শাওন অফিসে বিষন্ম মনে বসে আছে অফিসের বসের ভুলক্রমে ঝাড়ির কারনে। একটু রিফ্রেশের তাড়নায় ফোন করলেন পারভেজ ভাইকে। ওপ্রান্ত থেকে পারভেজ ভাইও দীর্ঘনিশ্বস ফেলে কথা শুরু করলেন- কি খবর শাওন কেনম আছো। শাওন যেন শক খেল, যে ব্যক্তিটির কাছে ফোন করছে একটু খারাপ মনকে চাঙ্গা করার জন্য সেই পারভেজ ভাইয়ের দীর্ঘ নিশ্বস! পারভেজ জিঙ্গেস করল বস কোন সমস্যা নাকি? পারভেজ উত্তর করল, নারে কোন সমস্যা না মনটা বেশ খারাপ। শাওন পারভেজের খুব ভক্ত এবং পারভেজও শাওনকে খুব পচ্ছন্দ করে তার শান্ত/নম্র ভদ্র স্বভাকের কারনে।
শাওন প্রশ্ন করল- বস্ আপনার কোন সমস্যা? ওপাশ থেকে উত্তর না-রে ভাই আমার না, সমস্যাটা সমাজের। শাওন বুঝল কোন বিষয়ে তারও মনটা বেশ খারাপ আজ, তাই শাহস করে জিঙ্গেস করল- বস আমাকে কি বলা যায়। ওপাশ থেকে বলল শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিন্ত ফোন রাখতে পারবি না। শাওন বলল- বস শুরু করেন। পারভেজ বলা শুরু করল-
পারভেজ- আমার বন্ধু শান্তকে তো তুই চিনিস, ওর চাচাতো ভাই হাসিবকেও তো চিনিস।
শাওন- জ্বি ভাই
পারভেজ- হাসিবের এক সাইড প্রেমিকা আছে তাকে কি তুই চিনিস?
শাওন- না ভাই চিনি না।
পারভেজ- সাইড প্রেমিকা বললাম তোকে এই কারনে সে তো বিবাহিত এবং তার প্রথম বউকে ডিভোর্স দিয়ে আবারো বিয়ে করেছে সেটি তো জানিস?
শাওন- জ্বি ভাই সেটা জানি।
পারভেজ- যে মেয়েটি তার সাইড প্রেমিকা তার বাবা চাকুরী করে একটি ব্যাংকে, বাসা টঙ্গীতে, হিন্দু মেয়ে এবং একটু বেশী ফাস্ট। হাসিব তো দেখতে অনেক সুন্দর তাই সহজেই মেয়েটাকে পটাতে পেড়েছে। মেয়েটি তার রূপ দেখেই মজে গেছে। যখন প্রথম বউয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে যায় তখন মেয়েটির সাথে দহরম সম্পর্ক ছিল কিন্তু দ্বিতীয়বার আবার বিয়ে করার ফলে সে সম্পর্ক নাই। এবং একদিন পরিচয় করিয়ে দেয় শান্তর সঙ্গে। শান্তর চরিত্র সম্পর্কে তো তুই জানিস, আরেক মানিক। পরিচয়ের সময়ই মেয়েটির কাছ থেকে ফোন নম্বর নেয় এবং প্রতিনিয়ত ভাবি বলে ডেকে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে।
শাওন- জ্বি ভাই উনিতো আবার এসব দিক থেকে অনেক পটু, সাইজে ৪ফিট হলে কি হবে এসব কাজে জুড়ি মেলাভার বলে শোনা যায়। এমনকি উনার শালীর সাথেও নাকি অনেক খারাপ সম্পর্ক আছে বলে তার বন্ধু মহলে সবাই বলে।
