আমার বড় বোনের বিয়ে হয় ১৯৯৭ এর দিকে , তখন দুলাভাই ঢাকায় ব্যবসা করতো আর আপা তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতো তো , এইভাবে ঢাকা আসা যাওয়া খুবই সমস্যা হতো , তাই দুলাভাই ঢাকা কেরানীগঞ্জে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নেয় , আর আপাকে নিয়ে যায় ।
আপা ঢাকা গেছে প্রায় ৬-৭ মাস হলো , কিন্তু আমার পরীক্ষার কারনে আমি ঢাকা যেতেও পাচ্ছিনা , এর আগে দুই তিনবার ঢাকা গিয়েছিলাম কিন্তু তেমন পরিচিত কোণ আত্মীয় স্বজন ছিলনা বলে তাই সকালে গিয়ে রাতেই চলে আস্তে হতো ।
তার কিছু দিন পার আমার পরিক্ষা শেষ হয় , সম্ভাবত তখন ক্লাস সিক্সে পরতাম , তো অনেক দিন ছুটি পাইছি , তাই চিন্তা করতেছিলাম ঢাকা যামু আফার বাসায় বেড়াতে , তার দুই দিন পরই দুলাভাই এলো আমাদের বাড়িতে কোন এক কারণে , তাই আমি দুলাভায়ের সাথে ঢাকা যাওয়ার প্ল্যান্ট করলাম , মা'কে বললাম দুলাভাইকে বলেন আমাকে যেন ঢাকায় নিয়ে যায় , আমি দুই চার দিন আফার বাসায় থেকে চলে আসবো , তো 'মা' দুলাভাইকে বললো লিংকনের পরিক্ষা শেষ ও আপনাদের বাসায় বেড়াইতে যাইতে চায় , এই কথা শুনে দুলাভাই খুসি হয়ে গেলো ।
তাই আমার ঢাকা দর্শন দুলাভাইয়ের সাথে ঢাকা এলাম দুলাভাই আর আপা থাকে চার তালায় একটি ফ্ল্যাটে দুইটি রুম নিয়ে , তো সারা দিন টিভি দেখেই কাটালাম , সন্ধার দিকে বাইরে ঘুরতে যাইতে চাইলাম , কিন্তু আপা বলে তুই একা গেলে হারাইয়া যাবি তোর দুলাভাইয়ের সাথেই যাইছ কিন্তু রাত বাড়ছেই কিন্তু দুলাভাই আসছেনা , অপেক্ষা আর অপেক্ষা রাত ১০টা বাজে , আপা কয় আর ভাত খাঁইয়া রেডি হ , তাই ভাত খেয়ে বসে আছি কিন্তু দুলাভাই আসার নাম নাই তাই সাহস করেই বাইর হলাম বাইরের দেখি কত মানুষ এদিক অদিক যাচ্ছে , আমি ছোড মানুষ কোন দিকে যামু কিছুক্ষন বাসার নিচেই দাঁড়াইয়া রইলাম ।
বাসার নিচে একটি আইসক্রিমের দোকান ছিল দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া আইসক্রিম খাইলাম , তার পর হাটা শুরু করলাম , কিছুক্ষন হাটি আর পেছনের দিকে দেখি যদি আবার ফিরে আসতে না পারি, তাই সব কিছু চিন্না রাখার জন্য বার বার পেছনে ফেরা , তখন আমার বছর সম্ভাবত ১২-১৩ হবে , হাপ পেন্ট আর একটা লাল রঙের শার্ট পড়া ছিলাম । হাটতে হাটতে চলে এলাম বুড়ি গঙ্গা নদীর গুদারাঘাটে , ২ টাকা দিলেই কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়া যায় , এক নৌকার মাঝি আমারে ডাক দিয়া কয় যাবিনি ওই পাড় , আমি মনে মনে কৈ আমারে বোকা পাইছো নাকি আমি অই পাড় গিয়া হারাইযা যাই আর এই দিকে সবাই কান্নাকাটি করুক । কিন্তু গুদারাঘাট থেকে দেখা যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা ব্রিজ , অনেকের মুখে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের কথা শুনেছি তাই ব্রিজের যাইতে হবে ।
যেই কথা সেই কাজ , নিজের উপর বিশ্বাস আছে আবার ফিরে আসতে পারবো আমার আমার স্মৃতি শক্তি খুবই ভালো স্যারেরা বল, তো সেই কথা মনে করে হাসলাম আর হাটা শুরু করলাম ব্রিজের দিকে ।
