সবেমাত্র যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলো এ পৃথিবীতে, তার চেহারায় কোন মলিনতা নেই, নেই কোন পঙ্কিলতা, কত নির্মল কত পবিত্র কত সোহাগী কত মায়াবী । পিতা মাতা আত্বীয় স্বজন সবাই এই নতুন অতিথি শিশুটিকে নিয়ে কত ব্যস্ত সেই সবার মধ্যমনি হয় কিছুক্ষণের জন্য হলেও ।
প্রকৃতির গাছপালা, লতাপাতা, নদী জলধারা, নীল আকাশ, গ্রহ নক্ষত্র, পাখি প্রাণী সবাই এই সৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে ব্যাকুল ব্যাতিব্যস্ত, শিহরিত সাথে সাথে আন্দোলিত । রহস্যময়ী পৃথিবীর আলো নবজাতক শিশুর শরীরে স্পর্শ করার সাথে সাথে কান্নার মধ্য দিয়ে আদম সন্তানসহ প্রকৃতি সাগড় সৈকত সবাইকে জানান দেয় যেন একটি নতুন সৃষ্টির আবির্ভাব হয়েছে ।
পাখির কলকাকলী, ঝরণার কলতানে মুখরিত যখন, প্রকৃতির আকাশ বাতাস সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সন্তানেরা যখন স্রষ্টার দীপ্ত আভায় উদ্দীপ্ত এমনই এক শুভক্ষণে পবিত্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে পৃথিবীতে আসে এক শিশুসন্তান “মায়া” । গোলাপী নরম কোমল শরীর, মায়াবী আদরী মূখখানা, ছল ছল করে দুটি নয়ন, নির্মলতায় ভরা সারা মন ,অঙ্গ ও আত্বা । এক বিন্দু কালিমার ছাপ নেই, দেখলেই আদর করতে মন চায় সবার ।
প্রকৃতির ছত্রছায়ায় বাবা মায়ের আদর স্নেহে কোমলমতি “মায়া” একসময় কৈশোরে পা দেয় । অবুঝ মনে যখনই বুঝার ছাপ পরতে শুরু করে তখন থেকে নিজের প্রত্যাশার অন্তরালে সুখ, সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জাল বুনতে শুরু করে ।
“মায়া” যখন মা বাবার কোলজুড়ে আলো করে সবার মাঝে এসেছিল তখর অন্য সব মা-বাবার মত “মায়া”র মা-বাবার মনে মেয়েকে ঘিরে কত স্বপ্ন, কত প্রত্যাশা, কত ভাবনা, কত গননা এবং সব ভাবনায় সুন্দর, উজ্জল, আলোকিত ও উচ্ছলিত । একদিন “মায়া” বড় হয়ে মাবাবার মূখ উজ্জ্বল করবে সাথে সাথে তার আলোর আভা অন্যদের জীবণকেও আলোকিত করবে ।
“মানুষের মন জন্মের সময় অলিখিত সাদা কাগজের মত থাকে ।” দার্শনিক তত্তে¦র এ সত্যটা চিরন্তন । যখনই মনের এ সাদা কাগজে লেখা শুরু হয় তখন থেকে একটি একটি করে প্রতিনিয়ত লেখা হতে থাকে এবং সযতনে সংরক্ষিত হতে থাকে । ঘটনা, রটনা, চিন্তা-চেতনা, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গী সবই এ কাগজে নিজে নিজেই ছাপা হতে থাকে ।
“মায়া” যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তখন তার এক প্রিয় বান্ধবী ঢাকার একটি বিউটি র্পালারে কাজ করতে আসে । এ মূর্হতে তার প্রকৃত নাম উল্লেখ করতে পারছিনা । যাক্ “মায়া”র বান্ধবী যেহেতু “কায়া” নাম রাখি সহজভাবে মনে রাখার জন্য ।
“কায়া” একবছর পর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ীতে ছুটিতে আসে । কিন্তু “মায়া” কেন গ্রামের সবাই অবাক “কায়া” কে দেখে । কি চেহারা ছিল! এখন একি “কায়া” একেবারে পূর্ণ রুপান্তর যেন । গায়ের রং দুধে আলতা, মাথার চুলে সোনালী কালার, জিন্স পেন্ট আর গেঞ্জি পরনে, একেবারে হিন্দী ফিল্ম এর হিরোইন যেন ! আর হাতে মোবাইল নিয়ে সারাক্ষন কাদের সাথে যেন কথা বলে এ এক নতুন “কায়া” ।
