somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুলি-কলম ছোট গল্প

২৫ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( এক )
-----নো-মোর ,----- নো-মোর ,----- নো-মোর,-----
চমক, চমকের পর চমক। বাঁ কোনের ছোট্ট টাইটেল , চোখ দুটোকে টেনে নিয়ে যায় বিষয় বস্তুর ওপর। তারপর বিশাল ক্যানভাস জুড়ে দৃষ্টি শুধু এলো-পাথাড়ি ছুটে বেড়ায়, এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। গভীরে, আরও গভীরে, আরও গভীরে গিয়ে নিবিষ্ট হয় চেতনা। সবশেষে পেছনের কোলাহল, বিহ্বল দৃষ্টিকে জোর করে নাবিয়ে দেয়, ডান কোনে ছোট্ট স্বাক্ষরের ওপর। এতক্ষনের প্রবল উত্তেজনা, স্বাক্ষরে এসে থিতু হয়ে পড়ে। নড়বার ক্ষমতাও থাকেনা। এত ভীড়ের মাঝে নিজেকে কেমন বেমানান, বেখাপ্পা মনে হয়। নিয়ম ভেঙ্গে লাইন থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় সেলস্ কাউন্টারের সামনে।
-"আচ্ছা, ফিফথ রোর তিন নম্বরের ছবিটি কি বিক্রি হয়ে গেছে?-"
-"না, এখনও বিক্রি হয়নি, তবে অনেকেরই পছন্দ জানিয়েছেন।-"

ছবিটি নেওয়ার বাসনা এবং সেই সঙ্গে অর্থের অপ্রতুলতা জানাতেই, ভদ্রলোক বলেন,----------- তাতে কি হয়েছে? আপনি যতটা পারেন এখন অ্যাডভান্স করে যান, তাহলে আমরা আর কারুককে কথা দেবনা। তবে আমাদের তরফ থেকে একটা সর্ত আছে। প্রদর্শনী চলা-কালীন কিন্তু আপনি ছবিটি হাতে পাবান না। কারণ প্রদর্শনীর শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত দর্শকের চোখেই আমরা ছবির উৎকর্ষ বিচার করি। আর দ্বিতীয় সর্ত শিল্পীর তরফ থেকে, প্রদর্শনী শেষ হলে শিল্পীর বাড়ী থেকে ছবিটি সংগ্রহ করতে হবে। এটা যদিও কোন নিয়ম নয়, তবে এটা শিল্পীর তরফ থেকে তাঁর একান্ত ব্যাক্তিগত আবেদন। কারণ ওনার সৃষ্টি কার হাতে লালিত হতে চলেছে তা উনি যাচাই করে নিতে চান। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। আরে, আমিও যে তাই-ই চাই।

( দুই )
শিল্পী? শিল্পী কে নয়? কম-বেশী আমরা সকলেইতো শিল্পী। কল্পনাই যার একমাত্র মূলধন। ঈশ্বরের কৃপায় সে মূলধনেতো আমরা কেউ বঞ্চিতও নই। তবে?----- প্রকৃত ধ্বনির প্রকাশ ভঙ্গিই তাকে করে যথার্থ সার্থক। কত বিস্মৃত বেদনা, অতীতের ঘটনা, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, শিল্পীর কল্পনার তুলিতে হয়ে ওঠে কেমন বাঙ্ময়। সুক্ষ্মভাবে এমন সুন্দর ও সুস্থ প্রকাশের মাধ্যম আর কি-ই-বা হতে পারে? যা কিনা আমার মত এক মোটা বুদ্ধির মানুষকেও নাড়া দিয়ে যায়? একি শুধুই ছবি? এ যে প্রাণের চেয়েও জীবন্ত। আগুনের চাইতেও জ্বলন্ত!
প্রায় মাসখানেক পরে, শিল্পীর বাড়ীর ঠিকানা ও পথ নির্দেশ দিয়ে কলিকে দেখা করতে বলা হয়। তার যেন আর তর সয়না। চিঠি আর বাকি টাকা সঙ্গে নিয়ে, দুপুর রোদে একাই বেরিয়ে পড়ে। রাস্তা ঘাটও ঠিক চেনা নেই। খুঁজেপেতে নিতে হবে। সময় হাতে নিয়ে বেরোনই ভাল।

