আমাদের এই বর্তমান মানব সমাজ একদিনে গড়ে উঠেনি, এ হচ্ছে হাজার হাজার বছরের নানা ভাঙ্গা গড়ার ফল। সমাজের এই বিকাশকালীন সময়ে ছিল নানা উত্থান-পতন, নানা ধ্যান-ধারনা-দর্শন, সমাজের এই বিকাশকালীন সময়কে নৃতাত্বিকরা নানা স্তরে বিভক্ত করেছেন। এরই কোন এক স্তরে উতপত্তি হয়েছিলো দাসপ্রথার। অতীতের কোন ঘটনার সমালোচনা করতে হলে একে যাচাই করতে হয় এর স্থান, কালকে বিবেচনায় রেখে। এই দাসপ্রথাকে পুংখানুপুংখভাবে মূল্যায়ন করতে হলে আমাদের শুরু করতে হবে সুদূর অতীত থেকে যখন থেকে এই দাসপ্রথার উতপত্তি হয়েছিলো। দাসপ্রথার উতপত্তি হয়েছিল জনযুগ পরবর্তী পিতৃসত্তা যুগে। চলুন রাহুল সাংকৃত্যায়নের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জেনে আসি।
“শ্রমের উপযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পিতৃসত্তা যুগে সমাজে এক পরিবর্তন আসিয়া ছিল। পূর্বে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত শত্রুকে সংহার করা হইত এবং অনেকক্ষেত্রে তাহাকে আহারও করা হইতঃ- শত্রুকে বন্দী করিবার রীতি পূর্বের সমাজে কখনো দেখা যায় নাই; কারন বন্দীর ভরন পোষনের দায়িত্ব লওয়া তখন সাংঘিক সম্পত্তির পক্ষে হানিকর বিবেচিত হইত। ইহারউপর সংঘসম্বন্ধ তখন এতো দৃঢ় ছিল যে, উহার মধ্যে অন্যের প্রবেশ তাহারা সহ্য করতে পারিত না। কিন্তু পিতৃসত্তার সময় সেই সংঘপ্রাণতা শিথিল এবং প্রায় বিনষ্ট হইয়া যায়। হস্তশিল্প, ধাতুশিল্প এবং পশুচারনার জন্য তখন ক্রমে শ্রমসমর্থ লোকের প্রয়োজন বাড়িতে থাকে। এইভাবে যুদ্ধবন্দীরও নূতন উপযোগিতা আবিস্কৃত হওয়ার পর তাকে হত্যা না করিয়া বন্দী করা হইত। মোটের উপর শ্রমের প্রয়োজনেই পিতৃসত্তাযুগে দাসতার সৃষ্টি হয়।“ [মানব সমাজ, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, পৃঃ ৫৪-৫৫]
এ ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যার অধিকার রাখে, পুরো বইটা না পড়লে এ সম্পর্কে ভুল ধারনা করার অবকাশ থাকে তাই আমি সামান্য আলোচনা করছি এ ব্যাপারে। পিতৃসত্তা যুগের পূর্বে শত্রুকে প্রাণে মেরে ফেলা হত, কখনো তাদের খেয়ে ফেলা হতো, কারন শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তার ভরন- পোষনের দায়িত্ব নিতে হতো যা ছিল সে যুগে অসম্ভব কারন তাদের নিজেদের আহার্য যোগানোই কঠিন ছিল। কিন্তু পিতৃসত্তা যুগে যখন শ্রমের প্রয়োজন হলো তখন শ্রমের স্বার্থেই যুদ্ধবন্দীদের দাসরূপে বাঁচিয়ে রাখা শুরু হল, তখন থেকেই দাসতা যুগের উতপত্তি হলো।
