি লাইফ পেরিয়ে এসেছি এখন কেউ ধার না দিলেও তেমন প্রব্লেম নেই। যারা নবীন-কচিকাঁচা, যারা ভার্সিটিতে পড়ে কিংবা সামনে ভার্সিটিতে উঠবে তাদের জন্যে এই পোস্ট। যাই হোক লেসন শুরু সবাই খাতা কলম নিয়ে রেডী হোন।
প্রাক্-ধার করণপর্বঃ প্রথমেই ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। টাকা পয়সা খরচ করতে কখনো দ্বিধা করবেন না, টাকা দেয়ার মালিক আল্লাহ, টাকা খরচ করলে টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায় ঠিকই। বাসা থেকে যে টাকা দেয় কিংবা আপনি যা ইনকাম করেন সেটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে খরচ করে ফেলবেন মাসের পনের তারিখের মধ্যেই। মনে রাখবেন, কখনোই একা টাকা খরচ করবেন না, এমনভাবে খরচ করুন যাতে আশেপাশের চার পাঁচ জনের চোখে পড়ে। মাসের প্রথম দিকে সবাইকে এটা সেটা, চা-সিগারেট অকারনেই খাওয়ান, মাসের শেষ দিকে এটা কাজে দিবে। এছাড়াও বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা বাড়ান। বন্ধু বান্ধবের দুঃখে প্রচুর হা-হুতাশ করুন আর সুখের দিনেতো কথাই নেই… হেহে…
বন্ধুবান্ধবের শ্রেনীবিভাগ করুনঃ আর্থিক সামর্থ্য এবং মানসিক উদারতা অনুসারে বন্ধুবান্ধব এবং আশেপাশের পরিচিতজনকে চারটি শ্রেনীতে বিভক্ত করুনঃ
১.ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক
২.আই.এম.এফ.
৩.ক্রেডিট কার্ড
৪. রিজার্ভ
ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কঃ এই শ্রেনীতে থাকবে আপনার বড়লোক বোকাসোকা বন্ধুগুলো, যাদের একাউন্টে প্রায় সময়েই লাখ খানেক টাকা অলস পড়ে থাকে, কিংবা যাদের দূর্নীতিগ্রস্থ বাবা ছেলের নামে একাউন্ট করে দিয়েছে অবৈধ টাকা গোপন করার জন্য। এদের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী লোন পাওয়া যাবে। আর এদের কাছে কমপক্ষে পাঁচহাজার টাকা চাইতে হবে, তবে এদের কাছে সবসময়ে যাওয়া যাবেনা, টাকার পরিমান বেশী হলেই শুধু যাওয়া যাবে। যেহেতু তাদের টাকা ধীরে ধীরে অনেকদিন পরে ফেরত দেয়া যায় তাই এদের ফেলতে হবে ওয়ার্ল্ডব্যাঙ্ক ক্যাটাগরীতে।
আই.এম.এফ.ঃ এই শ্রেনীতে থাকবে চাচা, মামা, খালা, বয়েসে বড় মামাতো-ফুপাতো ভাই, এছাড়াও পার্টটাইম জব কিংবা পার্ট টাইম ব্যবসা করে এমন বন্ধুবান্ধব। এক্ষেত্রে টাকার পরিমান অল্প, দু’শো থেকে পাঁচশো টাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শ্রেনীর লোকজনের টাকা ফেরত দিতে হয়না। বেকার বন্ধুবান্ধবকেও এই গ্রুপে ফেলা যায় তবে এদের কাছে একশো টাকার বেশী চাওয়া যাবেনা। এই শ্রেনীর বেশী বন্ধুবান্ধব প্রয়োজন- একশো একশো করে অনেক টাকা হয়ে যায়, কেউ টাকা ভাবেসাবে ফেরত চাইলে আরেকজনের কাছ থেকে নিয়ে দিয়ে দেয়া যায়।
ক্রেডিটকার্ডঃ এই শ্রেনীর ঋনদাতাদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত, এরা পাঁচশো টাকা ধার দিয়ে একশো টাকার বার্গার খেতে চাইবে। নিতান্ত বিপদে না পড়লে এদের কাছে যাওয়া যাবেনা। এদের কাছে শর্তসাপেক্ষে যেকোন এমাউন্টের টাকা ধার পাওয়া যায়।
রিজার্ভঃ এই শ্রেনীতে থাকবে বাসার কাজের বুয়া, দারোয়ান, ড্রাইভার, কাজের ছেলে ইত্যাদি লোকেরা। যারা ঢাকায় আত্নীয় স্বজনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করেন তাদের জন্যে এটা খুব উপকারী। এক্ষেত্রে টাকার পরিমান খুব অল্প কিন্তু এই অল্প টাকাই অনেকসময় খুব কাজে দেয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীক গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরী, কাজের ছেলেমেয়েরা গোপন জায়গা থেকে টাকা বের করে আপনাকে দেবে, সেটা কখনোই আন্টিকে বলে দেয়া যাবেনা, আর এদের টাকা ফেরত দেয়ার সময় কিছু টাকা বেশী দেয়া উচিত।