( তিন )
ঠিক যেমনটি বলা। -নিমফুল- ষ্টেশনে নেবে, সেখান থেকে বাসে উঠে ঠিক এল,আই,সি র মোড়ে নেবে যায়। তারপর সোজা কিছুটা হেঁটে এল,আই,সি অফিসের বাঁদিকের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই "নটরাজ" সীনেমা হল। ওই সীনেমা হলের ডান দিকের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলে, গলির মুখেই এক বিশাল লালেলাল কৃষ্ণচূড়া গাছ। সেই গলির ভেতর ঢুকে ছটা বাড়ী ছাড়িয়ে নেমপ্লেট দেখে এতক্ষনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। যাক্ ঠিকঠাক আসতে পেরেছে তাহলে? কিছুক্ষন চুপটি করে দাঁড়ায়। শান্তভাবে নিজেকে গুছিয়ে, উত্তেজনা আড়াল করে, ধীর পদক্ষেপে এগোয়। দেখে-------------এক চিলতে ছোট্ট বাগান। বেশ মোটা করে মেহেদি গাছ দিয়ে মোড়া। তরই, মাঝে মাঝে সমান করে ছাঁটা বহু বর্নের ভূত-ভৈরব ফুল যেন উঁকি মারছে। ছোট্ট অথচ পোক্ত, কারুকাজ করা একটি বাঁশের গেট। যার ওপর অর্ধ-বৃত্তাকারে দুলছে থোকাথোকা মাধবী লতা। সব মিলিয়ে কাঁচা বেড়ার এক অপূর্ন সংমিশ্রণ।

গেট টপকে, মাথা উঁচিয়ে, দেখে একজন বয়স্ক মহিলা। খুরপি হাতে বোধহয় বাগানেরই পরিচর্যা করছেন। কারুর অপেক্ষায় ছিলেন বোঝাই যায়। কারণ শব্দ বিহীন উপস্থিতিতেই মাথা বাঁকিয়ে, পেছন ঘুরে তাকান। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে, হাত ঝেড়ে, কোমর থেকে চাবির তোড়া খুঁজতে খুঁজতে, একপা, দুপা করে এগিয়ে আসেন। কলির পক্ষে নিজেকে আর স্থির রাখা সম্ভব হয়না। শিশুর মত চীৎকার করে, শূন্যে দুহাত ছড়িয়ে বলে ওঠে,------- কুসুম, তুই? আমি জানতাম, আমার মন বলেছিল, এ তুই-ই হবি, তুই-ই হবি।"
- "তুই? এতদিন পর? কি করে আমার খোঁজ পেলি? আমি যে আমার নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা কলি? সত্যিই তুই?-"
-"কেন? তোর অ্যাকাডেমি থেকে তোকে কিছু জানায়নি?-"
-"হ্যাঁ, ওনারা অবশ্য জানতে চেয়েছিলেন, একজন মহিলা ছবিটি কিনতে চান, বাড়ীতে পাঠাবে কিনা? কিন্তু সে যে তুই-ই তাতো ভাবতে পারিনি!-"
----কেন? তুই ছবি আঁকতে শিখেছিস আর আমি বুঝি ছবি কিনতেও শিখিনি? কিন্তু কি অভাবনীয় আমাদের সাক্ষাৎ বল? ভেবেছিলাম আর বুঝি এ জন্মে দেখাই হোলনা। এখন ভাবছি কি করে রে এতদিন ছেড়ে ছিলাম?---------
---মেয়েদের যে কিছুই থাকতে নেই----------
-"জানিস? আমি তোর কত খোঁজ করেছি। পুরোন পাড়ার সেই কোয়ার্টারে সব, সব নতুন মুখ। কেউ তোদের কথা বলতেই পারলনা? কত যুগ পর দেখা, কত কথা যে জমে আছে। কোন কথা যে আগে বলব, আগে শুনব তাই-ই ঠিক করতে পারছিনা। ও ছবি টবি ওসব এখন আর আমি ভাবতে পারছিনা।
ও পরে হবে, পরে হবে।-----------
-"কলি, তুই এখনও ঠিক সেই আগের মত ছটফটেই আছিস। ছবির কথা থাক, ওতো তোর জন্য তোলাই রইল।-"
-"আচ্ছা, তুই এরকম চুল টুল পাকিয়ে বুড়িয়ে গেছিস কেন?-"
-"তা বয়সটা কি কম হোল? তবে চুলে পাক ধরলে কিহবে, মনটা কিন্তু এখনও সবুজই আছে।-"
-"আ-হা, তোর বয়স হয়েছে, আর আমি বুঝি কচি খুকিটি আছি? জানিস মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। রীতিমত শাশুড়ি বনে গেছি। মেয়ে ওখানেই রয়ে গেল। আমাদের আর ওখানে মানায় নারে। তাই একটু একটু করে উষ্ণতা ফুরিয়ে, হিম হয়ে দেশেই ফিরে এলাম। ওর পছন্দ মত এখানে একটা কাজও পেয়ে গেল, আর ওখানে থাকতে চাইলনা। পুরোন বন্ধু, পুরোন পাড়া, সারাদিন চুটিয়ে আড্ডা মারছে। তুইতো জানিসই ও কেমন আড্ডাবাজ।-"
-"বাব্বাঃ, সে আর জানবনা? সেই ফাঁদেইতো তুমি গলে গেলে সোনা-----------------
-"মনে আছে? তোর সব মনে আছে? ছোট থেকেই একটু বেশী পাকা ছিলাম নারে? আমার মেয়েটাও না ঠিক আমার মতই হয়েছে। তবে আমার চাইতে দেখতে ভাল।-"
-"সে কি রে? তোর চাইতেও সুন্দর? সে কেমন?-"
-----হয়েছে, হয়েছে বুড়ো বয়সে আর আমার রূপের কীর্তন করতে হবেনা। আমিতো এসে থেকেই বকবক করে সব বলে ফেললাম। তোর কথা কিছু শোনা?-----কি, বলব বল?---
-"শংকরদা কি এখনও তেমনটি শান্তই আছে?-"
-"আচ্ছা, এ তোর কেমন প্রশ্ন? অশান্তকে শান্ত হতে শুনেছি। কিন্তু শান্তকে অশান্ত হতে আমিতো কখনও শুনিনি, দেখিওনি। তুই শুনেছিস?-"
-"সাগর কি করছে রে? ওতো ছোটর থেকেই খুব ভাল।-"
-"এইতো গত বছর খড়গপুর আই,আই,টি থেকে মেকানিকেল ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে, এখন মুম্বাইতে আছে। এখনও বিয়ে দিয়ে উঠতে পারিনি।-"
-"তা তুই কবে থেকে এত বড় শিল্পী হলি? সারাটা জীবন বাইরেই পড়ে রইলাম। আমার কিছুই হোলনারে। ফড়িং এর মত শুধু উড়ে উড়েই মরলাম।-"
-"সে পরে, পরে শুনবি। কথা বলে বলেতো গলা একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। নে, এবার গলাটা একটু ভিজিয়ে নে।-"

