ভার্সিটিতে উঠার খানিক আগে পরে বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের মাঝে এক নতুন বোধের উন্মেষ ঘটে, এক নতুন বোধ, এক নতুন অনুভূতি, এর নাম প্রগতিশীলানুভূতি। এই প্রগতিশীলানুভূতির পক্ষে কোন রেফারেন্স দেয়া সম্ভব নয় কারন শব্দটা আমার নিজেরই সৃস্টি, প্রগতিশীল প্রগতিশীল যে অনুভূতি তার নাম প্রগতিশীলানুভূতি।
সাধারনত এর উন্মেষ ঘটে পাড়ার কোন বড়ভাইকে দেখে যার এলোমেলো চুল আর উদাসীনতা তার জ্ঞানের পরিচায়ক, যিনি মাঝে মাঝে উদাস নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা দার্শনিক বুলি ঝাড়েন, এ সৃস্টির কোন মানে নেই, কোথা থেকে আসলাম আর কোথায় চলে যাবো এই টাইপের এলোমেলো দুয়েকটা কথা বলেন। এ অবস্থাটা সাধারনত মফস্বলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তবে ভার্সিটিতে পড়লে সেটা আবহাওয়ার প্রভাবে অটোই হয়ে যায়।
ফার্স্ট ইয়ারের পোলাপানের মুখেই এই কথাটা বেশী শোনা যায় যে- ‘আমি নাস্তিক’, তারা এই কথা বেশ গর্বের সাথে বলে। প্রচলিত মতে প্রগতিশীল হওয়ার সবচেয়ে বড় শর্ত হচ্ছে তাকে নাস্তিক হতে হবে, নাস্তিক হলেই প্রগতিশীল হওয়ার পঞ্চাশ ভাগ সম্পন্ন। সাথে যদি দুয়েকটা কমিউনিজমের মুখস্থ বুলি ঝাড়তে পারে তবে সে হিট, তার প্রগতিশীলতার ৭৫ ভাগ কমপ্লিট। বাকী ২৫ ভাগ থাকে স্বাধীনতা বিরোধীদের গালাগালি করার মাঝে, এই পঁচিশ পার্সেন্টের আমিও সমর্থক, স্বাধীনতার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত, স্বাধীনতাবিরোধীদের কখনোই কোনভাবেই সমর্থন করা উচিত নয়, তাদের সর্বসময়ে গালাগালির উপরেই রাখা উচিত।
যাইহোক, পুরো একশো পয়েন্ট নিয়ে আপনি হয়ে গেলেন প্রগতিশীল, আপনার মাঝে প্রগতিশীলানুভূতি তুখোড়ভাবে কাজ করা শুরু করলো, এবার সেই অনুভূতিকে পোক্ত করার জন্যে আরজ আলী মাতুব্বরের বই কিনে ফেলুন, চারটি খন্ড আছে এর মধ্যে একটা কিনলেই আপনার কাজ চলে যাবে, সেখান থেকে কিছু প্রশ্ন মুখস্থ করে নিন। আশেপাশে হুজুর টাইপের কোন লোক দেখলেই সেই সব প্রশ্ন শুরু করবেন, ব্যস আপনি হয়ে গেলেন প্রগতিশীল। এই প্রগতিশীলানুভূতি আবার সব জায়গায় প্রদর্শন করতে যাবেন না, বাড়িতে গেলে ঠিকই শুক্রবারে গোসল টোসল করে জুম্মার নামাজে চলে যাবেন নইলে কিন্তু বাপের ঠ্যাঙ্গানি খাওয়ার রিস্ক থেকে যাবে।
এবার আসুন দেখি ফেসবুকীয় প্রগতিশীলানুভূতি কিভাবে কাজ করে। আপনি একটা একাউন্ট খুলুন এরপর তাতে সব বড় বড় ব্লগারকে এড করে ফেলুন, তারা যা ই লিখুন না কেন তাতে লাইক দিন, মাঝে মাঝে কমেন্ট করুন যে, ‘ভাই একেবারে আমার মনের কথাটাই বলেছেন।’ সাধারন অবিতর্কিত ব্লগারের সাথে থাকলে আপনার প্রগতিশীলানুভূতির সেরকম বিকাশ নাও হতে পারে, তাই আসিফ মহিউদ্দীন টাইপের বিতর্কিত ব্লগারের সান্নিধ্য নিন যারা ধর্মের বিরুদ্ধে বলেন। তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে নাক মুখ কুঁচকে ‘আল্লাহ মাফ কইরা দিও’ বইলা লাইক বাটনটা চেপে দিবেন, এতে আপনার মনে খানিকটা অপরাধবোধ আসতে পারে যে গুনাহ হয়ে গেল কিনা ভেবে, তবুও প্রগতিশীলানুভূতির স্বার্থে একটু গুনাহ হলোই বা!