পারভেজ- হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। তো যা হউক, হঠাৎ করেই কদিন আগে বলা শুরু করল, দোস্ত, ভাবির সাথে তো আমার দহরম মহরম সম্পর্ক, রাজধানীর খুপরি ক্যাপ আর ভাল লাগছে না, এখন একটু অতিকায় ভালবাসা প্রয়োজন। শুনেই তো বললাম, শান্ত একটু শান্ত হও, চেহারায় যতই বয়সের ছাপ না পড়ুক, বয়স কিন্তু কম হয় নাই, মাঝে বড়জোর আর মাত্র ১২বছর বাঁকি। তারপরই কিন্তু আজ যে বয়সী মেয়ে তোর প্রেমিকা, যার সাথে অতিভালবাসায় মগ্ন হতে চাও, তোমার মেয়ে হবে তার বয়সীই।
শাওন- সে নিশ্চয় আপনাকে বলেছে যে, আরে বাদদে তো নীতিকথা।
পারভেজ- হ্যাঁ, তাইয়। ওর যা স্বভাব। ও ফোন করেছেছিল ওর মামার বন্ধু পরবর্তীকালে ওরও বন্ধু মামুনের কাছে, তাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য। মামুন আমাকে ফোন করে বেশ আক্ষেপ করল, ভাই আপনাদের বন্ধু, কি বলব বলেন, এখনও যদি এধরনের স্বভাব থাকে তাহলে কি চলে। ওর মেয়ে আছে, বোন আছে একবারও কি ওদের কথা ভাবে না? উত্তর করে দিলাম আমার কোন কথা নাই। আমি সাদা-কালো মানুষ, আপনাদের বন্ধু, আপনাদের ভাইরা, আপনারাই ভাল জানেন।
শাওন- বস্ মামুন এমন স্বভাবের আপনি যদি শান্ত সম্পর্কে কিছু বলেন ওর কাছে ,ও শান্তকে বলে দেবে আপনার ফোন রাখার সাথে সাথে।
পারভেজ- সেটা জানি, বললে বলুক, আমি মামুনকে বলেছি ভাই আপনিও বাবা হতে চলেছেন দু'দিন বাদে, এসব আশ্রয় দেয়া একদম ঠিক হবে না। সেও রাজি হয়েছে।
শাওন- তা হলে তো ভালই।
পারভেজ- কিন্তু ওর মত খারাপ মানুষের ব্যবস্থা করে দেবার লোকের অভাব নাই। গতকাল দুপুরে মেয়েটি ফোন করেছিল, আমি শান্ত সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছিলাম যে ওর সম্বন্ধে ভাল ভাবে না জেনে আগানো তোমার ঠিক হবে না, কিন্তু মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে সেই কথাটি ওর কাছে বলে দিয়েছে। এর আগেও একদিন ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, সেদিনও বলেদিয়েছে।- শালা মেয়ে মানুষ!! এদের কখনও ভাল বুদ্ধি দিত নাই। এখন বেশী কিছু বলতেও পারি না রিলেশন রক্ষার্থে, কিন্তু এভাবে আর কত দিন কারো সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়? শান্তর সাথে সম্পর্ক সম্ভবত শেষ করতেই হবে।
শাওন- বস, আগেও অনেকবার বলেছেন।
পারভেজ- নারে! বলেছি কিন্তু সেই ছোটবেলার দোস্ত, ও যখন আবার গায়ে পরে কথা বলতে আসে তখন আর পারি না। কিন্তু আর কত দিন এইভাবে। ও যে আচরণ গুলো করছে দু'দিন বাদে আমার কারো সাথেও তো করতে পারে তাই না?