( চার )
কুসুম, আমাদের সেই স্কুলের কথা তোর মনে আছে? হিউম-পাইপ বস্তি থেকে বেরিয়ে, হিউম-পাইপ কারখানা পেরিয়ে, বিরাট এক মাঠের মধ্যে দিয়ে কুসুম আর কেন্দু ফল কুড়োতে কুড়োতে স্কুলে যেতাম। আমাদের ওখানে তখন সবারই কেমন আতা গাছের বেড়া ছিল নারে? আমরা সেই আতা ফুল তুলে তুলে খেতাম। আমিতো কোন দিনই পড়া-শোনায় তেমন ভাল ছিলামনা। তুইতো বরাবরই ভাল রেজাল্ট করেছিস।--------
-"হ্যাঁ, পড়া-শোনাটা ভালই লাগত। জানিস ছেলে বেলায় প্রায়ই দেখতাম, মাকে দেখতে একজন পার্সি লেডি ডাক্তার, রাজ-হংসীর মত দুধ সাদা বিরাট এক গাড়ী চালিয়ে আমাদের বাড়ী আসতেন। পার্শিরা এমনিতেই সুন্দর, তার ওপর উনি ছিলেন ডাক্তার, ফলে ওনার রূপের জৌলুসই ছিল আলাদা। ওনাকে দেখে, সেই শিশু বয়সেই আমি স্থির করে ফেলি, বড় হয়ে ডাক্তার হবই। তবে তার জন্য নিজের যে কতটা মেধা বা যোগ্যতার প্রয়োজন সেটা বোঝার মত বয়স তখনও হয়নি। অবশ্য সেই যোগ্যতা পরিমাপের জন্য কারুর তেমন ইচ্ছেও ছিলনা। তাছাড়া এত-জনের সংসারে, একজনের পেছনে এত ব্যায় করা তখন সম্ভবও ছিলনা। তও আবার সামান্য একটি মেয়ের জন্য? এও কি সম্ভব?