যদি আপনার প্রগতিশীলানুভূতি প্রকাশের আরো ইচ্ছে থাকে তবে কিশোর ডি গুপ্ত কিংবা শোয়েব আমিনের মতো করে কোন বিতর্কিত ব্লগার যেমন আসিফ মহিউদ্দীনের খাদেম হয়ে যান, আপনার ফেসবুকীয় পীর সাহেব কাশি দিলেও বলেন যে এতো সুন্দর কাশি আর কেউ দিতে পারেনা, কেউ গুরুর পুটু মেরে দিলেও গুরুকে এই বলে স্বান্ত্বনা দেন - যে ব্যাক্তি পুটু মেরেছে তার পুটু মারা যন্ত্রই নোংরা হয়েছে। গুরুর প্রতিপক্ষকে ছাগু বলে অভিহিত করুন, গুরুকে বোঝান যে তার আহরিত মানসম্মান ছিনতাই করে আরেকজন সম্মানিত হতে চাচ্ছে। এতে করে আপনার উপর গুরুর আশীর্বাদ থাকবে আর আশেপাশের মানুষও আপনার প্রগতিশীলানুভূতি সম্পর্কে অবগত হবে এবং কোন মেধা না থাকা সত্ত্বেও দেখবেন ৬৪ জন আপনাকে সাবস্ক্রাইব করে নিয়েছে।
সকল ওয়ানা বি (wanna be) প্রগতিশীলদের প্রগতিশীলানুভূতি আরো দৃঢ় হোক…!!!
পাদটীকাঃ আমার আগের একটা নোটে প্রগতিশীলতার ব্যাপারে বলেছিলাম। আমরা অনেকেই সচেতন নই যে প্রগতিশীলতা কি জিনিস তাই অনেকসময়েই বিভ্রান্ত থাকি, একবার জেল খেটে নিজেকে জাতির পিতা ভাবা লোকের কথাকেই আপ্ত হিসেবে ধরে নেই, সেটা ভুল। আপনার নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন কোনটা শুদ্ধ আর কোনটা ভুল, বড় ব্লগার হলেই যে কেউ শুধু ঠিক কথা বলবে সেটা ভাবা ভুল।
আমরা ধরে নেই ধর্মের বিপক্ষে কথা বলাটাই প্রগতিশীলতা, ধর্মের পক্ষে বললেই বুঝি মানুষ আমাকে ক্ষ্যাত ভাববে। এই ধারনাটা অনেককাল থেকেই আছে, এ জন্যেই জনৈক বড় ব্লগারের ভুল কর্মকান্ড অতীতে আমি হাতে কলমে ভুল প্রমান করলেও অন্য কোন প্রতিষ্টিত ব্লগারকে এর কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি, আমার পক্ষে কথা বলতে দেখিনি, তাদেরকে এই সংস্কার থেকে বেড়িয়ে এসে সত্যটা উন্মোচন করার আহ্বান জানাচ্ছি…
কেউ কেউ আমাকে বলেন আমি এর পেছনে লেগেছি কেন, আমার কথা হচ্ছে একলোক তার লিখন ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক মানুষকে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে, আর অন্য সবাই মুখ বুঁজে তার কর্মকান্ডে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, এই জিনিস সহ্য করাও অন্যায়। তাই ধর্মের পক্ষে কথা বলায় আমাকে যদি কেউ ক্ষ্যাত বলে অভিহিত করেন তাতেও আমার সমস্যা নেই, যদিও আমি নিজেকে একজন সংশয়বাদী ভাবি। এই নোট লিখতে লিখতে অমিতাভ বচ্চনের গাওয়া ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে…’ গানটার হিন্দী ভার্সন শুনছি, আমি না হয় তবে এই পথে একলাই চলবো…!!!
বাংলাদেশকে এই জয়ে প্রাণঢালা অভিনন্দন...