আজকে আমরা যে এই মানবসভ্যতা দেখছি, এই যে কী-বোর্ড দিয়ে ফেসবুকে বিতর্কের ঝড় তুলছি তার কিছুই সম্ভব হতোনা দাসপ্রথা না থাকলে, প্রতিটা বড় সভ্যতা গড়ে ওঠেছে দাসদের শ্রম, ঘাম আর রক্তের মধ্য দিয়ে। হয়তো আমি শুভ কামাল বলছি বলে আপনাদের এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে না, চলুন দেখে আসি এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের কি মত, নিচে রেফারেন্স দিলাম পড়তে থাকুন, পড়ার শেষে দেখবেন এইগুলা কার কথা।
“দাসতা ছাড়া ইয়ুনানের সাম্রাজ্যস্থাপন সম্ভব হইত না, কিংবা ইহা ব্যতীত রোমান রাজ্যেরও সৃস্টি হইত না; আর রোমান বা ইয়ুনান রাজ্য ছাড়া আধারশূন্যভাবে বর্তমান ইয়ুরোপও জন্ম লাভ করিত না… এখানে ভুলিলে চলিবে না, আমাদের আর্থিক, রাজনৈতিক বা বুদ্ধিগত বিকাশের মূলে দাসতার সাহায্য আবশ্যক এবং সর্বস্বীকৃত ছিল। এই অর্থে ইহাও বলা চলিবে যে, দাসতা ব্যতীত বর্তমান অর্থাৎ এইরূপ আধুনিক সমাজবাদও সম্ভব হইত না।
ইহা সত্য যে, তখন শত্রুকে নাশ না করিয়া দাস করা সমাজের আর্থিক, রাজনৈতিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের সহায়ক হইয়াছে। পূর্বে নাক কান কাটিয়া, কলিজা বাহির করিয়া কিংবা অন্যান্য ক্রূর যন্ত্রনা দিয়া যুদ্ধ-বন্দীকে হত্যা করা হইত। কিন্তু তাহার তুলনায় দাস হইয়া বাঁচিয়া থাকাও এই সব হতভাগ্যের পক্ষে অনেকটা ভাল হইয়াছিল।
দাসতা ছাড়া আমেরিকায় কার্পাস তুলা সুলভ হইত না, -আর কার্পাস না হইলে আধুনিক শিল্পোদ্যোগও সম্ভব হইত না। দাসতা ব্যাতীত পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রগতিশীল দেশ উত্তর আমেরিকা এখনও পিতৃসত্তা যুগে পড়িয়া থাকিত; এমনকি দাসপ্রথা রহিত করিতে পারিলে, আমেরিকা হয়ত পৃথিবীর জাতির তালিকা হইতে লুপ্ত হইয়া যাইত।”
১৮৭৪ খ্রীস্টাব্দে কার্ল মার্ক্স উপরের কথা গুলো লিখিয়াছিলেন।
[মানব সমাজ, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, পৃঃ ৬৯-৭০]
এরিস্টটল দাসদের নাম দিয়েছিলেন human instruments, তিনি দাসদের তুলনা করেছিলেন যন্ত্রের সাথে। দাসদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন অষ্টাদশ শতাব্দীতে- মোহাম্মদ সঃ এর প্রায় বারো’শ বছর পর, তিনি দাসবিরোধী একটা শ্লোগানের প্রবক্তা- ‘all men are created equal’ অর্থাৎ সব মানুষ সমানরূপে সৃষ্টি হয়। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি নিজেই দাস পালন করতেন, তিনি ছিলেন কলেজ পাশ করা হাজার হাজার বইপড়া আধুনিক যুগের আইন ব্যবসায়ী!
