আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু হলেও মহানায়কের মহানায়ক যে ভারত তা হয়তো আমারা আজ বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকি অথবা দানের স্বীকৃতি দিতে চায় না আমাদের বীরদের সম্মান হ্রাসের ভয়ে। কিন্তু বাস্তবিক দিক থেকে ভারত মাতা যদি না আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন তা হলে হয়তো আমাদের এই মহান স্বাধীনতা পেতে সময় লেগে যেত আরো দশক খানেক। বঙ্গীয় রাজাকার বা স্বাধীনতাকে ভাল চোখে দেখেন না (কারো কারো মতে) তাদের মতে সেটা হতে পারত কয়েক দশক।
তৎকালিক সময়ে বা স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত মাতা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এমন ভাবে- এ যেন তাদেরই যুদ্ধ, যুদ্ধ যেন বাংলাদেশ পাকিস্থানের নয়, যুদ্ধ ভারত পাকিস্থানের। যুদ্ধের বাতাসেয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তথা হিন্দু সম্প্রদায় পাড়িজমান হিন্দুভূমি খ্যাত ভারতে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সুচতুর হিন্দু মুসলিম আমজনতা পাড়ি জমান ভারতে। পরবর্তীতে অনেকেই যেতে বাধ্য হয়েছেন প্রাণের ভয়ে। সেই খানে যার যেমন সামর্থ সে সেরকম থেকেছেন-- কেও বা ফুর্তি মাস্তি করে, কেও বা অন্যের দয়ার উপরে আবার কেও বা তাবুতে সরকারের দানদক্ষিণায়। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে যা করার দরকার তার কোন কিছুরই কমতি করেননি তারা। বরং বেশীই করেছেন। শুধু তাদের আশ্রয় দিয়েই বসে থাকেননি হাত বাড়িয়েছেন সমরেও। বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন নিজ মাটিতে। অংশগ্রহণ করেছেন স্ব-শস্ত্রযুদ্ধে। শুধু যে অংশগ্রহণ তা নয়--- নেতৃত্ব দিয়েছেন শক্ত হাতে।
পার্শ্ববর্তী এই দেশটির জন্য সংগ্রাম চালিয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নজির হয়তো মেলা ভার যে, অন্যে জন্য নিজের সন্য দিয়ে যুদ্ধ, অন্যের জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের উপযোগী করে গড়ে তোলা, শরনার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, অন্যের যুদ্ধের নিজের দেশের নেতৃত্বের উদাহরণ ভারত মাতা করে দেখিয়েছেন (এখন যেমন ন্যাট করছে সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে আগ্রাসী ভূমিকায়)।
সাধারণ দৃষ্টিতে এই দান প্রতিদানহীন হলেও উর্বন মস্তিষ্কব্যবহার করলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য যা আমরা কোন দিনই বের করতে চাই না রাজাকার বা স্বাধীনতার বিপক্ষে চলে যাবার ভয়ে। কারণ ভারত পন্থীরা ভারতের স্বার্থের কথা বললেই এক বাক্যে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বা রাজাকার ইত্যাদি উপধিতে ভূষিত করে থাকেন। মাগনা জিনিস যে কোন কালেই ভাল হয় না বা সুফল বয়ে আনে না তার উদাহরণ না টেনে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীকার/স্বাধীনতার চেয়ে ভারতের নিজ স্বার্থে বা নিজের প্রয়োজনে এই প্রদেশটি স্বাধীন হওয়া ছিল অতিব জরুরী। কারণ ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বলতে গেলে ভারতের পেটের ভেতর। সোজ কথায় প্রায় দিন দিকেই ভারত মাতার অবস্থান। প্রথমত তাদের নিজ নিরাপত্তা স্বার্থেই আমাদের স্বাধীনতা তাদের কাছে অতিব জরুরী হয়ে পড়েছিল। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে তাদের যেপরিমাণ অর্থ শক্তি সম্পদ ব্যয় হয়েছে তার লাখগুন তারা ইতমধ্যে অসুল করে নিয়েছেন প্রতিরক্ষা খাত থেকে। নাম মাত্র পাহাড়া দিয়েই সীমান্ত সংরক্ষণ করে চলেছেন মাতাজি। আর সরবরার করে চলেছেন তাদের পণ্যগুলো এই দেশে। ভারতের পণ্য অহরহ ঢুকলেও তাতে কোন বাধা নাই, কিন্তু বাংলাদেশী কোন পণ্য নিয়ে ঢুকলেই দিতে হয় বড় মাসহওয়া আর তার ব্যতয় ঘটলেই হতে হয় শিকারী পাখি। অন্য দিক যদি কিনা কাসা/পিতল/তম্র জাতীয় ধাতুর বিনিময়ে তাদের পণ্য ক্রয় করেন তা হলে মাফ পাবেন হাজারো অপরাধ। ---------------- (চলবে)