“কায়া” এবার ঢাকা ফিরবে দিন চলে এসেছে কিন্তু এখন একা নয়, সাথে কয়েকজন বান্ধবী সব বালিকা, সবার মা-বাবার বড় আশা ঢাকায় গিয়ে রুপান্তর হবে তাদের আদরের মেয়েরা । ঢাকা থেকে গাড়ী আসবে তাদের নিতে । “মায়া” “কায়া” কে দেখে আর আফসোস্ করে । “ ইস্ আমার কত কষ্ট ! পড়াশুনা, পরীক্ষা, মায়ের বকা, শিক্ষকের বকা, নোংরা জামা, টেলিভিশন দেখতে পারিনা আর মোবাইল? সে তো অনেক পরের কথা ।”
“মায়া” একা একা ভাবে, “কায়া” পারলে আমি পারবনা কেন? একসময় “মায়া” “কায়া” কে বলে আমিও তোমার সাথে ঢাকা যাব । “কায়া” তো তাই চেয়েছিল, যে কথা সেই কাজ । মা-বাবার অনুমতি না পেলেও ঠিকই “মায়া” ঢাকার গাড়িতে উঠে বসে । আরো তিনজন মেয়ে এবং “মায়া” ও “কায়া” মোট পাঁচজন । পাজেরো গাড়িতে করে সাঁ সাঁ করে একেবারে চলে আসে ঢাকার একটি আভিজাত্য এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ১০ তলায় ।
অন্য কারো ঘটনা বা কাহিনী নয় আমি শুধু “মায়া”র কথা বলছি ও লিখছি । কোনদিন ঢাকায় আসেনি “মায়া” এমনকি গাড়িতেও চড়েনি । এমনিতেই অপরিচিত জায়গা তার মধ্যে ঘরের সাজসজ্জা দেখে অভিভূত, মোহিত সাথে সাথে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে “মায়া”র । বিছানায় না ঘুমালেই নয়, “কায়া” কে কানে কানে বলে আমি ঘুমাতে চাই ।
“কায়া” উত্তর দেয়, ম্যাডাম আসুক তারপর খেয়ে ঘুমাবো । প্রায় আধা ঘন্টা পর ম্যাডাম চলে আসে কিন্তু এতো দেশী নয় বিদেশী মনে হয় “মায়া”র কাছে আবার কথাগুলো শুনে মনে হলো ম্যাডাম এর অনেক দয়া-মায়া এ যেন আরেক মার অবয়ব এমনটিই মনে হচ্ছে মায়ার ।
সবার নাম শুনার পর “মায়া” কে ম্যাডাম বলে আজ থেকে তোমার নাম হবে “আলো” আজ থেকে তুমি আলোর জ্যোতি দিবে তোমার নতুন কর্মে । “মায়া” ভাবতে পারেনা কেন সে “আলো” হবে? অবাক কান্ড । কোন উপায় নেই এখন, যাদের সাথে আসছে কাউকে আর দেখা যায়না, কায়াকেও না । কেন এই নাম পরিবর্তন, জানতে চেয়েও লাভ হয়নি আর ।
“মায়া” থেকে এখন আলো । “মায়া” জনমের জন্য হাড়িয়ে গেছে নতুন আঁধারের আলোর জন্ম হয়েছে এখন শুধুই আধারের “আলো” ।
কোন বিউটি পার্লার খুঁজে পায় না নতুন নামের “আলো” । কত স্বপ্ন কত প্রত্যাশা, কত ভাবনা কোন কিছুরই নাগাল পায়না “আলো” । চার দেয়ালের ভিতরে কত অপরিচিত মানব সন্তানদের বিচরণ কত আনাগুনা কিন্তু “আলো”র প্রকৃত আলো আর আনাগুনা করেনা, বিচরণ করেনা, কোথায় যেন মিলিয়ে গেল আর দেখা নেই ।
“মায়া” হয়ে মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে, চির চেনা ফেলে আসা সবুজ আম গাছ জাম গাছ, বাড়ীর পাশে বয়ে যাওয়া নদীর জলের সাথে আনমনে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করে আলোর । “আলো” বুঝতে পারে রহস্যময় এ পৃথিবীতে ছোট এ সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী জীবণে তার সব স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা মনের অন্তরালেই ঘুমিয়ে গেছে জাগবেনা হযতো কোনদিন ।
যদি সৌভাগ্যের কাঠির ছোঁয়া পেয়ে জেগে উঠে তাহলে হয়তো “আলো” থেকে “মায়া” হবে ঠিকই কিন্তু তার স্বপ্নের ডানা আর মেলা হবেনা, “আলো”র অন্তরালে “মায়া”র ছায়া ধুকরে ধুকরে কেঁদে কেঁদে বিলীন হয়ে যাবে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৩