বিশ্বকাপের বিশতম আসরের পঞ্চম দিনে প্রথম হ্যাট্রিকের দেখা পেল ফুটবলপ্রেমিরা। জার্মান স্ট্রাইকার থমাস মুলার পর্তুগালের জালে তিনবার বল পাঠিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাট্রিক করলেন।
থমাস মুলার গতবারের বিশ্বকাপে অভিষেকেই সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের নিজের সপ্তম ম্যাচ খেলতে নেমেই হ্যাট্রিক করলেন মুলার। বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে এখন তার গোলের সংখ্যা ৯। মুলারের সামনে এখন রেকর্ডের হাতছানি। বিশ্বকাপের আসরে এখন পর্যন্ত কেউ পরপর দুইবার গোল্ডেন বুট জিততে পারেনি। আর এটা যদি তিনি করে দেখাতে পারেন তবে সৃষ্টি করবেন নতুন রেকর্ড।
থমাস মুলার সেই রেকর্ড গড়তে পারেন কিনা সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন। তার আগে চলুন বিশ্বকাপ ফুটবলের রেকর্ডবুকে হ্যাট্রিক অধ্যায় থেকে ঘুরে আসি।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত হ্যাট্রিক সংখ্যা
৪৯টি (চলতি আসরের মুলারের হ্যাট্রিকসহ)।
বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরে প্রথম হ্যাট্রিক করেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনার্ড। প্যারাগুয়ের জালে পর পর তিনবার বল পাঠিয়ে তিনি ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।
প্রথম হ্যাট্রিক নিয়ে বিতর্ক
বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম হ্যাট্রিক কে করেন, এই নিয়ে চলেছে দীর্ঘদিন বিতর্ক। ফিফার রেকর্ডবুকে প্রথম হ্যাট্রিক-করা ফুটবলার হিসেবে দীর্ঘদিন আর্জেন্টিনার লিজেন্ড ফুটবলার গুইলার্মো স্ট্যাবির নাম উল্লেখ ছিল। ২০০৬ সালে ফিফা এই তথ্য সংশোধন করে বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাট্রিককারি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনার্ডের নাম ঘোষনা করে। কারণ ১৯৩০ সালের ১৭ জুলাই প্যারগুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে হ্যাট্রিক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাটেনার্ড। এর দুদিন পর অর্থাৎ ১৯ জুলাই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করেন আর্জেন্টিনার গুইলার্মো স্ট্যাবি।
অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিক
বিশ্বকাপ ফুটবলের অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিক করার রেকর্ডটা ১৯৩০ সালে গড়েছেন আর্জেন্টিনার গুইলার্মো স্ট্যাবি। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
প্রথম আসরে তিন হ্যাট্রিক
১৯৩০ সালের বিশ্বকাপের প্রথম আসরে হ্যাট্রিক হয়েছিল মোট তিনটি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেনার্ডে এবং আর্জেন্টিনার গুইলার্মো স্ট্যাবি পরে হ্যাট্রিক করেন স্বাগতিক উরুগুয়ের পেদ্রোচি। সেমিফাইনালে যুগোশ্লাভিয়ার জাল তিনি তিনবার বল পাঠান।
এক আসরে সর্বাধিক হ্যাট্রিক
১৯৫৮ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৮টি হ্যাট্রিক হয়।
এক আসরে সর্বনিম্ন হ্যাট্রিক
এক আসরে সর্বনিম্ন একটি মাত্র হ্যাট্রিক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তিনবার। ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে এবং ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে মাত্র একটি করে করে হ্যাট্রিক হয়। তবে হ্যাট্রিক শুন্য বিশ্বকাপ আসর এখনও পাওয়া যায়নি।
সর্বাধিক হ্যাট্রিক পাওয়া দল
বিশ্বকাপের ২০টি আসরে এ পর্যন্ত সর্বাধিক ৭টি হ্যাট্রিকের দেখা পেয়েছে জার্মানি।
বিশ্বকাপে চার ফুটবলারের দুই হ্যাট্রিক
বিশ্বকাপের খেলার মাত্র চারজন ফুটবলার দুটি করে হ্যাট্রিক করেছেন। তারা হলেন হাঙ্গেরির সানডর কসিস (দুটোই ১৯৫৪ সালে), ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেনি (দুটোই ১৯৫৪ সালে), জার্মানির গার্ড মুলার দুটোই ১৯৭০ সালে) এবং আর্জেন্টিনার গাব্রিয়াল বাতিস্তুতু (১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে)।
হ্যাট্রিকসহ একম্যাচে ৫ গোল
