টেকনোলজি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনকে করেছে এবং প্রতিনিয়ত করে চলেছে আগের চেয়ে অনেক বেশী গতিময়, আনন্দদায়ক আর সহজ। কিন্তু আজ আমি সেই গল্প লিখতে বসি নি। অবশ্যই মানুষের জীবন আর টেকনোলজি নিয়েই লিখব তবে যে মানুষটিকে নিয়ে লিখব সে আমাদের মত আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন। লোকটির নাম হেনরি ইভান্স। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেন যার ফলে তিনি পঙ্গু ও বোবা হয়ে যান। জীবনের কঠিনতম সময়ে হেনরির সাহায্যে এগিয়ে আসেন "Willow Garage" নামে এক রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তারা হেনরির পঙ্গু শরীরের বিকল্প হিসেবে এমন একটি রোবটকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন যেটাকে হেনরি তার মাথার তাৎক্ষণিক নাড়াচাড়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।
হেনরির রোবট নিয়ে একটি YouTube ভিডিও এখানেঃ
হেনরির রোবটটি যেন ওঁর শরীরেরই একটি অঙ্গ। এর সাহায্যে হেনরি এখন করে ফেলতে পারেন দৈনন্দিন জীবনের অনেক দরকারি কাজ। অনেকটা হেটে চলে নিজের কাজ নিজে করার মত ব্যাপার। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। হেনরি বিশ্বাস করেন প্রত্যেকটি মানুষেরই সীমাবদ্ধতা বা ডিজএবিলিটি রয়েছে। উদাহরন হেনরি মানুষের গতিকে তার গাড়ির সাথে তুলনা করেছেন। মানুষ নিজে খুব দ্রুতগতিতে চলতে না পারলেও সে চার চাকার গাড়িকে দিয়ে নিজের অক্ষমতাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। তেমনটি হেনরির বিশ্বাস তিনি একদিন ঠিকই স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বেশী কিছু করতে সক্ষম হবেন। এবং তিনি ইতোমধ্যেই তা কিছুটা পেরেছেন বৈকি! হেনরি নিজে নিজে বাড়ির বাইরে যেতে না পারলেও ঠিকই "Superman" এর মত উড়ে উড়ে বাইরের পরিবেশ দেখে নিতে পারেন! মানুষ জন্মগতভাবেই উড়তে পারে না কিন্তু হেনরি কিভাবে পারলেন? এখানেও প্রযুক্তিই তার সহায়। হেনরির বন্ধু "Chad Jenkins" শিখিয়ে দিলেন কিভাবে শূন্যে ভাসমান ড্রোন চালাতে হয়। চ্যাড শুধুমাত্র তাকে ড্রোন চালনাই শিখান নি, তিনি তাকে দেখালেন কিভাবে ড্রোন এর সাথে যুক্ত ভিডিও ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত ভিডিও কম্পিউটার এর সামনে বসে সরাসরি দেখা যায়। চ্যাড হেনরিকে এমন ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে করে হেনরি তার ড্রোন এর পাঠানো সব ভিডিও ওয়েব ব্রাউজার এর মাধ্যমে সরাসরি অবলোকন করতে পারেন। এই পদ্ধতির সাহায্যে হেনরি এখন নিজদের লাগানো আঙ্গুর গাছ ঘুরে দেখতে পারেন আবার ছাদের উপর উঠে সোলার প্যানেল পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজও করে ফেলতে পারেন। শুধু তাই নয় হেনরি 3D Gaming এর জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের বিশেষ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে তার ড্রোন থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে অনেকটা বাস্তবতার কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন। আর এভাবেই প্রযুক্তি একজন হেনরি ইভান্সকে জীবন্মৃত অবস্থা থেকে তুলে এনে এক নতুন জীবন দান করেছে যে জীবন নিয়ে তিনি এখন অনেকটাই সুখী!
হেনরির বন্ধু চ্যাড কাজ করছেন তাদের তৈরি করা ড্রোন এবং টেকনোলজি বীম এবং সেইসাথে প্রয়োজনীয় ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বাজারজাত করার কাজ শুরু করেছেন। হেনরির ঘটনা যদি আপনাকে অনুপ্রাণিত করে থাকে, তাহলে তার সম্পর্কে আরও জানতে তার ব্লগ ঘুরে আসতে পারেনঃ
হেনরির ব্লগ
হেনরিকে নিয়ে তৈরি টেড টকটি দেখতে পারেন এখানেঃ
হেনরির টেড টক