বিশ্বকাপ ফুটবলের বিশতম আসরের গ্রুপ পর্বের খেলা চলছে। প্রতিটি বিশ্বকাপেই কোনো না কোনো বিষয় তৈরি করে তুমুল আলোচনা। আগামী দিনগুলোতে কী হবে বলা না গেলেও ব্রাজিল বিশ্বকাপের এ মুহূর্তের আলোচিত বিষয় আত্মঘাতি গোল। এরই মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে আত্মঘাতি গোল তৈরি করেছে একাধিক রেকর্ড।
এবারের বিশ্বকাপে গোলের খাতা খুলে আত্মঘাতি গোল দিয়েই। খেলা মাঠে গড়ানোর শুরুতেই আত্মঘাতি গোলের ফাঁদে পড়ে পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ী স্বাগতিক ব্রাজিল। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খেলার ১১ মিনিটেই ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলে ভিয়েরা নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন। বিশ্বকাপের আগের ১৯ আসরের প্রথম ম্যাচের প্রথম গোলটি কখনোই আত্মঘাতি হয়নি। এটি একটি রেকর্ড।
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে অংশ নিচ্ছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের বিশ্বকাপে খেলার এযাবৎ কালের ইতিহাসে এটিই প্রথম আত্মঘাতী গোল হজমের রেকর্ড।
বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে দ্রুততম আত্মঘাতি গোল হজম করার রেকর্ডটি হলো এবারের আসরেই। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর মাত্র তিন মিনিটের মাথায়ই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ডিফেন্ডার জিয়াদ কোলাসিনাচ নিজেদের জালে বল জড়িয়ে ফেলেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি যৌথভাবে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে আত্মঘাতি গোলের রেকর্ড।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের চতুর্থ দিনের ফ্রান্স বনাম হন্ডুরাস ম্যাচেও একটি আত্মঘাতি গোলের ঘটনা ঘটে। খেলার ৪৮ মিনিটে হন্ডুরাসের গোলরক্ষক ভাল্লাদেরেসের একটি আত্মঘাতি গোল করেন।
চতুর্থ দিন শেষে এবারের বিশ্বকাপের খেলা হয়েছে মাত্র ১১টি। এর মধ্যে আত্মঘাতি গোলের দেখা পাওয়া গেছে ৩টি ম্যাচে। এ কারণেই সামনের দিনগুলোতে আরো আত্মঘাতি গোলের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সমর্থকদের মাঝেও ভর করেছে আত্মঘাতি গোল আতংক।
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে আত্মঘাতি গোলকে কেন্দ্র করে ঘটে ছিল এক নির্মম ও দুঃখজনক ঘটনা। ওই আসরের স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কলম্বিয়ার ম্যাচে মার্কিন ফরওয়ার্ডের করা একটি ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার আন্দ্রে এসকোবার নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে ফেলেন। এ ঘটনার জন্য তাকে হারাতে হয় জীবন। দেশে ফেরার পর পরই আততায়ীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। আততায়ীদের একজন এসকোবারকে পর পর ১২টা গুলি করে আর প্রত্যেকবার গুলি করার সময় একবার করে বলে, গো ও ও ল।
একান্তই অনিচ্ছাকৃত ভুলে হয়ে যাওয়া আত্মঘাতি গোলের কারণে এধরনের বর্বরোচিত ও কলঙ্কজনক ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল প্রেমির।
এবার বিশ্বকাপ ফুটবলের আত্মঘাতি গোলের রেকর্ডবুকে চোখ রাখা যাক।
আত্মঘাতি গোলের রেকর্ডবুক
বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম অাসরেই আত্মঘাতি গোলের দেখা মিলে। উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে ১৯৩০ সালের ১৬ জুলাই চিলি-মেক্সিকো ম্যাচের ৫১ মিনিটে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম আত্মঘাতি গোল করেন মেক্সিকোর ম্যানুয়েল রোসেস। এ আসরে এটিই ছিল একমাত্র আত্মঘাতি গোল।
বিশ্বকাপ ফুটবলে এ পর্যন্ত আত্মঘাতি গোল হয়েছে ৩৯টি।
১৯৩৪, ১৯৬২ ও ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের আসরে একটিও আত্মঘাতি গোল হয়নি।
১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে এক আসরে সর্বাধিক ৬টি আত্মঘাতি গোল হয়।
বিশ্বকাপের সব আসর মিলিয়ে সর্বাধিক আত্মঘাতি গোল হজম করেছে মেক্সিকো, স্পেন ও বুলগেরিয়া (৩টিকরে)।
বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্রুততম আত্মঘাতি গোল হয় খেলা শুরুর তিন মিনিটে দুটি খেলায়। চলতি বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার জিয়াদ কোলাসিনাচ এবং ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে খেলার তিন মিনিটে প্যারাগুয়ের কার্লোস গামারা নিজেদের জালে বল পাঠান।
২০০২ সালের কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরে এক ম্যাচে দুই দলই নিজেদের জালে বল পাঠায়। পর্তুগাল বনাম যুক্তরাষ্ট্রের এই ম্যাচের ২৯ মিনিটে পর্তুগিজ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জর্জ কস্তা এবং ৭১ মিনিটে মার্কিন ডিফেন্ডার জিওফ এগোস আত্মঘাতি গোল করেন। এ ঘটনা বিশ্বকাপের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে।
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে এক টুর্নামেন্টের দুই ম্যাচে দুটি আত্মঘাতি গোলের রেকর্ড বুলগেরিয়ার।
১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলার অতিরিক্ত সময়ে (৯৪ মিনিটে) বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলায় ইংল্যান্ডের জেমি ডিকসন আত্মঘাতি গোলে করেন। এটিই অতিরিক্ত সময়ে একমাত্র অাত্মগাতি গোলের রেকর্ড।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে নেদারল্যান্ডসের ইরেন ব্রান্ডসই একমাত্র ফুটবলার যিনি নিজেদের জালে বল পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিপক্ষের জালেও বল পাঠান। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ইতালির বিরুদ্ধে ম্যাচে তার আত্মঘাতি গোলে ইতালি এগিয়ে যায়। পরে ব্রান্ডসই নেদারল্যান্ডসের পক্ষে গোল করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটিতে ২-১ গোলে জয়ী হয় নেদারল্যান্ডসই।
২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ত্রিনিদাদ ও টোবাগোই একমাত্র দল, যারা নিজেদের জালে একবার বল পাঠানো ছাড়া প্রতিপক্ষের জালে একটাও বল পাঠাতে পারেনি।
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের আসরে ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলে ভিয়েরা স্বাগতিক দলের প্রথম খেলায় এবং টুর্নামেন্টের প্রথম গোলটি করেন নিজেদের পোস্টে বল পাঠিয়ে।
নিউজ লিংক এখানে > প্রতিমুহূর্ত ডটকম
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৬