somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংকলন : আব্দুল মালেক আল-কুলাইব
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
http://www.islamhouse.com/p/262011

অনুবাদকের কথা
সকল বিষয়ে যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত। যিনি জীবন ও মৃত্যুর আবর্তন ঘটান, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন, কে ভালো কাজ করে আর কে করে মন্দ কাজ। তাঁর আরো প্রশংসা করি এ জন্য যে, তিনি যুগে যুগে নবী ও গ্রন্থ পাঠিয়ে মানবসন্তানদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেছেন আর জাহান্নাম থেকে সতর্ক করেছেন।
কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের পক্ষ হতে সালাত ও সালাম নিবেদিত হোক আমাদের রাসূল, আল্লাহর বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি। যিনি আজীবন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীদের প্রতিও সালাত ও বরকত নাযিল হোক মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে।
কেয়ামতের আলামত, কবরের আযাব, মরনের পরে ইত্যাদি নামে অনেক বই-পুস্তক বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু কোনটিই যেন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর মানদন্ডে একশ ভাগ উন্নীত বলে দাবী করতে পারছি না। সেখানে যেমন আছে দূর্বল হাদীসের ছড়াছড়ি, তেমনি আছে সনদ-সুত্রবিহীন কথার ফুলঝুড়ি আর সপ্নের বর্ণনা ও অলীক কল্প-কাহিনী। আহওয়ালুল কিয়ামাহ নামক আরবী বইটি বেশ অনেক আগেই হাতে এসেছে। পাঠ শেষে নিয়ত করলাম অনুবাদ করে ফেলবো। চেষ্টা করলাম মাত্র। আল্লাহ যদি স্বীয় অনুগ্রহ ও দয়ায় এ শ্রমটুকু কবুল করেন তাহলে তার দীন প্রচারে অংশ নেয়ার সওয়াব পাবো। আর যারা বইটি পড়বেন ও অন্যকে উপকৃত করবেন তারা কি মাহরূম হবেন? না, কখনো নয়। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যাপক।
বইটির আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কয়েকটি কথা:
এক. বইটি শুরু করা হয়েছে কেয়ামত দিয়ে। তাই কেয়ামতের আলামতের বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়নি।
দুই. কোন একটি বিষয়ে একাধিক আয়াত ও হাদীস থাকা সত্বেও একটি আয়াত বা একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে পাঠক যেন এ কথা বুঝে না নেন যে, এ বিষয়ে এর বাহিরে কোন আয়াত বা হাদীস নেই।
তিন. অনুবাদের ক্ষেত্রে সকল আয়াত ও হাদীসের আরবী টেক্সট দেয়া হয়েছে। যাতে সম্মানিত, ইমাম, খতীব, ওয়ায়েজীনে কেরাম, দাওয়াত-কর্মী ভাইয়েরা সাধারণ পাঠকের চেয়ে বেশী উপকৃত হতে পারেন। এবং এ বিষয়ে এ বইটি যেন তাদের জন্য একটি সংগ্রহ হিসাবে গণ্য হয়।
চার. অনুবাদ করার সাথে সাথে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যা আমি নিজে সংযোজন করেছি। এটি মুল গ্রন্থাকারের নয়। গ্রন্থকার শুধু শিরোনামের অধীনে আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। যেহেতু তিনি বইটি আরবীভাষীদের জন্য লিখেছেন তাই ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন মনে করেননি।
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
২০ জিলহজ, ১৪৩০ হিজরী

