ব্লগীয় নাস্তিকদের সাম্প্রদায়িকতাঃ
আসুন প্রথমে জেনে নিই বদরউদ্দীন উমরের ভাষায় সাম্প্রদায়িকতা কি।
“সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে স্বতন্ত্রভাবে না দেখলে তার স্বরূপকে ঠিক বোঝা যাবেনা। ধর্মের আচার বিচার এবং তত্বের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে তাকে আমরা বলি ধর্মনিষ্ঠা। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা পৃথক জিনিস। কোন ব্যাক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া হয় যখন সে এক বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভূক্ত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধাচরন এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিক প্রস্তুতি সেই ব্যাক্তির সাথে সাক্ষাত পরিচয় অথবা বিরুদ্ধতা থেকে সৃস্ট নয়। ব্যাক্তিবিশেষ এ ক্ষেত্রে গৌণ, মূখ্য হল সম্প্রদায়”। [সাম্প্রদায়িকতা, বদরুদ্দীন উমর, পৃঃ১১]
এ ব্যাপারে আরো অনেক কিছু উল্লেখ করা যায় উপরোক্ত বই থেকে কিন্তু তা করতে গেলে নোট বিশালাকৃতি ধারন করতে পারে তাই আমি শুধু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
“সাম্প্রদায়িকতার যোগ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার সাথে”, “সাম্প্রদায়িকতা এ অর্থে পুরোপুরি ধর্ম নিরপেক্ষ।” [সাম্প্রদায়িকতা, বদরউদ্দিন উমর, পৃঃ১১]
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে বদরুদ্দীন উমর আরেকটি বইয়ে বলেছেন, “যে মানুষ সাম্প্রদায়িক তাকে ধার্মিক হতেই হবে এমন কথা নেই। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার কাছে ধর্মের তত্ত্ব এবং ব্যবহার নিতান্তই গুরুত্বহীন।” [সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, বদরউদ্দীন উমর, পৃঃ২২]
উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি নব্য ব্লগীয় নাস্তিকেরা নিজেদেরকে ধর্মহীন বলে দাবি করে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেননা, ব্লগীয় নাস্তিকেরা একটি সম্প্রদায় এবং সাম্প্রদায়িকতার যোগ তাদের সেই সম্প্রদায়ের সাথে। তারা যেভাবে ধর্মীয় অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের উপর আক্রমন চালিয়েছেন তা সাম্প্রদায়িকতারই শামিল।
তারা হয়তো বিশ্বাসীদের শারীরিকভাবে আঘাত করেননা, কিন্তু কটু বাক্যবাণ হানতে তারা সবিশেষ পারদর্শী এবং আকছারই তা করে থাকেন, আসিফ মহিউদ্দীন কথায় কথায় বলেন ‘আল্লাহু ফাকবার’, তার চ্যালারা বলে, ‘বিসমিল্লাহি হেরামীর হারাম’, আমি কোন কট্টর বিশ্বাসী নই তবু আমার বাবা প্রত্যেক কাজ শুরু করার আগে যে বাক্যটা পরম বিশ্বাস নিয়ে উচ্চারণ করেন তা নিয়ে তারা এভাবে উপহাস করেন দেখে আমারও কষ্ট হয়। বলা হয়ে থাকে শারীরিক আঘাত নাকি ক্ষণস্থায়ী কিন্তু মানসিক আঘাত মানবমনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, তাই বলা যায় তাদের এই কর্মকান্ড জামায়াত শিবির কিংবা শিবসেনাদের মতো সাম্প্রদায়িকদের চেয়ে কোন অংশে কম ক্ষতিকর নয়। জানি তিনি বলতে চেষ্টা করবেন এভাবে বিকৃত করে বললে কি এমন হয়। মানুষের পরম বিশ্বাসের কথা এখানে নাই বা টেনে আনলাম, রবীন্দ্রনাথের গানের সুর বা কথা বিকৃত করলেও তো আমাদের খারাপ লাগে, এর কারন রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। তাই আরেকটা মানুষের প্রিয় বাক্য এমন বিকৃত করাটাতো মানবিকতার বিচারেও ঠিক না।
