পর্ব-(১) Click This Link
"ডেভিড কি চলে গিয়েছিলো?"
"না মরে গিয়েছিলো। একদল জনতা তাকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ায় আমার সামনে।"
শুনে জামিল আর রাহাত চমকে যায়। জামিল বলে, "কেন?"
লোকটা জামিলের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো যা দেখে হঠাৎ জামিলের বুক কঁপে উঠে। খালেকুজ্জামান উঠে ভিতরে চলে গেল। রাহাত জামিলকে বলল, "দোস্ত তুই আমারে ভালো বিপদে ফেলছিস! তোরা নিজেরা নিজেরা জ্বীন ভূত প্রেত নামা। আমাকে এবার ছাড়।"
"কীভাবে যাবি? বাইরে বৃষ্টি পড়ে। আসল মজাতো রাত ১২ টার পর।"
"এখন কয়টা বাজে?"
"মনে হয় পৌনে ১১ টা।"
রাহাত পকেট হাতড়ালো মোবাইলের জন্য। সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো যে সে আজকে মোবাইল আনতে ভুলে গেছে, এই ভুল সে কখনও করেনা। সে জামিলকে বলল,"জামিল মোবাইল আনছিস?"
"নারে দোস্ত। ভুলে গেছি। রাস্তায় বের হয়ে মনে পড়ছিলো।"
এই ঘরেও কোন ঘড়ি নাই। রাহাতের মনে হঠাৎ খটকা লাগলো। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় যেন তাকে বারবার বলছে, "চলে যাও, চলে যাও।"
লোকটা একটা মোটাসোটা বোতল নিয়ে ঘরে ঢুকলো। রাহাত মনে মনে ভাবলো "এই লোক কি মদ খায়? এ তো জামিলের ১২ টা বাজাবে!"
লোকটা বোতলের তরলটুকু একটা ঝকঝকে গ্লাসে ঢেলে বলতে লাগলো, "এটা শ্যাম্পেন বা হুইস্কি না, এটা জীবনরস.........লিকুইড অফ লাইফ। প্রের্ত্রাক নামক একপ্রকার গাছের শিকড়কে প্রসেস করে বানানো তরল। খেলে অনেকদিন নির্ঘুম কাটানো যায়....সাধনায় সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত ঘটায় ঘুম। চেখে দেখবে একটু?"
তারা দুজনই সজোরে মাথা নেড়ে না করলো। জামিলের অবশ্য আফসোস থেকে গেল সে একা থাকলে চেখে দেখত।
খালেকুজ্জামান আবার বলতে শুরু করলো...."ডেভিড খুব হেঁয়ালী করে কথা বলত। আমার ছুটি শেষে আমি যখন কানাডায় ফেরত যাব তখন তাকে বললাম, "ডেভিড আমি এবার যেতে চাই। হাইতিতে দারিদ্র ছাড়া কিছু দেখলামনা....তুমি কি থাকবে?"
সে বললো, "আমাকে আমার নিয়তিই এখানে টেনে এনেছে, ঠিক যেমন তোমাকে এনেছে তোমার নিয়তি"। এর কিছুদিন পর সে আমাকে একটা গ্রামে নিয়ে গেল যেখানে কিছু ভুডুচর্চাকারী থাকতো। তারা জীবনযাপন করত স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু কেউ যদি জানত তারা প্রেতসাধক তাহলে পুড়িয়ে মেরে ফেলত। আমি প্রথমে ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিয়ে তার সাথে সেখানে গেলাম। ডেভিড আমাকে নিয়ে গেল এক ডাইনীর কাছে.....তার নাম ছিলো আইডা। আমার দেখা পৃথিবীর কুৎসিততম মানবী। সেই যে গেলাম তার কাছে আর ফেরা হলোনা। তার কাছেই ১৮ বছর ছিলাম।"
রাহাত হঠাৎ কথার মাঝখানে বললো......"এসবতো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হাইতিতে এখন যাদেরকে ভুডুচর্চাকারী হিসেবে দেখা হয় তারাতো আসলে আমাদের দেশের কবিরাজের মত।"
লোকটা বাঁধা পেয়ে বিরক্ত হলো। সে বললো....."তুমি কি সব জান? যারা সত্যিকারের ডাইনী তারা কখনও সেটা প্রকাশ করেনা।"
বাইরে হঠাৎ কুকুরের ডাক শোনা গেল। লোকটা ফিসফিসিয়ে রাহাতের দিকে ঝুঁকে বললো...."আমাকে দেখলে মনে হয় আমি প্রেতসাধক? হা হা হা....."
গা হিম করা হাসি শুনে রাহাত আর জামিল ভয় পেয়ে যায়।
খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো.."আমি যতবারই ফিরে যেতে চাইতাম ততবারই কোন এক যাদু আমাকে আরও শক্ত করে আটকে রাখতো। আইডা আমাকে প্রথম প্রথম কিছু মন্ত্র শিখালো। তারপর শিখালো কুকুর, বিড়াল, সদ্য মৃত মানুষের রক্ত কিভাবে পান করতে হয়।"
রাহাতের গা গুলিয়ে উঠে। তবুও সে ধৈর্য্য সহকারে শুনতে লাগলো।
লোকটা বলতে থাকল...."কিভাবে জীবনরস বানানো হয় সেটাও শিখলাম আমি। তবে তখনও কোন মৃত মানুষের দেখা পাইনি। এরপর একদিন আইডা আমাকে ডেকে নিয়ে বলল..."আমার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমার হাতটা আমার হাতে রাখ"। আমি হাত রাখলাম.......আমার সারা শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খেয়ে উপরে উঠে গেল....আমার চারপাশ ঘুরতে লাগল...চারপাশে কালো ধোঁয়া আর কিসব অশরীরী নাচতে লাগলো...আর চাপা হাসির শব্দ.....এরপর সব অন্ধকার।"
রাহাত আর জামিলের নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বললো......"এখন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?"
চলবে........