ভূমিকা
হে আল্লাহর বান্দাগণ! কেয়ামত আসবেই। স্পষ্টভাবেই আসবে। আসবে সময় মত। কিন্তু মানুষ কি এ জন্য উপদেশ গ্রহণ করছে? নিচ্ছ কি কোন প্রস্তুতি? আচ্ছা কেয়ামত না হয় আমরা দেখতে পাচ্ছি না এখন, কিন্তু প্রতিদিন আমাদের আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, প্রতিবেশীর মৃত্যু তো আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এটাতো অস্বীকার করতে পারি না, কিংবা এতে সন্দেহ করতে পারি না। তা সত্বেও এর জন্য আমরা কী প্রস্তুতি নিচ্ছি? কী উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করছি?
আসলে আপনার সত্যিকার বন্ধু সে, যে আপনাকে এগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আপনার সত্যিকার দুশমন সে, যে আপনাকে দুনিয়ার লোভ লালসার পথ দেখায়। আখেরাত সম্পর্কে আপনাকে করে বিভ্রান্ত ও সন্দেহপ্রবন।
আমাদের ভুলে গেল চলবে না এ পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সকলের উপস্থিত হতে হবে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর কাছে। এরপর হয়ত আমরা যাবো জান্নাতে অথবা জাহান্নামে, যেখানের বসবাস হবে স্থায়ী। যেখানে নেই কোন জীবনাবসান।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক(শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। (সূরা আল ফাতির, আয়াত : ৫-৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হ, তখন তোমরা যমীনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৩৮)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
আর তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্লতায় আছে, অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই নগণ্য। (সূরা আর রাদ, আয়াত ২৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
টাকা-পয়সার দাস ধ্বংস হোক, রেশম কাপড়ের দাস ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস। এদের অবস্থা হলো, তাদেরকে প্রদান করা হলে খুশী হয় আর না দিলে অসন্তুষ্ট হয়। ধ্বংস হোক! অবনত হোক! কাঁটা বিঁধলে তা যেন উঠাতে না পারে।
তবে সৌভাগ্যবান আল্লাহর ঐ বান্দা যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, মাথার চুল এলোমেলো করেছে ও পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করেছে। যদি তাকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া তবে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। যদি তাকে বাহিনীর পিছনে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তা পালন করে। যদি সে নেতার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চায় তবে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। যদি সে কারো জন্য শুপারিশ করে তবে তার শুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।” বর্ণনায় : বুখারী।
আমার কত বন্ধু-ইচ্ছে করলে আমি তাদের নাম বলতে পারি- কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করায় লিপ্ত রয়েছে, পাপাচারের জেলখানায় বন্দি হয়ে আছে, কিন্তু তারা মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী হিসাব-নিকাশ থেকে একেবারে বেখবর।
আর আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন, তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দিয়েছেন তখন আমার কাজ হলো তাদের নসীহত করা এবং সত্য-সঠিক পথে যেতে সাহায্য করা।
চিন্তা করে দেখি আজ যদি আমার মৃত্যু এসে যেত তাহলে আমি কিছুক্ষণ পর মাটির নিচে চলে যাবো। আমার পাপগুলো লিখিত থাকতো, সেগুলোই আমার সঙ্গী হতো। এ কথা চিন্তা করলে নিজের কুপ্রবৃত্তি দমন হয়ে যেত। পাপাচারের উপকরণগুলো আমার থেকে দূরে চলে যেত।
হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় করুন। পৃথিবীর এ সুখ-শান্তি চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত ক্রমেই এগিয়ে আসছে।
মৃত্যুর সময়ের কথা একটু চিন্তা করুন। তখন যদি আমার পাপের বোঝা ভারী হয় সৎকর্মের চেয়ে তাহলে কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে।
এক কবি চমৎকার বলেছেন :
যদি এমন হত আমরা মরে যাবো আর আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে
তাহলে মৃত্যু হত সকল প্রাণীর জন্য শান্তির বার্তা।
কিন্তু কথা হল আমরা যখন মরে যাবো তখন আমাদের হাজির করা হবে
আর এরপর প্রশ্ন করা হবে সকল বিষয় সম্পর্কে।
হে আল্লাহর বান্দা! আমি এ গ্রন্থে বরযখের অবস্থা, প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার পরের অবস্থা, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা ইত্যাদি দেয়ার চেষ্টা করেছি আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে। জীবনের প্রতি দীর্ঘ লোভ ও ভোগ-বিলাসিতার আশা পরিত্যাগ করুন, আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিন।
মহান রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এ পুস্তকটি দিয়ে পাঠকদের, সর্বোপরি সকলকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। জান্নাত লাভে আগ্রহীদের জন্য এটাকে সাহায্যকারী হিসাবে কবুল করুন।
আল্লাহ তাআলার কাছেই আমার সকল বিষয় উপস্থাপিত। সকল বিষয়ে আমি তার উপর তাওয়াক্কুল করি। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি সর্বোত্তম কর্ম-বিধায়ক। মহান পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সামর্থ ছাড়া কেহ খারাপ কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারে না। আর তার তাওফিক ব্যতীত কেহ নেক আমল করতে পারে না।

আব্দুল মালেক আল কুলাইব


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:১৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ মনে হচ্ছে এখনো আগের অবস্থানেই আছে.......… !

লিখেছেন মামুন ইসলাম, ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৫


এখনো পর্যন্ত আমরা তোফাজ্জলের বিচারের কোনো কুলকিনারা করতে পারলাম না বিচার চাওয়ার সময়তাও পেলাম না এর আগেই আমাদের ব্যাস্ত হয়ে পড়তে হলো পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের জন্য। পাহাড় থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিবিরকে ছাত্রলীগ পদ দিলো কেনো ? কোন যোগ্যতায় ?

লিখেছেন মাহমুদ পিয়াস, ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪১

আপনাদের বড় প্রশ্নের মাঝে, একটা ছোট প্রশ্ন করি ?

"শিবিরকে, ছাত্রলীগের পদ দিতে হলো কেনো ?"..

ছাত্রলীগ বিরোধীরা সেই সময়ে বলতেন, "ছাত্রলীগে যে যত বেশী বিরোধীদল পিটাইতে পারবে, সে তত বড় পদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এটা ১০০% রাজনৈতিক পোস্ট। যাহারা ত্যানা প্যাঁচাইতে চান প্যাঁচাইতে পারেন বাট "আই ডোন্ট কেয়ার"। ;)

লিখেছেন সোহানী, ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫৫




"আই হেইট পলিটিক্স" এর দলের সদস্য হয়েও এ লিখাটি লিখেছি কারন আন্দোলনে আমরা দেশের বাইরে থেকে কিভাবে সংশ্লিষ্ট হয়েছি তা বিশ্বাবাসীকে জানাতে। আজ থেকে ১০ বছর পর যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন-খারাবি'তে নিজের বাপকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল সস্তায় ক্ষমতা পাওয়া হাসিনা

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



৪ঠা আগস্ট রাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক নেতা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সময় টাকা বিলি-বণ্টন করা হয় । সর্বশেষ বৈঠকটি হয় তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সোনাগাজী ভাইয়ের শেষ পোস্টের সাথে আমি একমত নই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০১



সোনাগাজী ভাই তাঁর কোমলমতিদের চিনে ফেলেছে মানুষ, দেশের পরিস্হিতি অবনতির দিকে যাবে নামের শিরোনামের পোস্টে জামায়াতে ইসলামী দলকে গত ছাত্র আন্দোলনের পুরো ক্রেডিট দিয়েছেন। আমি এঁর প্রতিবাদ করছি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×