সিডনি আসার পর বয়সের দোষ বা নষ্টালজিয়া, যাই বলি, হঠাৎ উদ্ভট উদ্ভট সব গন্ধ পাই যার অস্তিত্ব এই শহরে থাকা অসম্ভব! মস্তিস্ক কেন বা কোথা থেকে এসব গন্ধ নিয়ে আসে তা বলতে পারব না। যেমন হঠাৎ মাঝে মধ্যে গন্ধ পাই নান রুটি, সাথে মূগডাল আর আলু ভাজার মিক্স এর যাকে চট্টগ্রামে আমরা ডাল-ভাজি বলতাম। এই গন্ধ ছোটবেলায় নুরুর হোটেলে সকাল সকাল নানরুটি নিতে লাইনে দাঁড়ালে পেতাম যখন লাইনের পাশেই মানূষ কচ-কচ করে নান-ভাজি খাচ্ছে। সিডনিতে এই গন্ধে মাথা নষ্ট হবার উপক্রম হওয়ায় নিমিকে নিয়ে একদিন সকাল সকাল রওনা দিলাম লেকাম্বায়। লেকেম্বা সিডনির ভেতর ছোট্ট এক বাংলাদেশ যেখানে হেন বাংলা জিনিষ নাই যা পাওয়া যায় না। নান-ডালভাজি খেয়ে খুব তৃপ্তি নিয়ে নিমিকে বল্লাম, "ওয়াও! ওয়াও!"। আসলে প্রত্যাশার ধারে পাশেও নাই ও খাবার। সম্ভব ও না, কারন ওই গন্ধ আর স্বাধের সাথে মেশানো ছিল শৈশব।
মাঝে মাঝে কিছু পারফিউমের গন্ধ পাই ফাঁকা ট্রেনে, নির্জন রাস্তায়। ছোটবেলায় মদুনাঘাট থেকে নজুমিয়া হাট মায়ের সাথে রিক্সায় চুপি চুপি সেভিংস জমা করতে গেলে রিক্সায় মায়ের এই পারফিউমের গন্ধ পেতাম।
পরশু আরহাম কে নিয়ে চাইল্ড কেয়ারের সিঁড়ি দিয়ে নামছি, বাইরে ঝুম বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে সব, আচমকা থমকে দাঁড়ালাম। পরিস্কার গন্ধ পাচ্ছি ঝুম বৃষ্টিতে পেয়ারা গাছে উঠলে বৃষ্টি, কাঁচা-পাকা পেয়ারা আর পেয়ারা পাতা মিলে মিশে যে আশ্চর্য ঘ্রণের তৌরি করত, তার। হঠাৎ শৈশব, সেই সব স্মৃতি আর আবেগ মিলেমিশে বৃষ্টির সাথে নেমে এল চোখের দু'কোনে। নিজেকে সামলে আরহামকে ড্রপ করে ছুটে চল্লাম অফিসের জরুরি স্প্রিন্ট মিটিং এ। সময় নষ্ট করার সময় নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