( পাঁচ )
ঠিক, সেই সময়ই তো তোর বিয়ে হয়ে গেল। তুই চলে গেলি সাগর পাড়ে। আমি একদম একা হয়ে গেলাম। ভাবলাম কোন রকমে কলেজটা ডিঙ্গিয়ে, বি,টি ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষিকা হব, তাও সম্ভব হোলনা। কারণ মেয়েদের পেছনে সব শেষ হয়ে গেলে, ছেলেদের বেলায় যে টান পড়বে? ওদেরতো উচ্চশিক্ষা দিতেই হবে। সব চাইতে দুঃখের ব্যাপার কি জানিস, অর্থ এবং চেষ্টা দুই-ই যথেষ্ট পরিমানে মজুত থাকা সত্ত্বেও আমার কোন ভাই কলেজ পর্ব টুকুও সমাধা করতে পারেনি।------------

শুনেছি মায়ের নাকি ইচ্ছে ছিল, তাঁর সব মেয়েরা যেন গ্রাজুয়েট হয়, আর বাবার ইচ্ছে ছিল, তাদের মেয়েরা যেন পাত্রস্থ হয়। তা মা এবং বাবা দুজনের ইচ্ছেই যথা সময়ে পূর্ণও হয়েছে। কিন্তু মেয়েদের সাধ তাতে কতটুকু মিটেছে, তা কেউ কোনদিন ফিরেও দেখেনি। ------------ তবুও হাল ছেড়ে দিইনি। বিয়ের পর আরও একবার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ীর বৌ এর এমন অস্বাভাবিক উচ্চাকাঙ্খা, কারুরই তেমন মনঃপূত হয়নি। ফলে থমকে থেমে গেছি।
এই যাঃ, এতদিন পর দেখা, অথচ তুই আমায় এমন সূত্র ধরিয়ে দিলি যে, পাথর চাপা স্রোতের মত সেই পুরোন দুঃখ আবার উথলে উথলে উঠছে। বাদ দে, বাদ দে, ওসব পুরোন কথা। ওসব ভুলে গেছি। ও আর মনে পড়ে না। মনে করতে ভাল লাগেনা।
-"কেন? এতে এত দুঃখেরই বা কি আছে? আমারতো মনে হয়, দুঃখের তেজে তুই নিজের স্বরূপকে আবিষ্কার করে, নিজের দক্ষতাকে প্রমান করতে পেরেছিস। তুই সত্যিই সার্থক।------------ দেখ একজন শিল্পীর কাছে একজন ডাক্তার কিছুই না। রেস্ত থাকলে অমন গন্ডা গন্ডা ডাক্তার বানানো যায়। কিন্তু শিল্পী? সে নিজেই সৃষ্টি হয়।-"
-"না, না ঠিক তানয়। তবে বয়সের সাথে সাথে মানুষের সব ব্যাপারেই বোধহয় একটা স্থিতি আপনা থেকেই এসে যায়। তখন যার জন্যে হয়ত মনে খুবই দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু আজ মনে হয়, যা হয়নি, তা হয়ত আমার ভালর জন্যই হয়নি। একটা কথাতো মানতেই হবে, ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। ডাক্তার হলে হয়ত মানুষ মারা ডাক্তার হতাম আর শিক্ষক হলে, ছাত্র মারা শিক্ষক হতাম। সমাজের এতবড় ক্ষতি যে আমার দ্বারা সাধিত হয়নি, এজন্য অবশ্যই আমি কৃতজ্ঞ। হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে।-----
-"তুইতো খুব ভাল গান গাইতিস। ওই যে একটা গান আছেনা,-----আমি অকৃতি, অধম বলেওতো,
-------কিছু কম করে মোরে দাওনি---------------
আমার জন্যে বোধহয় একথাগুলো ভীষণইভাবে প্রযোজ্য। কি বল? গা-না শুনি।