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন একজন সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ সেটা বোঝতে এতো রেফারেন্স লাগেনা, আমার বাসার কাজের ছেলে কিংবা জামায়াত শিবিরের লোকেরা যেভাবে হিন্দুদের মালাউন বলে ডাকে কিংবা বৈষ্ণবী হিন্দুদের টিকি নিয়ে উপহাস করে, আসিফ মহিউদ্দীন এবং তার চ্যালারা ঠিক সেভাবেই মুসলমানদের দাড়ি আর টুপি নিয়ে উপহাস করেন। আমার বাসার কাজের ছেলে হয়তো সেটা না বোঝে বলে, কিন্তু জামায়াত শিবির এবং আসিফ মহিউদ্দীনের চ্যালারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে তা করে থাকেন। সাম্প্রদায়িকতার বিচারে যাচাই করলে তাই আমি আসিফ মহিউদ্দীন এবং জামায়াত শিবিরের মতো সাম্প্রদায়িকদের মধ্যে কোন তফাত খুঁজে পাইনা। তাই বড়ই পরিতাপ হয় যখন তিনি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক এবং মানবতার রক্ষক হিসেবে দাবি করেন, অবশ্য জামায়াত শিবিরের গোলাম আজমও নিজেকে এমন করে ভাষাসৈনিক হিসেবে দাবি করে।
ব্লগীয়/ফেসবুকীয় প্রতিক্রিয়াশীলতাঃ
প্রগতিশীলতা একটি আপেক্ষিক বিষয় যার ধ্রুব কোন সংজ্ঞা নেই, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় প্রগতিশীল হিসেবে বিবেচিত হয় আবার সময়ের সাথে সাথে হয়তো তা বদলে যায়। হুমায়ূন আজাদের ভাষায়, “কোন আবেগ, বিশ্বাস, চিন্তাই দেশকাল নিরপেক্ষভাবে প্রগতিশীল বা প্রগতিবিরোধী নয়; এক কাল বা দেশে যা চমতকারভাবে প্রগতিশীল, অন্য কাল বা দেশে তা হয়ে উঠতে পারে, অনেক সময় হয়ে ওঠে প্রগতিবিরোধী। এর বিপরীতটাও সত্য। তাই প্রগতিশীলতার কোন ধ্রুব সংজ্ঞা নেই। [সীমাবদ্ধতার সূত্র, হুমায়ূন আজাদ; পৃঃ৩১]”
তবুও প্রগতিশীলতার ব্যাপারে তার একটা কথা মোটামুটি আপ্ত কিংবা সর্বজন গ্রহনযোগ্য হিসেবে ধরে নেয়া যায়, তিনি বলেছিলেন কবিতার প্রগতিশীলতার ব্যাপারে, “যে-কবিতা ধর্মান্ধতামুক্ত, ইহজাগতিক, স্বদেশনিষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক, স্বৈরাচারবিরোধী ও জনসংলগ্ন, যে-কবিতা কবিতা ও সাধারন মানুষের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন স্বার্থান্বেষী নয়, সে-কবিতাই প্রগতিশীল। যা কিছু এর বিরোধী তাই প্রগতিবিরোধী।” [পৃঃ-৩২]
এবার আসুন তাহলে আমরা নাস্তিকদের বর্তমান কর্মকান্ডকে এই সংজ্ঞার আলোকে প্রগতিশীলতার মাপকাঠিতে যাচাই করি। হূমায়ুন আজাদ বলেছিলেন কবিতার প্রগতিশীলতার ব্যাপারে, যেহেতু মানুষের স্ট্যাটাস এবং ব্লগীয় অন্যান্য পোস্ট কবিতার মতোই মত প্রকাশের একটা মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত তাই হুমায়ুন আজাদের সেই কবিতার প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা আমরা সেই সব লেখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে মেনে নিতে পারি।ব্লগে ফেসবুকে এখন আসিফ মহিউদ্দীনের হাত ধরে এক অসুস্থ এবং নোংরা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ধর্মকে গালাগালি করার এবং সাধারন ধর্মীয় বোধ সম্পন্ন মানুষকে আঘাত দেয়ার যা মাঝে মাঝে প্রতিক্রিয়াশীলতার চূড়ান্ত সীমাও ছাড়িয়ে যেতে চায়। তারা যা তা বলে অকথ্য ভাষায় ধর্মের পিছু ধাওয়া করে চলেছেন, তারা এর নাম দিতে চাচ্ছেন প্রগতিশীলতা, আসুন দেখি তারা কতোটা প্রগতিশীল।