ধার-করন পর্বঃ শ্রেনীবিভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রয়োজন অনুসারে চারটি শ্রেনী থেকে ধার করার উপযুক্ত বন্ধু নির্বাচন করুন। নির্দিষ্ট বন্ধুর সাথ্যে দেখা হলে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করুন। পকেটে টাকা থাকলে চা-সিগারেটও খাওয়ানো যেতে পারে। কথাবার্তা যখন শেষেরদিকে, চলেযাওয়ার সময় একটু কথা আছে বলে সাইডে ডাকুন, কন্ঠে আত্নবিশ্বাস এনে হাসিমুখেটাকা দাবি করুন, “দোস্ত দুইশো টাকা বাইর কর”। মনে রাখবেন, অবশ্যই হাসিমুখে টাকা চাইতে হবে, মিনমিন করে চাইলে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনভাবে টাকা চান আপনার বন্ধুই যাতে ভড়কে যায়- কবে আবার সে আপনার কাছ থেকেই টাকা নিয়েছিল। নিশ্চিত থাকুন টাকা থাকলেও আপনার বন্ধু বলবে টাকা নেই, মাসের শেষ ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন গলায় আরো জোর এনে বলুন, “এই বেটা ফকিন্নির মতো কথা কস কেন, লাগলে টেকা তুই কালকেই নিয়া যাইস, আমারে ফোন দিস, এখন টেকা দে”।
কোন কোন বন্ধু তখন মানিব্যাগ খুলে খুচরা দুইটা দশ টাকার নোট আর একটা পাঁচ টাকার নোট দেখিয়ে দেবে। তখনই বুঝতে হবে ঘাপলা আছে। মানিব্যাগের চিপায় থাকা ডেবিট কার্ডের দিকে ইঙ্গিত করুন, “দোস্ত কার্ড দিয়া টাকা তুইল্যা দে”। দরকার হলে নিজ খরচে রিকশা ভাড়া দিয়ে বন্ধুকে এ.টি.এম. বুথের কাছে নিয়ে যান। যেতে যেতে বন্ধুর সাথে গল্প করুন… ‘ধার দেয়া সুন্নত, কর্জায়ে হাসেনা, ধার দিলে প্রচুর সওয়াবের ব্যবস্থা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি’। টাকা তোলার সময় পাশে থাকলে একাউন্ট ব্যালেন্সের অবস্থা বুঝে আরো কিছু টাকা বেশী পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এ.টি.এম. থেকে টাকা বের হওয়ার সময় নিজের হাতেই টাকাটা নিন তারপর বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলুন, ‘চল তোরে সিগারেট খাওয়াই দোস্ত…’। বন্ধুর মনে হতাশা আর টাকা ধার দেয়ার কষ্ট ভুলানোর জন্যে সাতটা টাকা খরচ করতে হবে, এতে দুঃখও ঘোচবে আর টাকা ফেরত চাইবার সময় আপনার এই কৃতজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় বন্ধু কিছুটা সংকোচও বোধ করবে। তাছাড়া বন্ধুর দুঃখ ঘোচানোটাও তো একপ্রকার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে…!!!
ধার-পরবর্তী পর্বঃ চেষ্টা করবেন মাসের প্রথমে টাকা পেয়েই সব ধার শোধ করে দেয়ার, সব সময়ে চেষ্টা থাকা উচিত যথা সময়ে টাকা পরিশোধ করে দেয়ার। কথা দিলে কথা রাখতে চেষ্টা করবেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে তার ব্যবস্থাও আছে।
চেষ্টা করবেন যে বন্ধু টাকা পায় তাকে এড়িয়ে চলার, তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার। যদি বাই-চান্স সামনে পড়ে যায় তবে আপনিই তাকে আগে ডাকুন যাতে বোঝতে না পারে আপনি তাকে এড়িয়ে চলছেন, নিজে থেকেই বলুন… “দোস্ত তুই আমার কাছে দুইশো টাকা পাস না…? আমার মনে আছে, কিন্তু একটু আগেই আরেকজন পাঁচশো ধার নিয়া গেল, তুই কয়েকদিন পরে নে টাকাটা”। এতে বন্ধুর মনে আপনার সম্পর্কে পজিটিভ ধারনা হবে, আপনাকে আর ঝাড়ি টারি দিতে পারবে না, মনের কষ্ট মনেই চেপে রাখবে, আর টাকাই চাইতে পারবে না।
তবে এই স্টেজে পুরাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। যেমন ধরেন বন্ধু বান্ধব মিলে এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, এর মধ্যে একজন আবার আপনার কাছে টাকা পায়। আড্ডায় তার প্রশংসা করুন, তার বাবার বিশাল অবস্থা আর টাকা পয়সার ব্যাপারে তার উদারতার কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিন আর দেখেন ব্যাটা নিতান্ত বিপদে না পড়লে টাকা ফেরত চাবে না।
যদি কেউ টাকা ফেরত চায় আর আপনি দিতে না পারেন তা হলেও সমস্যা নাই, তাকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখান… “দোস্ত আমিতো আর দুই বছর পরেই চাকরীতে ঢুকতেছি, ধুর বেটা টেনশন লস কেন-চাকরী বাকরী তো তোগ লাইগাই করমু, ধইরা নে এই টাকাটা তোর ইনভেশটমেন্ট, আপাতত আর টেকাটা চাইস না…” এই সব বলে অফ রাখেন।
আমার বন্ধু মাহবুব আমেরিকা থাকে, এই লেখাটা অবশ্যই তার চোখে পড়বে। দোস্ত মাহবুব, তুই আমার কাছে দুই হাজার টাকা পাস আমার মনে আছে, আমি আমেরিকা আসতেছি তুই জানিস, আইসা তো ট্যাক্সি চালামু- আমার ট্যাক্সিতে উঠে তুই কম কম ভাড়া দিয়া কিস্তিতে এই টাকাটা কাটায়া নিস… আমি এই কথা বললেই সে বলে, ‘আমি তোর কাছে টাকা চাইছি…?’ এই উদাহরন থেকেও কিছু শিক্ষা নিতে পারেন!!!