এবারের ঈদটা একটু বেশিই জঘন্য কাটল! সারা দিন অভুক্ত থেকে বিকাল ৪ টায় সকাল ও দুপুরের খাবার খেতে গেলাম নীলক্ষেত এ । আজ দোকান ই খোলেননি তাঁরা! গত ঈদেও খেলাম নীলক্ষেতে। এবার ই হঠাত করে উধাও হবি! গেলাম স্যার এ এফ রহমান হলে অবস্থানরত সাবের হাসান চাচার কাছে! তিনি হলের ফ্রী খাবার শেষ করে খুব ভাবে আছেন। ৬ টা পর্যন্ত অবস্থানের পর আবার নীলক্ষেত... আবার একই পরিণতি!
নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমাদের প্রিয় সুশীল দাদার সাথে দেখা! তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা হল। বিদায় নিয়ে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র অভিমুখে রওনা হলাম। কলা ভবনের সামনের প্রবেশপথে যেই যাত্রীছাউনি তার ভেতরে বসে আমাদের শ্রদ্ধেয় শওকত হোসেন স্যার নিবিষ্টমনে হেডফোন কানে লাগিয়ে কারো সাথে কথা বলছিলেন। ভাবলাম শান্তি মুবারাক কিংবা খুশি মুবারাক জানাই। কিন্তু কেমনে কি! আমি তখন যে "কৃষ্ণ" প্রেমে মগ্ন ভুলেই গেছিলাম! আমি কি করব! দ্বিধান্বিত আমি! আমি কি দুই ঠোঁটের মাঝ থেকে চুম্বনরত প্রিয়া "কৃষ্ণ" কে ছুড়ে ফেলে দিব- নাকি বাকিগুলোকে আমার পাজামার কোন এক ছিদ্রে ঢুকিয়ে দিব! আমি পারিনি কোনটাই। আমি তাঁর দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম... তিনিও তাকালেন- হয়ত দেখেননি কিংবা দেখেছেন।
ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র পাড়ি দিয়ে বিএনসিসির পাশ দিয়ে মাজারের( মাজারের নাম মনে নাই) সামনে গেলাম কিছু খেতে যেখানে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান ছিল( বিশেষত রিকশাওয়ালা কিংবা শ্রমজীবী মানুষেরা খেতে আসেন।)। ভাবলাম কক্ষনো তো ওখানে খায়নি – আজ না হয় ওখানেই খেয়ে নিইঃ কেউ তো আর আজ আমাকে দেখতে পারবে না যে আমি আজ ওখানে খাচ্ছি। কিন্তু আজ যে ওখানেও কেউ নাই। আমি কই যাই! মোটা চালের( আমার ধারণা) ভাতও জুটল না।
কি আর করা! জাতীয় শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের সামনে গিয়ে টং দোকানগুলো দিব্যি খোলা! দেখে শুনে বসে গেলাম একটাতে! তরকারি যা খাইলাম আজীবন মনে থাকবে! মনে হলো ভিটামিন সি এর আধার! লেবু দিয়েছিল- খাবার প্রয়োজন পড়ল না। পাশের ভাইটা অর্ধেক খাবার খেয়ে উঠে গেলেন- আর সাথে কিছু প্রশংসাবানী। আমি মনে মনে বললাম- ভাই, আমি আগে খেয়ে নেই; পরে প্রশংসা করব। মুরগীর রান( নাকি রাং), একে একে তিন দফা ভাত, ছোট এক বোতল মাম- সবকিছু মাত্র ৭৫+৫=৮০ টাকা। মনে মনে বললাম- ভাই ভুল করলেন ঃ ১০০ টাকা চাইলেও আমি আজ খুশি মনে দিয়ে দিতাম।
বাসায় ফিরে আসার পথে আজব কাহিনী! গত কয়েকটা বছর ঈদ কাটিয়েছি হলে! এসব দেখার সুযোগ ছিল না। আজ দেখলাম! আবাসিক এলাকার গেটগুলোর সামনে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়! কৌতূহলী হয়ে গেলাম! সেখানে মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে মনে হল। কেউ বাসা বাড়ি থেকে চেয়ে এনে বিক্রি করছেন, কেউবা হয়ত বিক্রি করছেন শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত মাংসের অতিরিক্ত অংশটুকু। কিন্তু বাসার সামনের গলি দিয়ে যখন ঢুকছিলাম তখন মনে হল আমার দেহ থেকে সবকিছু বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। মনে মনে ভাবছিলাম কখন কি হয়ে যায়। মান সম্মানের ব্যাপার। পানি বা টিস্যু কিছুই নেই। এই মুহূর্তে কিছু হয়ে গেলে কি যে হবে!
বাসার সামনে এসে কলিংবেল টিপছি তো টিপছি – দরজা খোলার কোন সম্ভাবনা নাই। দিলাম চাচি-মামিকে ফোন। তিনি বললেন বাসায় নেই তিনি; এমনকি অন্য কেউ ই নাই! মহা বিপদে পড়লাম! এখন কোথাই যাই!? তিনি আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয়না। নিচে নেমে এলাম। এক খুবই বৃদ্ধ মহিলা বাসায় ঢুকতে চাইলে কোন এক ভদ্রলোক তাঁকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল! মনে মনে খিস্তি দিলাম খুব ওই ভদ্রলোকটাকে। কি অভদ্র আমি- তাইনা? ভদ্র পাড়ায় থেকে খিস্তি দিচ্ছি, অভদ্রতা করছি। যদিও সব কিছুই মনে মনে। আবার দাড়িয়ে থাকলাম সেই সুগন্ধময় স্থানে। ডানে-বামে-আগে-পিছে।
শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে সাবের হাসান চাচাকে ফোন দিতে দিতে ভিকারুন্নেসার সামনে। আমার চাচা ফোন ধরলেন না। কি আর করা! ওখানে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভিড়টাও কম। গরু-সুগন্ধও নাই। তারপর চূড়ান্ত ফোন ঃ ..................
আজ আমার দুই জন ব্যক্তির কথা খুব মনে পড়ছে। মায়ের কথা; আর ক্ষণস্থায়ী এক বালিকা বন্ধুর কথা। শেষের জনের শেষ কথাগুলো এই অসুস্থ্য জীবনের প্রাথমিক মুহূর্তগুলোতে এসে মনে পড়ছে। অথচ সুস্থ জীবনের শেষ মুহূর্তেও কিছুই মনে হয়নি; অসহ্য মনে হয়েছে!
এখন অনেক ভীতু হয়ে গেছি! আজ অনেককেই ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি। (ফেসবুক এ না ফোনে! ভয়ে।) (অ)মূলক ভয়। বিশ্বাস আর তাঁর বাহকদেরকে খুবই ভয় করে। নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয়। অথচ কিছুদিন আগেও না কত ব্যতিক্রম!