দাসপ্রথা নির্মূল হয়েছে এই সেদিন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এতগুলো কথা কষ্ট করে পড়ে কি বুঝলেন? দাসপ্রথাটা ছিলো সময়ের দাবি, সময়কে আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারিনা, সময়কে অস্বীকার করলে দেখা যাবে বিশ্বের প্রায় সকল মহা মণিষীকেই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়। কিন্তু না, সেইসব মহামণীষীকে অস্বীকার করলে এই আধুনিক সভ্যতাকেই অস্বীকার করা হয়। তাই আমরা তাদের কাজকে বিবেচনা করবো তাদের সময়ের প্রেক্ষাপটে। এখানে কেবল একটা ফ্যাক্টর কিংবা উপাদান ধরে তাদের মূল্যায়ন করা হলে সেটা হবে আমাদের অজ্ঞতার পরিচায়ক, এইখানে কোন বিজ্ঞানের সূত্র প্রমান করার মতো অবস্থা নেই যেখানে ধরে নেয়া হয় citerus paribus, ইফ আদার ফ্যাক্টর হেল্ড কন্সটেন্ট, এখানে অন্যান্য ফ্যাক্টরকে ধ্রুব ধরার কোন অবকাশ নেই, ইতিহাসের কোন মুহূর্তের সমালোচনা করতে হলে অতি অবশ্যই সবগুলো ফ্যাক্টরকেই বিবেচনায় আনতে হবে। যেহেতু পূর্বের সব মনীষিই দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সময়ের দাবি হিসেবে তাই আমরা ধরে নিতে পারি সেই সময়ে দাসপ্রথা ব্যাপারটাকে খুব একটা খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এখন আমরা দেখবো এই দাসপ্রথার ব্যাপারে মুহাম্মদ (সঃ) কতোটা নমনীয় ছিলেন।
দাসপ্রথা নিয়ে কতিপয় ফেসবুকীয় উগ্র নাস্তিকের লম্ফঝম্প দেখলে মনে হয় এই দাসপ্রথা মুহাম্মদ এরই সৃষ্টি। আসিফ মহিউদ্দীন নামক এক অর্ধ-শিক্ষিত নাস্তিকের প্রিয় শব্দ ‘দাসী ছহবত’, আমি নিশ্চিত সে এবং তার অনুসারীরা ইতিহাসের সময়প্রবাহ, সেই সময়প্রবাহে পৃথিবীর অবস্থান সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা। সে এবং তার অনুসারীদের অবস্থা কাঠমোল্লাদের মতো, কয়েকটা হাদিস, কোরানের কয়েকটা আয়াত মুখস্থ করেই লম্ফঝম্প করে বেড়ায়। সেই সব অল্প বিদ্বানদের ভয়ংকরী কার্যকলাপ দেখলে ইচ্ছে হয়… থাক বললাম না…! অনেকেই ভাবতে পারেন আমি অহংকার করছি, তাদেরকে হেয় করে অর্ধশিক্ষিত বলে নিজেকে জ্ঞানী প্রমান করতে চাচ্ছি, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। সক্রেটিসের একটা উক্তি আমার ফেভারেট কোটেশন হিসেবে আমার ফেসবুকে ছিলো অনেককাল, “they don’t know that they don’t know, I know that I don’t know”, “তারা জানেনা যে তারা জানেনা, আমি জানি যে আমি জানিনা”। এই সব ওয়ানা বি পাব্লিক জানেইনা যে তারা জানেনা, আর আমি জানিনা সেটা জানি বলেই যেখানে সেখানে নাক গলাতে যাইনা, জীনতত্ত্ব দিয়া ডারউইনের থিয়োরী কাবজাব বোঝাইলেও চুপ কইরা থাকি। যাই হোক নিজের বিজ্ঞাপন অনেক করলাম এবার প্রসংগে আসি।
ঠিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে দাসরা কতোটা নির্যাতিত ছিলো এ ব্যাপারে ইতিহাস ঠিক ঠিক জানেনা, কিন্তু আমরা এর অনেককাল পরের কথা জানি, সপ্তদশ কিংবা অষ্টাদশ শতাব্দীতেই দাসদের উপর চালানো নির্যাতনের কথা পড়লে আপনি যদি মানুষ হোন তবে আপনার কান্না পাবে, এই কদিনে দাসপ্রথার উপর পড়তে গিয়ে আমার চোখ বারবার ভিজে ভিজে উঠেছে, এতে করে সহজেই অনুমান করা যায় তার আরো একহাজার বছর আগে দাসদের অবস্থা আরো কতই না ভয়ঙ্কর ছিল। সেই যুগে মানবতার বাণী নিয়ে আসা হযরত মুহাম্মদ সঃ দাসদের বলেছিলেন ভাই, ইতিহাসে প্রথমবার, তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মানুষ হিসেবে, বলেছিলেন তোমরা নিজেরা যা খাবে তা তাদেরও খেতে দিবে, নিজেরা যা পড়বে তা তাদেরও পড়তে দিবে। [সূত্রঃ বিদায় হজ্বের ভাষণ]