হে হে হাটতে হাটতে ব্রিজের কাছে এসে গেছি ব্রিজের উপ্পে উঠতে থাকলাম , দেখি কত কত মানুষ ব্রিজে রেলিং এ বসে বসে লঞ্চ দেখতাছে আমিও দাঁড়াইয়া ইয়া বড় বড় লঞ্চ দেখতাছি , তখন দেখি এক লোক ভুট্টা বিক্রি করতেছে আগুনে ছ্যাকা দিয়া ভুট্টা । পকেট থেকে ২ টাকা দিয়া একটা ভুট্টা কিনলাম , ব্রিজে দাঁড়াইয়া ভুট্টা খাইতাছি আর লঞ্চ দেখতাছি এক বার মনে মনে কৈ ঢাকার দিকে যাই , আবার মনে মনে কৈ না কাউলকা সকালে আমু তখন ঢাকার দিকে যামু । কিন্তু চারি দিকের মানুষ কমতে শুরু করলো , আমার ও মনে হলো অনেক রাত হইছে কিন্তু চারি দিকে এতো আলো যে বুঝাই যায়না রাত কয়টা বাজে ।
তাই বাসার দিকে হাটা শুরু করে দিলাম
হাটতে হাটতে রাস্তা তো শেষ হচ্ছেনা , যেই ভাবে যেই রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই রাস্তা দিয়েই ফিরে আসতেছি , গুদারাঘাট এসে দেখি মানুশও নাই আর নৌকাও অনেক কম তখন মনে হলো রাত সম্ভাবত ১২- ১টা বাইজ্জা গেছে , হাটতে হাটতে বাসার সামনে এলাম , দেখলাম আইসক্রিমের দুকানের ঝাপ বন্ধ করছে , নিশ্চিত আফায় অনেক বকা বকি কবে :'( কিন্তু বিল্ডিং এর গেইটে দারোয়ান বেটা আমারে নাম জিগাইলো আর আমি আমার নাম বললাম , তখন সে আমারে কয় তুই কৈ গেছিলি ? তো দুলাভাই তো পাগলের মতন হয়ে তরে খুজতাছে , তারা তারি যায় বাসায় বাসার সামনে গিয়া দেখি দরজা হালকা করে চাপানো , তাই আস্তে করে বাসার ভিত্রে ঢুকে গেলাম , তখন দেখতাছি অনেক শব্দের অন্য রুমে হিন্দি গান বাজতাছে , মনে হলো আপা আর দুলাভাই মিলে মনে হয় টিভি দেখতাছে তাই বকা খাওয়ার ভয়ে আমি দক্ষন পাশের রুমে চুপ করে ঢুকে শুয়ে পরলাম
কিন্তু এই ঘুমের মধ্যে যে আমি ইজ্জত হারামু সেটা কোন দিন চিন্তাও করি নাই লাইটের আলোতে ঘুম আসছেনা তাই খাতা উপরে দিয়া ঘুম যাওয়ার চেস্টা করতাছি , কিছক্ষন পর মনে হলো কে জেন দরজা বন্ধ করে লাইটও বন্ধ করে দিলো :O মনে মনে কৈ যাক ভালই হইছে এখন ঘুম যাওয়া যাবে
কিন্তু দু মিনিট পর মনে হলো ১০০ মন ওজনের কি যেন একটা আমার শরিলের উপরে পরলো , আর আমিও এই ওজন সৈতে না পাইরা মাগো বলে দিলাম এক চিৎকার আমার চিৎকারের সাথে সাথে আরেকটা চিৎকার হলো আল্লাহগো বলে ।
সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো , তখন দেখি ইয়া মোটা এক মহিলা আমি তো অবাক এইডা আবার কেডা , মুখ থেকে কোন কথাই বেড় হচ্ছিল না ।
তখন অই মহিলা উত্তেজিত হয়ে আমারে বলে অই পোলা এখানে কিলাইগা আইছোস ? চুরি করতে আইসোচ না , এই বলেই খাটের নিচ থেকে ইয়া বড় এক বডি বেড় করে আমারে কয় , দুনিয়াতে আর মানুষ পাছ না আমার বাসাই আইছোস চুরি করতে ? এই বাসার সব মানুষ আমারে হারে হারে ঢড়ায় আর তুই আইছোচ আমার বাসায়
আমি আফা আফা বলে কান্না কাটি শুরু করে দিলাম ভয়ে এই শুনে মহিলা কয় দেখি আজকা তোর কোণ আফায় বাচায় কান্না করতে ছিলাম , তখন এই মহিলা আমার চুলের মধ্যে ধইরা কয় চুরি করার সময় মনে আছিল না , এখন কান্না কাটি করে লাভ নাই , সকাল হলেই পুলিশের হাতে ধরাইয়া দিমু ।
তখন কান্দি আর কৈ আফা আপনি কোই দুলাভাই আমারে বাচান তখন অই মহিলা কয় কে তোর আফা আর কে তোর দুলাভাই , তারা দুইজন তোর সাথেও চুরি করে নাকি ?