“যে-কবিতা কবিতা ও মানুষের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন স্বার্থান্বেষী নয়”, এ বাক্যটির ব্যাপারে আমি একটা কেস স্টাডি দেখাবোঃ আসিফ মহিউদ্দীনের স্ট্যাটাসে নিয়মিত আসিফকে গালাগালি করেন এমন একজন লোক আমাকে এড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন, আমি অনেকদিন তাকে এড করিনি কিন্তু তার ক্রমাগত অনুরোধে একসময় এড করি। একসময় তার ব্যাপারে জানলাম তিনি বরিশালে চালের ব্যাবসা করেন, তার পড়াশোনা বেশী নেই বয়সও খুব বেশী নয়, তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন, সকালে বিকালে একটু সময় ফেসবুকে বসেন। তিনি বললেন ভাই আমার খুব মন খারাপ হয়, রাগ হয় নাস্তিকেরা এমন বাজে ভাষায় আমাদের নবীজিকে নিয়ে কথা বললে, আমিতো ভাই আপনাদের মতো যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারিনা তাই শুধু গালাগালি করি।
কতটুকু রাগ কিংবা মন খারাপ থাকলে একটা লোক গালাগালি করে? আপনি কিংবা আপনারা বিরাট শিক্ষিত কিংবা তালেবর হয়েছেন বলে কি এমন সরল সাধারন মানুষের আবেগ নিয়ে খেলবেন? যে লোকটা ধর্মের ভয়ে চালের ওজনে কম দেয়না, যার জন্যে আশপাশের কেউ কখনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি সেই লোকটা কেন এভাবে ফুঁসে ওঠে আপনারা বোঝেন? খুবতো এটম বোমা বোঝেন, শক্ত শক্ত বিজ্ঞানের কথা বোঝেন কিন্তু মানুষের মন বোঝতে চেষ্টা করেছেন কখনো? একটা সাধারন মানুষের প্রিয় ব্যাক্তিত্ত্বকে নিয়ে ফাজলেমি করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? এই লোকটা যে গালিগালাজ করে এর জন্যে কে দায়ী? ব্লগ কিংবা ফেসবুকে নোংরামি ছড়ানোর জন্যে কে দায়ী, এই লোককে উস্কানীটা তবে কে দিলো, তার জন্যেতো এই সমাজের কোন ক্ষতি হচ্ছিল না? তাই আপনার ধর্মবিরোধী লেখার ব্যাপারে বলা যায় সেগুলো মানুষের স্বার্থবিরোধী, তাছাড়া আপনার লেখায় কারো কোন উপকারও হয়না, কিংবা সে যদি আপনার বয়ান শুনে নাস্তিকও হয় তাতেই বা সমাজের কি উপকারটা হবে শুনি? আপনার স্ট্যাটাস কিংবা লেখা তার মতো এমন সরল সাধারন মানুষের স্বার্থান্বেষী না হলে তবে কার স্বার্থান্বেষী? এইটা তবে কোন ধরনের প্রগতিশীলতা? আসিফ মহিউদ্দীন, আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই আপনি এবং আপনাদের এইসব কর্মকান্ড পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রগতিবিরোধী।
হুমায়ূন আজাদ কথা বলতেন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, পাক সার জমিন সাদ বাদ গ্রন্থে হুমায়ূন আজাদ আক্রমন করেছিলেন ধর্মান্ধদের, বইটি পড়ার সময়ে আমার চোখে কেবল রাজাকারদের মতো নরপশুদের কথাই ভেসেছে। কিন্তু ধর্ম আর ধর্মান্ধতা আসিফ মহিউদ্দীন গুলিয়ে ফেলেছেন, তিনি কথা বলছেন একেবারে ধর্মেরই বিরুদ্ধে। তার লেখাগুলো কোনভাবেই জনসংলগ্নও নয়, এটা কোনভাবেই আপামর জনসাধারনের ভাষ্য নয় যে ধর্মকে এদেশে নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। এছাড়া ইহজাগতিক, স্বদেশনিষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক, স্বৈরাচারবিরোধী এই ব্যাপারগুলোও তার ধর্মবিরোধী লেখার সাথে কোনভাবেই প্রাসংগিক নয়। তাই কোন বিচারেই তার এবং তার শিষ্যদের ধর্মবিরোধী লেখাগুলো প্রগতিশীল নয় বরং পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল।