আমরা ইতিহাস থেকে জানি কিভাবে দস্যুতার মাধ্যমে মানুষকে ধরে ধরে জোর করে দাস বানানো হত, আঠারো’শ শতাব্দীতে সভ্য লোকেরা কেমন নির্মমভাবে ট্রান্সআটলান্টিক ট্রেডের মাধ্যমে জাহাজের ডেকের মাঝে গাদাগাদি করে দাস ধরে নিয়ে আসতো, কিন্তু তারও অনেককাল আগে মুহাম্মদ সঃ দাস বানানোর জন্যেও কিছু নিয়ম কানুন বেঁধে দিয়েছিলেন। মূলত যুদ্ধবন্দীদেরকেই দাস বানানো হলেও সেই যুদ্ধের আগে কিছু নিয়মকানুন ছিলো। কোন দেশ জয়ের আগে ২ টা শর্ত আছে। প্রথমে ঐ দেশের নাগরিকদের কে মুসলমান হবার আহবান দিতে হয়। যদি এরা মুসলিম হয়ে যায় তাহলে তো আর তাদের সাথে জিহাদ হবে না। কারন তখন তারা ভাই আর যদি তারা মুসলিম হতে রাজি না হয় তাইলে জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করতে বলা হয়। বিধর্মীরা জিজিয়া কর দিতে রাজি হলে তাদের জান মাল সম্মানের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্ব তখন মুসলমানদের। সেই শর্ত না মানলে যুদ্ধ। জনযুগে সংঘবদ্ধতা দৃঢ় ছিল, স্বগোত্রের মাঝে অন্যদের প্রবেশ ছিলো নিষিদ্ধ, স্বগোত্রে অন্যদের ভাই ডেকে প্রবেশ করানোর এই চিত্রও নিশ্চয়ই একটা উদাহরণ। তাছাড়া মুহাম্মদ সঃ স্পষ্টভাবে বলে গেছেন কোন স্বাধীন লোককে জোর করে দাস বানানো যাবেনা।
দাসদাসীকে মুক্ত করতে মুহাম্মদ সঃ উতসাহ দিয়েছেন, দাসমুক্তি দেয়ার জন্যে ঘোষণা করেছেন পুরস্কার, ইসলামে বিনা কারনে রোযা ভাঙ্গা থেকে শুরু করে অনেক গোনাহ এর কাফফারা হল দাস দাসীদেরকে মুক্ত করে দেয়া। তিনি নিজে মৃত্যুর আগে সব দাসদাসীকে মুক্ত করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তার জীবদ্দশায় তিনি মোট ৬৩ দাসদাসী মুক্ত করেছিলেন, আর তার সঙ্গীসাথী এবং পরিবার মিলে সর্বমোট মুক্ত করেছিলেন ৩৯,২৩৭ জন দাসদাসী। হে নাস্তিক ভাইয়েরা, ৬০০ খ্রীস্টাব্দে এই উদারতা, আপনাদের কি চোখে পড়ে…??? [সূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং সীরাত ইবনে হিশাম]
সে যুগে দাসীরা ব্যবহৃত হতো পতিতা হিসেবে, মুহাম্মদ (সঃ) সম্ভব হলে তাদের দিতে বলেছিলেন স্ত্রীর মর্যাদা, নিজেও পালন করতে দ্বিধা করেন নি সেটা, স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন কয়েকজন দাসীকে, নিঃসন্দেহে এ তার সাহসিকতা। কয়েকজন সাহাবীও অনুসরন করেছিলেন সেই পথ, সে যুগে দাসীদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর চেয়ে এটা ভালো নাকি মন্দ ছিল সেটা আপনাদের বিবেচনা। কেউ যদি দাসী ছহবত বলে বলে বেড়ায় তবে বলবো সময়টা বিবেচনায় নেন দয়া করে। ৬০০ খ্রীষ্টাব্দ। কেউ কেউ টানবেন বহু বিবাহের কথা, এ ব্যাপারে বলেছি আমার আরেকটা নোটে, পড়ে নিবেন। তাছাড়া দাসীদের কি শারীরিক চাহিদা বলে কিছু ছিলো না, তারা যদি কারো সাথে শুতে চেয়ে না পায় তবে তো সেটা তো নারীদের যৌনস্বাধীনতা দাবী কারী নাস্তিকদেরই কথার বিপক্ষে যায়। যৌন স্বাধীনতা দেয়ার কথা বলবেন আবার দাসী ছহবত বলে বলে একেই আবার বাধা দিবেন এটাতো স্ববিরোধিতা হয়ে যায়। মুহাম্মদ সঃ তো বলেননি দাসীদের ধর্ষন করার কথা।
কেউ কেউ বলেন যে আবার ইসলামী শাসন ফিরে আসলে নাকি দাসপ্রথাও ফিরে আসবে। তাদের অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে দাসপ্রথাতো বাধ্যতামূলক করা হয়নি, নাকি কোথাও বলা হয়েছে যুদ্ধবন্দীদের ধরে দাস বানাতেই হবে, না বানালে পাপ হবে? হিজরী ১০০০ সালের পরও তো কোথাও কোথাও কোরানের শাসন ছিল। কই তখন তো আর কোন মুসলিম প্রধান দেশে দাস দাসী প্রথা থাকে নি। আর সৌদি আরব ইরানে তো বর্তমানে ইসলামী শাসন চালু আছে। কই সৌদি আরব ইরানে তো কোন দাস দাসী প্রথা চালু নাই। আফগানিস্তানে তালেবানরাও তো পুরাপুরী ইসলামী শাসন কায়েম করছিল। কই তালেবানরা তো আফগানিস্তানের কোন বৌদ্ধ নাগরিককে দাস বানায়নি। ভাই কিভাবে এখন আপনি কাউকে দাস বানাবেন যেখানে এই পৃথিবীর সকল নাগরিক এখন স্বাধীন???