তখন বললাম এই বাসায় আমার আফা আর দুলাভাই থাকে , তারা কৈ ? কি তোর আফা দুলাভাই থাকে মানে ? এই বাড়ি আমার , আমি এই বাড়ির মালিক আর এই ফ্ল্যাট বাসায় আমি একাই থাকি তোর আফা দুলাভাই কৈ থিকা আইবো , আমার লগে নাটক করছ কয় তোর দুলাভাইয়ের নাম আর কইয় তোর আফার নাম কয় ? ।
তখন দুলাভাইয়ের আর আফার নাম কইলাম , তখন এই মহিলা কয় এই নামে উপরের ফ্ল্যাটে একজনরে ভাড়া দিছিলাম এই বলে আমার দুই হাত দুই পা' গামছা দিয়া বাইন্ধা এই মহিলা উপরে গেলো , আর সাথে এলো আমার বড় আফা তারে দেইক্ষা আমার কান্দার স্পিড আরো বেড়ে গেলো আমি কোই ও আফা আমন্নে কৈ আমারে বাচান ।
আফায় আমারে কয় তুই এখানে কেন ? আর অই দিকে তোর দুলাভাই তোকে সারা ঢাকার শহর খুজে বেড়ারাইতাছে , তখন দেখি আফায়ও কাইন্দা কাইট্টা চোখ ফোলাইয়া হালাইছে ।
তখন বললাম আমি আপনাগো বাসা মনে কইরা এই বাসায় ঢুইক্কা গেছিলাম আর এই মহিলা আমারে চুর মনে কইরা কত কিছু কইছে মারছেও :'( , তখন আফা অই মিহিলাকে বললো ছোট ভাই গ্রাম থিকা আইছে আমার বাসা মনে করে আপনার বাসায় ঢুকে গেছে , কিছু মনে কইরেননা আফা , এই বলে আফায় আমারে তার বাসায় নিয়া আইলো ।
আফার রুমে আইয়া দেখি রাত ৩ টা বাজে , এই দুই ঘন্টা আমার উপ্পে কি না নির্যাতন হইচ্ছে
এই দিকে দুলাভাই আমাকে খুজে খুজে হয়রাণ , আফাও চিন্তা করতাছে দুলাভাই আমারে খুজতে কৈ থিকা কৈ যায় আশে পাশে কেউ নাই কাউকে যে বলবে দুলাভাইকে বাসায় ফিরে আসার জন্য । রাত তখন ৪ টা , দরজায় শব্দ শুনে আফা দরজা খোললো দুলাভাই মন বেজার করে রুমের ভিতরে ঢুকেই বলে লিংকন আইছে নাকি ? ওঁরে তো কোথাও খুজে পেলামনা আফায় বললো আইছে ।
আমাকে ঘুম যেতে দেখে দুলাভাই আর কিছু বললো না , আফার মুখে সব কথা শুনে সকালে আমারে দেইক্ষা কয় কিরে তুইনা এতো চালাক আমারে কয় দেখছনি গ্রামের ত্যন্দরাও শহরে এসে ধরা খায় , এই বলে হা হা হা হা করে হাসলো কিছুক্ষন তার পর ব্যবসার কাজে দুলাভাই বাসা থেকে চলে গেলো , আর বলে গেলো বিকালে আমাকে নিয়ে নাকি ঘুরতে যাবে সংসদ ভবন এলাকায় তাই রেডি থাকতে বললো ।
সকালে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা পানি করে আপাকে বললাম , অই মহিলা কেডা ? তখন আফা বললো ঐ মহিলাই বাড়িআলি , তার স্বামী আমেরিকায় থাকে , তিনি একাই এই বাসায় থেকে বাড়ি ভাড়া তুলে এবং অনেক টাকার মালিক , ২-৩ মাস পর পর আবার আমেরিকায় যায় ঘুরতে ।
