"ইগ নোবেল" নামটি এসেছে ইংরেজি "Ignoble" আর "Nobel Prize" শব্দ দুটোর মিশ্রন থেকে। এটি একটি সন্মাননা বা পুরস্কারের নাম যেটিকে মূলত নোবেল পুরস্কারের "প্যারডি" হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে "Annals of Improbable Research" নামে একটি পাক্ষিক সাময়িকীর সম্পাদক এবং যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক আব্রাহামস এই পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। প্রতি বছর বেশ কিছু ক্যাটেগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয় যার মধ্যে রয়েছে রসায়ন, পদার্থ, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি ইত্যাদি। ইগ নোবেল প্রাইজ সাধারণত সেই সকল আবিস্কারকে উৎসাহিত করতে দেওয়া হয় যেগুলো প্রথমে হাসির উদ্রেক করলেও পরবর্তীতে মানুষকে ঐ বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে উদ্ভুদ্ধ করে। মূলত জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপারে মানুষকে আরও উৎসাহী করে তোলা এবং ব্যতিক্রমধর্মী সব আবিস্কারকে স্বীকৃতি দেওয়াই ইগ নোবেল প্রাইজের আসল উদ্দেশ্য। সে হিসেবে ইগ নোবেল প্রাইজকে নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
২৫ টি মজার ইগ নোবেল প্রাইজ কে তুলে ধরা হয়েছে নিচের ভিডিওটিতেঃ
এবার চলুন নির্বাচিত কিছু ইগ নোবেল প্রাইজ বিজয়ীদের নাম ও তাদের কাজের কথা জানা যাক।
১। ২০০২ সালে N. Bubier, Charles Paxton, Phil Bowers এবং D. Charles Deeming বায়োলজি বিভাগে ইগ নোবেল পুরস্কার পান। তারা গবেষণা করেন উটপাখির উপর। তবে তাদের গবেষণার বিষয়টি ছিল অদ্ভুত আর মজার। উটপাখির খামারের মালিকেরা দেখতে পান যে উটপাখিকে খামারে আবদ্ধ অবস্থায় রেখে মানুষের তত্ত্বাবধানে লালন পালন করলে এরা বেশী পরিমানে এবং তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করে। এর কারণ অনুসন্ধানে নেমে উপরে উল্লিখিত বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে খামারে উটপাখিরা যখন মানুষের সান্নিধ্যে আসে তখন এরা বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং যৌন ক্রিয়ায় অধিক আগ্রহ দেখায়। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম পুরুষ প্রজাতির কোন প্রানী প্রজনন মৌসুমে একই প্রজাতির স্ত্রী সদস্যকে দেখলে যেমনটি উত্তেজিত হয় উটপাখিও মানুষকে আশেপাশে দেখলে তেমন উত্তেজিত হয়ে ওঠে! এবং ফলশ্রুতিতে তাদের প্রজনন ক্ষমতা ও প্রজনন হার দুটোই বৃদ্ধি পায়!
২। ২০০০ সালে শান্তিতে ইগ নোবেল দেওয়া হয় The British Royal Navy কে। ঐ বছর ব্রিটিশ সরকার সামরিক বাজেট হ্রাস করে। অনেকটা এর নীরব প্রতিবাদস্বরূপ ব্রিটিশ নেভি শিক্ষানবিসদের কামানের গোলা কিভাবে ছুঁড়তে হয় সেটা শেখানোর সময় সত্যিকারের গোলা ব্যবহার না করে গোলা ছোঁড়ার সময় বাচ্চাদের মত খেলার ছলে মুখে "ব্যাং" বলে শব্দ করে! এ নিয়ে গণমাধ্যমে ঐ সময় বেশ তোলপাড় হয়।
৩। ২০০৯ সালে গণস্বাস্থ্য বিভাগে ইগ নোবেল দেওয়া হয় Elena Bodnar, Raphael Lee, and Sandra Marijan কে। এই দলটি এমন এক ধরনের ব্রা আবিস্কার করেন যেটি একই সাথে ব্রা এবং ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়! যদিও জিনিসটা প্রাথমিকভাবে খুব হাস্যকর শোনায় তথাপি আবিস্কারকদের দাবি এতে করে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা জরুরি অবস্থায় ব্রা পরিধানকারী খুব সহজেই তার ব্রাটিকে দুটি ফেস মাস্কে রূপান্তর করে ফেলতে পারবেন এবং একটি তিনি তার নিজের জন্যে রেখে অন্যটি তার সঙ্গীকে দিতে পারবেন!
ইগ নোবেল প্রাইজ প্রদান অনুষ্ঠানে এলেনা ও তার টিম এর কথা শুনতে নিচের ভিডিওটি দেখুনঃ