একবার আসিফ মহিউদ্দীনকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম এই যে আপনারা এভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, গালাগালি করছেন এতে কি লাভ? তিনি উত্তরে তার একটি লেখার লিংক দিলেন, তাতে লিখা ছিল এইসব অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে সময় নষ্ট না করে জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলে নাকি সমাজ এগিয়ে যাবে, তাই তিনি ধর্ম বিনাশের পক্ষে সারাদিন কথা বলেন। আমি তাকে অত্যন্ত বিণীতভাবে বলতে চাই, তার কথা যদি সত্য হয় তবে তিনি এবং তার চ্যালারা যদি ধর্মের পেছনে লেগে সময় নষ্ট না করে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় মনোযোগ দেন তবেই সমাজ এগিয়ে যাবে, তারা বরং এরকম নাস্তিকতা চিন্তা বাদ দিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়েই চিন্তা করতে থাকুন। তিনি একটা লেখায় হিসেব দিয়েছেন কতো কর্মঘন্টা সময় নষ্ট হয় নামাজ পড়লে, তিনি ধর্মের পেছনে লাগায় তার নিজের কতো কর্মঘন্টা সময় নষ্ট হলো এবং তার লেখা পড়ে পড়ে মানুষের কতোটুকু সময় নষ্ট হলো তার হিসেবও তাকে করতে অনুরোধ করছি। তিনি এর বিপরীতে বলতে পারেন তার লেখায় মানুষ দিক নির্দেশনা পাবে, তাই নিজের দায়িত্ত্ববোধ থেকে এমন করছেন নিজের ক্ষতি করে হলেও। সেটা বললে আমি তার কাছে জানতে চাইবো তাকে কে নাস্তিকদের পয়গম্বর হিসেবে প্রেরণ করেছে? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো এতো খাবার তিনি কই পান?? নাকি বিদেশ থেকে কোন অনুদান আসে…???
ব্লগীয় নাস্তিকদের বর্ণবাদিতাঃ
The Oxford English Dictionary defines racism as the “belief that all members of each race possess characteristics, abilities, or qualities specific to that race, especially so as to distinguish it as inferior or superior to another race or races” and the expression of such prejudice.
বর্ণবাদ বলতে আমরা অনেকেই কালো চামড়ার মানুষকে উপহাস করাকেই বুঝি, ব্যাপারটা আসলে তা নয়, এখানে বর্ণ বলতে বোঝায় জাতি গোষ্ঠী, শুধু গায়ের রঙ না। উপরোক্ত অক্সফোর্ড ডিকশনারীর সংজ্ঞা অনুসারে বর্ণবাদকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, “যে বিশ্বাস বলে যে- সকল জাতির সব সদস্যকে ওই বিশেষ জাতির বৈশিষ্ট্য, সক্ষমতা অথবা গুণাবলীগুলো ধারন করতে হবে, বিশেষত সেই ধারনার উপর ভিত্তি করে অন্য জাতি কিংবা জাতিগোষ্ঠীকে উচ্চ কিংবা নিম্ন হিসেবে বিবেচনা করা” এবং সেই সব গোঁড়া ধারনার বহিঃপ্রকাশ করা।
বর্ণবাদকে সহজ ভাষায় ব্যাখা করতে গেলে বলতে হয় বয়স, লিংগ, ডেমোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য, জাত, ধর্ম, স্থানিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাউকে ছোট ভাবা কিংবা নিজেকে কারো চেয়ে বড় ভাবা এবং তদনুযায়ী কারো সাথে বৈষম্য করা, কিংবা কারো সেইসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপহাস করা।
উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী আমরা স্পষ্টতই বলতে পারি আসিফ মহিউদ্দীন এবং অন্য নাস্তিকরা যা করছেন তা চরম বর্ণবাদের উদাহরন। তারা ধর্মকে নিয়ে উপহাস করেন, মানুষের ধর্মীয় বইকে চটির সাথে তুলনা করেন, তাদের নিয়ে ব্যংগ বিদ্রূপ করেন।
বর্ণবাদ একটি চরম ঘৃণ্য অপরাধ, আমরা দেখতে পাই সামান্য বর্ণবাদী মন্তব্য করার জন্য আদালত বড়বড় সেলিব্রেটিকেও অভিযুক্ত করতে ছাড়েন না, বড় বড় সংস্থাগুলো সবসময়েই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমাদের তথাকথিত মানবতা লালনকারীদের মানবতা এই বর্ণবাদী আচরনের সময় কোথায় যায় আমার জানতে বড় ইচ্ছে হয়। আসিফ মহিউদ্দীনের কথায় ধার্মিকদের প্রতি যে ঘৃণা প্রকাশ পায় সেটা কোন সুস্থ মানবের অন্তঃস্থিত মনোভাব সেটা আমার বিশ্বাস হয়না। আপনারাই বলুন এমন ঘৃণ্য বর্ণবাদীর প্রতি কি মনোভাব পোষন করা উচিত।