মোহাম্মদ সঃ যে দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতেন দাসদের ব্যাপারে, সেই নমনীয় দৃষ্টি বজায় থাকলে ইতিহাসকাল ধরে এতোসব দাস বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কোন প্রয়োজন হতো না। ব্রাজিলের চিনি দাসদের মতো পরিস্থিতি সৃস্টি হতোনা, যারা কিনা যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেছিল মানুষের মতো সুপ্রাপ্য যন্ত্র থাকায়, জন্ম হতো না কোন স্পার্টাকাসের…!!!
দাসপ্রথা আজো আছে, জানলে চমকিত হবেন যে পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেই আছে, দাসবিরোধী বর্তমান কালের সবচেয়ে বড় সংঘটন abolition মিডিয়া, আসুন তাদের কাছ থেকে জেনে নেই বর্তমান পরিসংখ্যান। একপ্রকার যৌন দাসেরা আজো বিরাজ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পতিতা কিংবা গৃহকর্মীর বেশে। আবোলিশন মিডিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলুন দেখে আসি বর্তমান কালে কোন দেশের অর্থনীতিতে এই দাসদের কেমন অবদান। পাচারকৃত এসব দাসদাসী কিংবা পতিতা গৃহকর্মীরা বিশ্বজুড়ে মোট প্রফিট কন্ট্রিবিউট করে ৩১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এলাকা ভিত্তিক এর পরিসংখ্যান নিচে দেয়া হলঃ
US$ 15.5 billion – 49% – is generated in industrialized economies
US$ 9.7 billion – 30.6% is generated in Asia and the Pacific
US$ 1.3 billion – 4.1% is generated in Latin America and the Caribbean
US$ 1.6 billion – 5% is generated in sub-Saharan Africa
US$ 1.5 billion – 4.7% is generated in the Middle East and North Africa|
[http://abolitionmedia.org/about-us/modern-slavery-statistics]
দেখতেই পাচ্ছেন এই আধুনিক যুগে উন্নত দেশগুলোও পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে, আধুনিক দাসত্বের ক্ষেত্রে, ৪৯ পার্সেন্ট প্রফিট আসে সেসব দেশ থেকে। আমাদের দেশে মাঝে মাঝে ইটভাটায় জোর করে আটকে রাখা দাস শ্রমিক ধরা পড়ে, বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হওয়ায় আপনারা কি বলবেন এর জন্যে ইসলাম দায়ী? আপনারা কি বলবেন বিশ্বব্যাপী এই বর্তমান দাসত্বের জন্যে কোন ধর্ম দায়ী…???
কৃতজ্ঞতাঃ এই পোস্টের ব্যাপারে সর্বাত্নক সহযোগিতা করেছেন ফারাবী, ফাত্তাহ, সাইমুর রহমান পিয়াল আমাকে হাদীস সম্পর্কিত জ্ঞান দিয়ে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক দিয়ে এবং তথ্য দিয়ে অসম্ভব সাহায্য করেছেন ইমরান হাসান। এই নোটের ব্যাপারে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা না থাকলে হয়তো এই নোট এই আকার পেতো না। সবাইকে ধন্যবাদ!!!