একটু পরেই আশে পাশের রুম থেকে দুই তিন জন মহিলা এসে দুষ্টামি শুরু করে দিলো কয় বিয়াই তুমি এই মুটকি বাড়ি আলির কাছেই গেলা তার টাকা বেশি দেইক্ষা , আমাদের বাসায় গেলানা আরো কয় বাড়ি আলিরে একলা পাইয়া বিয়াই রাতে তার ঘরে কি জন্য গেছে আমরা সবাই জানি তাদের এই সব কথা শুনে আমি লজ্জায় লজ্জিত হইয়া গেলাম তারা কি সব কথা বলছে । লজ্জা ছি ছি লজ্জা আরেক মহিলা কয় বিয়াই আজকা আমি দরজা খোলা রাখুম আমার ঘরে আইও রাত ১ টায়
একটু পর বাড়ি আলি আইয়া গপ্প তো আরো জমাইয়া দিলো , আমার গালে ঠুকনা দিয়া কয় আরে তুমি যে আমাদের বিয়াই লাগো হেইডা আগে কইলেই তো হইতো , তোমারে কি আর বাইন্ধারাখতাম নাকি , আদর যন্ত করতাম আর রাতে দুইজনে এক সাথেই থাকতাম এই বলে হাসা হাসির র্যোল পরে গেলোসবাই হা হা হা হা করে হাসা শুরু করে দিলো ।আমি লজ্জায় লজ্জিত হলাম , বিকালে দুলাভাইকে বললাম আমি বাড়ি চলে যাবো দিয়া আসেন বিকালেই বাড়ি চলে এলাম ।
তার পরে অনেক বার গিয়েছি কেরানীগঞ্জ আফার এই বাসায় , কিন্তু গিয়া শান্তি পাইতামনা , আশে পাশের বাসার মহিলারা আইয়া এই যে দুষ্টামি শুরু করতো তার পরে আর ২-৩ বছর আফার বাসায় গিয়া শান্তি পাই নাই , সকালে গেলে বিকালে চলে আসতাম ।
কিন্তু যখন একটু বড় হলাম , সব কিছু বুঝতে শিখলাম , তখন আর কেউ বলেনা বিয়াই আজকা রাইতে বাসায় আইও দরজা খোলা রাখুম এক দিন সব মহিলারা এসে আড্ডা দিচ্ছিল আফার বাসায় , তখন দুষ্টামি করতে গিয়ে বলেই বসলাম , আমি যখন ছোট ছিলাম আপনারা সবাই বলতে রাতে দরজা খোলা রাখুম নাকি বিয়াই ? , কিন্তু হেই কথা এখন আর কন না কেন আর সবাই হাসা হাসি শুরু করে দিলো , আর বললো বিয়াই তো হেব্বি রোম্যান্টিক হইয়া গেছে
তার পর বার বার আফার বাসায় যাইতে ইচ্ছা করতোএবং যাইতামও এই মহিলা গুলা অনেক দুষ্ট তাদের সাথে দুষ্টামি করতে ভালোই লাগতো তার কিছু দিন পর দুলাভাই ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসা কিনলো , আর আফায় চলে এলো ঢাকায়
তার পর আর ঢাকায় এসে মজা পাই নাই সেই রসালো বিয়াই গোলার বেশি মিস করতাম আর কোন দিন দেখা হয় নাই তাদের সাথে । সেই স্মৃতি এখনো হাসায় , যখনই কোন বাসায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠি তখনই মনে পরে , এই কাহিনী ।
ভাগ্য ভালো ছোট ছিলাম , তায় না হলে কি বড় অপবাদ মাথায় নিয়ে বেচে থাকতে হতো