রাশিয়ার ওলেগ সেলেঙ্কো একমাত্র ফুটবালার যিনি হ্যাট্রিকসহ বিশ্বকাপের একম্যাচে সর্বোচ্চ ৫ গোল করেছেন। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরুনের জালে পাঁচবার বল জড়িয়ে তিনি এই বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
হ্যাট্রিকসহ চার গোল করলেও দল পরাজিত
১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের আর্নেস্ট উইলিমস্কি হ্যাট্রিকসহ চার গোল করলেও তার দল ব্রাজিলের কাছে ৬-৫ গোলে হেরে যায়।
হ্যাট্রিক করলেও দল পরাজিত
দুই ফুটবলার হ্যাট্রিক করেও নিজ দলের পরাজয় ঠেকাতে পারেননি। তারা হলেন- সুুইজারল্যান্ডের জোসেফ হুজি (১৯৫৪ সালে অস্ট্রিয়ার কাছে হেরে যায় ৭-৫ গোলে) এবং রাশিয়ার লর বেলানভ (১৯৮৬ সালে বেলজিয়ামের কাছে হেরে যায় ৪-৩ গোলে)।
একম্যাচে দুই হ্যাট্রিক
বিশ্বকাপের এক ম্যাচে দুইটি হ্যাট্রিকের ঘটনা ঘটেছে তিনবার। ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কিউবার বিরুদ্ধে ৮-০ গোলে জয়লাভ করে সুইডেন। দলে হয়ে হ্যাট্রিক করেন গুস্তাভ ওয়েটেরস্ট্রম এবং হ্যারি অ্যান্ডারসন। ১৯৩৮ সালের এই বিশ্বকাপেই ব্রাজিল বনাম পোল্যান্ড ম্যাচে বিজয়ী দল ব্রাজিলের হয়ে হ্যাট্রিক করেন লিওনিদাস দ্যা সিলবা এবং পরাজিত দল পোল্যান্ডের আর্নেস্ট উইলিমস্কি হ্যাট্রিকসহ চার গোল করেন। ম্যাচে ব্রাজিল ৬-৫ গোলে পোল্যান্ডকে হারায়।১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অস্ট্রিয়া বনাম সুইজারল্যান্ড ম্যাচে থিওডোর ওয়াগনার (অস্ট্রিয়া) এবং জোসেফ হুজি (সুইজারল্যান্ড) হ্যাট্রিক করেন। খেলায় অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলে জয়ী হয়।
বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাট্রিক
কেবল একজন প্লেয়ারই বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচে হ্যাট্রিক করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানি ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে স্বাগতিক দলের জিওফ হার্স্ট হ্যাট্রিক করেন। এই ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে তার করা দুই গোলে পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে ইংল্যান্ড।
দ্রুততম সময়ে হ্যাট্রিক
বিশ্বকাপ ফুটবলের ১৯৫৪ সালের আসরে চেকোস্লাভাকিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর ২৪ মিনিটের মধ্যে হ্যাট্রিক করেন অস্ট্রিয়ার এরিক প্রোবস্ট। খেলার ৪, ২১ ও ২৪ মিনিটে পর পর তিনবার তিনি প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান। হ্যাট্রিক করার জন্য তিনি সময় নেন ২১ মিনিট।
দ্রততম গতিতে হ্যাট্রিক
হ্যাট্রিক করার জন্য মাত্র সাত মিনিট সময় নিয়েছিলেন হাঙ্গেরির লেজিও কিস। ১৯৮২ সালে এল সালভেদরের বিরুদ্ধে ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে ম্যাচের ৬৯, ৭২ ও ৭৬ মিনিটে গোল করে দ্রুততর গতিতে হ্যাট্রিক সম্পন্ন করেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে হ্যাট্রিক করার একমাত্র রেকর্ডও এটি।
তিন হেডে হ্যাট্রিক
কেবল হেড দিয়ে তিনবার প্রতিপক্ষের পোস্টে বল পাঠিয়ে হ্যাট্রিক করেন চেকোস্লাভাকিয়ার থমাস স্কোরাভি। ১৯৯০ সালে ইতালি অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি এই হ্যাট্রিক করেন।
হ্যাট্রিক করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়
১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পেলে ১৭ বছর ২৪৪ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করেন।
অন্যরকম হ্যাট্রিক
১৯৩৮ সালে হাঙ্গেরির গোয়েলা জেনগেলের সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচে দুইবার প্রতিপক্ষের জালে আর একবার নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে অন্যরকম হ্যাট্রিক করেন। ফিফা অবশ্য একে হ্যাট্রিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে হ্যাট্রিক রেকর্ডবুক ঘটনাটি ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে।
নিউজ লিংক এখানে > প্রতিমুহূর্ত ডটকম
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৯