আমার ব্লগের সকল বন্ধুদের জানাই নমষ্কার। আমি লীলা চক্রবর্ত্তী।আবার এই আমিই কিন্তু সুপ্তি চক্রবর্ত্তী। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে সুপ্তি চক্রবর্ত্তী এই নামেই আমার এই লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে " pothi.com " পাবলিসারের মাধ্যমে সোহম নাম করন দিয়ে এবং সুপ্তি চক্রবর্ত্তী নামে আমার একটি বই বেরিয়েছে। এটি আমার প্রথম গল্প গ্রন্থ।
১৯৪৯ সালে , ১১ই নভেম্বর আমার জন্ম। আদি নিবাস ছিল , পূর্ব বঙ্গের নোয়াখালিতে। দেশ ভাগেরও অনেক আগে , আমার বাবা চাকুরী সূত্রে বিশাল পরিবার সহ বিহারে জামসেদপুরে চলে আসেন। সুতরাং সে হিসেবে বলা যায় আমি একরকম বিহারেরই বাসিন্দা।এক বিরাট যৌথ পরিবারের কন্যা আমি।। বাড়ী ভর্তি ভাই-বোন মিলে বেশ আনন্দেই দিন কাটিয়েছি। কিছুটা বড় হয়ে কোলকাতাতে ঠাকুমা-দাদুর তত্ত্বাবধানে, আরও স্ফূর্তিতে, আরও আনন্দে স্কুল জীবন শেষ করেছি। অবশেষে মেদিনীপুরে "রাজা নরেন্দ্রলাল খান " ওমেনস কলেজ থেকে বায়ো সাইন্স নিয়ে পাশ করি। তখন আমি কলেজ হোস্টেলেই থাকতাম। সেটাও আমার জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
এরপর সকলে মিলে আমায় বিয়ের পীঁড়িতে তোলার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। আমার স্বামী একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী অফিসার। চাকরী সূত্রে স্বামীর সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা আমায় পরিপূর্ণ করেছে। গৃহ-বধূ হিসেবে মনোযোগ দিয়ে সংসার প্রতিপালন করেছি। বর্তমানে এক পুত্র ও কন্যাসম পুত্র বধূ। উভয়েই নিজ-নিজ যোগ্যতায় সুপ্রতিষ্ঠিত। কখনও স্বদেশে, কখনও বা বিদেশে। আমরাও কখনও গৃহকোনে, কখনও বা তাদের সনে। কেমন সুন্দর স্মৃতি রোমন্থনে দিন কেটে যায়।
জীবন মধ্যাহ্নে সংসার ছড়াতে ছড়াতে ক্রমশ ছোট এক বৃত্তের ভেতর গন্ডীবদ্ধ হয়ে গেলাম। সারাদিনে আর কোন ব্যাস্ততা রইলনা। স্বামী কাজে ব্যাস্ত, একমাত্র সন্তান সেও তার পড়া-শোনায় ব্যাস্ত। শুধুই অবসর। অখন্ড অবসর। বই পড়া, নয় টি,ভি দেখা, এছাড়া আর কাজ কতটুকু? এমন শান্ত, নিস্তরঙ্গ, একঘেয়ে জীবন আর ভালো লাগছিলনা। তাই পড়তে পড়তে কবে থেকে যেন লেখনী তুলে নিলাম হাতে। একমাত্র সম্বল ইচ্ছে, ছাড়া লেখার মত কোন যোগ্যতাই কিন্তু আমার নেই। সারা জীবন চোখ খুলে যা দেখেছি, যা শুনেছি, যা উপলদ্ধি করেছি , নিজের জ্ঞানের পরিধিতে যতটুকু বুঝেছি, তাইই গল্প আকারে লিখে গেলাম। কি লিখি, কেনই বা লিখি, কেমনই বা লিখি কেউ জানেনা আমি শুধু লিখেই চলেছি। কারন লিখতে যে আমার ভাল লাগে।
নিজের ওপর প্রবল আস্থা, সন্তানসম প্রতিটা লেখাই মনে হয় অপূর্ব। বারবার পড়ি, বারবার গড়ি। কিভাবে যে সময় কেটে যায় টেরই পাইনা। এতদিন কেন যে আমাকে এই নেশায় পায়নি ভেবে দুঃখ হয়।
এবার আর এক ধাপ এগোতে ইচ্ছে হয়। অসীম সাহসের সাথে বড়বড় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার জন্য গোপনে সুপ্তি চক্রবর্ত্তী (ছদ্ম নামে ) নামে লেখা পাঠাতে শুরু করি। আমাকে নিরাশ করে, প্রতিটা লেখাই অমনোনীত অথবা অনুপযুক্ত আখ্যা নিয়ে আবার আমার কাছেই ফিরেফিরে আসে। ব্যাথা পাই, তবে ভেঙ্গে পড়িনা। আবার পাঠাই, বারবার পাঠাই। শেষে নিজেই নিজেকে বোঝাই,---- সত্যিই আমার লেখা হয়ত বড় পত্রিকার জন্য নয়। এবার শুরু হোল লিটল ম্যাগাজিনে লেখা পাঠান। মিথ্যে বলবনা তারা সানন্দে আমার লেখা গ্রহন করেছে। আমি তাতেই খুশি । তারা আমায় এগোতে সাহস জুগিয়েছে।
তবে মানুষের আশারতো শেষ নেই, এবার মনে হোল লিটল ম্যাগাজিন আর কজনাই বা পড়ে? এর চাইতে বড় কোথাও কি লেখা যায়না? এব্যাপারে আমার ছেলের সহযোগিতা আমার আশা পূর্ণ করেছে। আমার একমাত্র পুত্র, আমার বন্ধুর মত, সে আমার মনের কথাটা টের পেয়েছে। " সামহোয়ার ব্লগে " আমায় মেম্বার করে দিল। মনে হোল আমি যেন এতদিন এর অপেক্ষাতেই ছিলাম। মন ভরে নিজেই, নিজের লেখা টুকে গেলাম। আর তার বিনিময়ে আপনাদের থেকে যে সাড়া পেলাম তা এক কথায় অভূতপূর্ব। আপনাদের সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য নতুন লেখা আর সম্ভব নয়। তাই ঠিক করেছি আর লেখা নয়, এবার আবার শুধুই পড়া। এতদিন নিজের লেখা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম এবার শুধুই আপনাদের লেখা পড়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখব।
আবারও বলি, আমি বড়ই আশাবাদী, এখনও মনের কোনে, কে যেন উঁকি মেরে বলে, যদি আমার লেখা গল্পগুলো টেলিফিল্ম হোত, যদি রেডিওতে নাটক হোত, অথবা যদি আমি কোথাও আমার লেখা পাঠ করার সুযোগ পেতাম? --------------
এও কি সম্ভব? "পার্টনার " নামে আমার একটি গল্প কোলকাতা টি,ভি থেকে টেলিফিল্ম হয়েছিল। সময়টা ঠিক মনে নেই।
আমরা সকলে এক আকাশের তলার বাসিন্দা। হয়ত কোনদিন সাক্ষাৎ হবেনা, মুখোমুখি কথা হবেনা, কিন্তু বন্ধুত্ব কি এসবের অপেক্ষায় থাকে? ভালবাসা রেখে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৩০