কতিপয় নাস্তিকের তুলনামূলক সমালোচনাঃ
গত বেশ কয়েকদিনে আমি ফেসবুকে সরব কয়েকজন নাস্তিকের সাথে ফেসবুকে আলোচনা করে যা বোঝতে পেরেছি তাই এখানে শেয়ার করছি-
ভৌমিক দাঃ তিনি দাবি করেন তিনি ধর্মবিরোধী অর্থাৎ নাস্তিক। আমরা জানি নাস্তিকতার সূত্রপাত হয় নিজ ধর্মের কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিকগুলোর সমালোচনা করতে করতে। তিনি ইসলামের নানা দিক সম্পর্কে বেশ সচেতন, তবে কেন জানি হিন্দু ধর্মের বিশাল কুসংস্কারাচ্ছন্ন অঞ্চলের দিকে তার খুব একটা চোখ পড়ে না, তিনি জন্মগতভাবে হিন্দু। তার প্রোফাইলে দেখা যায় তার রূমে করা স্বরস্বতী পূজার ছবি দিয়েছেন বেশ সাড়ম্বরে, আরেকটা এলবামের নাম ‘বিশ্বরূপের মন্দিরে’, অর্থাৎ তিনি মন্দির দর্শনে গিয়েছিলেন- কিসের আশায় কে জানে, আবার রিসেন্টলি দেখলাম তিনি দোল উপলক্ষ্যে গায়ে বেশ করে রঙও মেখেছেন। জানি তিনি বলবেন এসবই তিনি আনন্দের জন্যে করেছেন, তবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয় ইসলামের প্রতি তার যে গভীর বিদ্বেষ প্রকাশ পায় সেই অনুভূতি কি তার হিন্দু বন্ধুদের প্রতিও আছে কিনা!
তবে তার যুক্তি শোনার মানসিকতা আছে, তিনি ধৈর্য ধরে যথাসম্ভব আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি কখনো টেম্পার লুজ করেন নি সেটা তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনন্য আজাদঃ ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের প্রতি তারও গভীর বিদ্বেষ। তিনি হুমায়ূন আজাদের ছেলে। তার লেখনি আমার কাছে আজাদ স্যারের মতো ততোটা স্ট্রং মনে হয়না তবে তার বয়েস কম, হয়তো সময়ের সাথে সাথে তার লেখনির আরো উন্নতি হবে তার বাবার মতো। ধর্ম এবং ধর্ম সম্পর্কে তার অনুভূতি যে বিশ্রী উপায়ে তিনি প্রকাশ করেন তাকে আমি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখি, হাজার হলেও তার বাবা ইসলামী জংগীদের হামলায় মৃত্যুপথযাত্রী হয়েছিলেন, বাবার খুনীদের প্রতি তার বিদ্বেষ থাকতেই পারে!তবে তাকে আরেকটু সংযত হতে অনুরোধ করবো।
অভিজিত রায়ঃ খুব সম্ভবত এই দাদা ফেসবুকের নাস্তিকদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী, নাস্তিকতার উপরে তার অনেকগুলা তথ্যবহুল বই আছে, এই মেলায় তার একটা বই এসেছে যার নাম ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, এক বন্ধুকে দিয়ে ২২৫ টাকায় বইটা কিনিয়েছি এবং পড়েছি, অসাধারন একটা বিশ্লেষনধর্মী বই। তার সজ্জন ব্যবহারে আমি মুগ্ধ, তাকে কখনোই আস্তিকদের গালাগালি করতে দেখিনি। আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম তাকে, তিনি খুব বিনয়ের সাথে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেছেন। তার প্রতি রইলো আমার শ্রদ্ধা…
এ ছাড়া ফেসবুকে নানা নিকে অনেককেই দেখা যায়, তাদের একটু পরিচয় দিচ্ছি। বিন লাদেন ভূত যিনি হিন্দু তার আসল নাম সজীব সূত্রধর, চিন্তিত সৈকত নামে একজন আছেন তিনি বৌদ্ধ, ঢাকা ঢাকা – তিনি একজন হিন্দু মেয়ে। রঙ্গিলা রছুল, অপ্রকাশিত সঞ্চালক, বাংলার চে গুয়েভারও হিন্দু। তারা নিজেদের ধর্ম ছেড়ে এসেছেন অন্যধর্মের পেছনে লাগতে, তাদেরকে কি বলবেন? তারা নাস্তিক নাকি সাম্প্রদায়িক???