শাওন- জ্বি বস, কথাতো সেটাই।
পারভেজ- আজ দুপুরে আবার সে ফোন করল, বলল দোস্ত একটু স্পেসাল ভাবে সে আমার সাথে সময় কাটাতে চায় মামুন তো রাজি হচ্ছে না, তাই বাদদিলাম এসব। আসলে মূলত আমি যে ওকে নিষেধ করেছি এবং মেয়েটিকেও পরোক্ষভাবে নিষেধ করেছি সেই জন্য আমার কাছ থেকে লুকানোর জন্য এই কথাটি বলল। আমি ফোন করেছিলাম মেয়েটির কাছে, আপু খবর কি আপনার, ফোন রিসিভ করে কোন কথা বলে নাই, ফিস ফিস করে শান্ত পাশ থেকে বলছে রেখে দাও কথা বলো না এখন।
শাওন- ঘটনাতো খুব হৃদয়বিদারক রোমান্টিক তা হলে বস।
পারভেজ- তা হলে আর বলছি কি তোকে। আমি বেশ ব্যস্ত হয়ে পরায় আর খোজ নিতে পারি নাই, ঠিক সাড়ে ছটার সময় মেয়েটি ফোন করল ভাইয়া ফোন করেছিলেন নাকি। আমি উত্তর করলাম হ্যা তুমি তো ব্যস্ত ছিলা, খুব নরম সুরে মেয়েটি বলল, না ভাইয়া আমি তো হ্যালো হ্যালো বলছিলামই কিন্তু আপনিই তো কিছু বললেন না। আমি বললাম আমিতো শুনতে পেলাম না কিছুই যা হউক, এখন কোথায়, উত্তর করল এলাকাতেই। ঠিক সেই সময়ই শান্তর কন্ঠ, বাসয় পৌছে আমাকে ফোন দিয়ো। আমি বললাম, আমি ব্যস্ত আছি, বাসয় ফিরতে হবে এখন কথা বলতে পারব না।
শাওন- বস্। মেয়ে জাতিকে কখনও ভালো উপদেশ দিবেন না, আর তার বয়র্ফেন্ড সম্পর্কে কিছু বলেছেন তো আপনার শেষ করতে দেড়ি কিন্তু তার তার কানে লাগাতে দেড়ি করবে না। কিন্ত এতসব করলো কোথায়?
পারভেজ- ওর এক পুলিশে চাকুরী করা মাঝে মাঝে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও করেছে সেই পুলিশ ভাইকে তো চিনিস, যার বউও মিউজিক ভিডিও করেছে?
শাওন- জ্বি ভাই। এক অনুষ্ঠানে তো কথা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের মাঝেই যেভাবে বন্ধুদের সাথে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছিল তাতে তো আমার বউ ক্ষেপে গিয়েছিল।
পারভেজ- হ্যাঁ, ঐ পুলিশি পোষাক আর মিডিয়ার চমকপ্রদ কথা বলেই তো এদের ফ্লাটে প্রতিনিয়ত মেয়েবাজি করতে পারে তাতে কেও কিছু বলার শাহস পায় না।
শাওন- বস্ আমি তো এত কিছু জানি না।
পারভেজ- তবে হ্যাঁ, যাই বলিস এই মেয়ে জাতি বিচিত্র। একটি ছেলের কাছে তার গার্লফেন্ড সম্পর্কে যদি কেও কিছু বলে সে গোপনে যাচাই করবে। আর মেয়ের কাছে বললে সে তার বয়ফ্রেন্ডের মাধ্যমে যাচাই করতে চাইবে। যাক যার যা ইচ্ছা করুক, কিন্তু কষ্ট লাগে আমাদের সমাজ দিন দিন কোথায় যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কারনে ভেবে।
শাওন- জ্বি ভাই। আসলে আমরা ইসলাম যেটি বলছে সেটির বিপক্ষে দাঁড়াতে গিয়েই সমস্যা পাঁকাচ্ছি সমাজে। ইসলাম বলছে ছেলে-মেয়ে স্বাবালোক/স্বাবালিকা হলে বিয়ে দিতে, ইসলাম প্রত্যেক স্বচ্চল যুবকের প্রতি বিবাহ ওয়াজিব করেছে, আর বিবাহে অসমর্থ হলে রোজা রাখতে বলেছে জৈবিক চহিদা নিবারনের জন্য। কিন্তু আমারা!!! স্বঘোষিত উন্নতদেশের সভ্যহীন নষ্টামিতে মত্ত হয়ে বলছি, ১৮র আগে মেয়ের বিয়ে নয়, আর ছেলের বিয়ে ২৫শের আগে নয়। কিন্তু যাদের জৈবিক চাহিদা অপ্রতিরোধ্য তারা কি করবে? তাদের কথা ভাবি না।
পারভেজ- হ্যাঁ, যৌবন না মানে ধর্মের কাহিনী।
(গল্পটি বাস্তবঘটনার গল্পরূপ। চরিত্রগুলি কাল্পনিক।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৩৫