সবশেষে আসিফ মহিউদ্দীনঃ তার লেখনি অনেক শক্ত এতে কোন সন্দেহ নেই। তার ব্যাপারে সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল, বর্ণবাদী সবগুলো বিশেষনই প্রবলভাবে খাটে। যে লোকের বেসিকেই সমস্যা, যিনি সদা মানবতার অপলাপ করে চলেছেন তার মুখে মানবতার কথা আমার কাছে বড় হাস্যকর শোনায়। তিনি শ্লীল-অশ্লীল সকল ভাষায় ধর্মকে গালাগালি করে নিজের অস্তিত্ত্ব জানান দিয়ে চলছেন। তিনি অভিজিতদা’র মতো ব্যাখা বিশ্লেষনে তেমন যান না কিংবা যেতে পারেন না, তার অজ্ঞতা তিনি কভার করতে চেষ্টা করেন গালাগাল আর অশ্লীল কথা দিয়ে। ভীষন জ্ঞানী, তিন চারটি নাস্তিক বইয়ের লেখক অভিজিতদা যেখানে চুপচাপ শুধু তার মতামত প্রকাশ করে চলেছেন কাউকে আঘাত না দিয়ে, সেখানে আসিফ মহিউদ্দীনের উল্লম্ফন আমাকে ভাবায়। সেটাকি ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী’ কিংবা খালি কলস বেশী বাজার লক্ষণ নাকি তার অসুস্থতার লক্ষণ???
তাকে বেশ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি এভাবে মানুষকে আঘাত করা অন্যায়, এগুলো সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং বর্ণবাদিতা। তিনি শোনেও না শোনার ভান করছেন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে আর বোঝাতে চেষ্টা করবো না, তিনি আপত্তিকর কিছু লিখলে শুধু তাতে লিখে আসবো, ‘আসিফ ভাই, get well soon, অর্থাৎ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন’। আপনারাও তাই করুন, তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা কিংবা গালাগালি করা হচ্ছে শুধুমাত্র কিলোবাইট আর সময়ের অপচয় মাত্র।
আসিফ ভাই আমার সাথে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন, তিনি বলেছেন বেশী মানুষের কথার উত্তর দিতে পারবেন না। আমি তাকে শুধু এইটা প্রমান করতে বলছি যে তিনি সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল কিংবা বর্ণবাদী নন, অন্যকারো কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দরকার নেই।
আমি এই নোটে বড়বড় কয়েকজন ব্লগার এবং বড় কয়েকজন ব্যক্তিত্ত্বকে ট্যাগ করছি কারন জাতি তাদের কাছে এই ব্যাপারে তাদের মতামত জানতে চায়। তারা যদি বলেন আসিফ মহিউদ্দীন ঠিক কাজ করছেন, এভাবে নোংরামী করা এবং ছড়ানো ঠিক, সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং বর্ণবাদিতা ঠিক, তবে আমি কোনদিন এই বিষয়ে আর কোন কথা বলবো না সেই কথা দিলাম… ধন্যবাদ…!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:০৭