------কে বলবে, আমারই সম বয়সী। যার প্রতিটা নাড়ী-নক্ষত্র আমার চেনা। কপালে অনেকটা ভাঁজ তুলে, ঘাঁড়টা বাঁকিয়ে, খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে একমনে গান শোনে। অভিজ্ঞতার ভারে অবনত, কৃপণতার শিকার এক মানবী। হালকা হাওয়ায়, দুহাতে কুসুমকে জড়িয়ে মাথার ওপর গালটা ঠেকিয়ে বলি।----------- কুসুম, আমরা যে একই বৃন্তের কুসুম-কলি। তুই আর কত লুকাবি? আমি সব জানি, সব বুঝি। তার স্বপ্ন আজও তোকে প্রেরণা জোগায়। তুই আজও তাকে ভুলিসনি, ভুলতে পারিসনি।-----------

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছড়িয়ে দেয় ঘরময়। তারপর সমাধিমগ্ন স্বরে নিজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে, বুনে বুনে যায়।
--------না, না কোন উৎসাহ, কোন উদ্দীপনা, কোন প্রেরণা কোনদিনই আমার জন্য ছিল না। আমার প্রেরণা আমার একাকীত্ব। ----- শিক্ষার কাঙ্গাল আমি, পারিনি সেই শিখরে আরোহন করতে। তাই তুলি-কলম আঁকড়ে বেঁচে আছি। এছাড়া আর কি-ই-বা বুকে চেপে এত আনন্দ পেতাম বল?

স্বামী, ছেলে যে যার কাজে চলে যায়। সারাদিন একা। আর চিরদিনই একটু ঘরকুনো স্বভাবের। ফলে আশেপাশে কারুর সাথে তেমন মেলামেশাও হয়না। ঠিক সেই সময়, পাশেই এলেন এক মহিলা। তার একটি ফুটফুটে বাচ্চা। নাম পূজা। পূজা যেন রঙ-তুলি হাতে নিয়েই জন্মেছিল। খুব ভাল আঁকতে পারত। চাকুরীরতা মহিলা, সময়ের বড়ই অভাব। আর আমার অজস্র সময়। তাই পূজা আঁকার স্কুলে ভর্তি হলে, আমিই ওকে আনা নেওয়া করতাম।
চারপাশে রঙের মেলা। তারই মাঝে ফুলের মত শিশুর মেলা। দুচোখ খুলে তাকিয়ে থাকতাম। বাড়ীতে অবসর সময়ে একটু আধটু চর্চাও করতাম । বেশ ভালই সময় কাটত। এটা যেন আমার একটা নেশা হয়ে গেছিল। সাত-তাড়াতাড়ি কাজ সেরেই আঁকা নিয়ে বসতাম। কোথা দিয়ে যে সময় বয়ে যেত টেরই পেতামনা।
পূজার আঁকার স্কুলে, প্রতি বছরই ছবির প্রদর্শনী হত। সেখানে যার ইচ্ছে , সেই নিজের হাতের আঁকা দিতে পারত। সাহস করে, লুকিয়ে লুকিয়ে একবার দিয়েই দিলাম। বাড়ীর কেউ জানতই না। পরে যখন আমার সেই ছবি নিয়ে চারপাশে খুব হৈ-চৈ পড়ে গেল তখন সকলে জানল। সেই থেকে আমার শুরু। তারপর, এখনতো এটা আমার নেশা, পেশা দুটোই বলতে পারিস। আমার মনের জানালা ----- ------ আমার জীবনের শ্বাস, প্রশ্বাস।

এই উত্তরণ পর্বের সূচনা হয়েছিল সেই সময়, যে সময় ---------- রাজস্থানের রূপ-কানোয়ারের ঘটনা চারপাশে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিষয়টা মনের গভীরে এমনভাবে দাগ কাটে যে, সেটাই আমার ক্যানভাসে ছবি হয়ে ফুটে ওঠে।

আমার জীবনের প্রথম পুরষ্কার প্রাপ্ত ছবি, ----বিষন্ন এক নারীর মুখ, অগ্নি-স্ফুলিঙ্গের ন্যায় দুটি চোখ, কপালে সিঁদুরের লেলিহান শিখা,------ যার টাইটেল দিয়েছিলাম --" নো মোর--" সেই আদিম রং। যা কিনা নারীর আবেগ, বিক্ষোভ, পুরুষের ব্যবহার্য হিসেবে প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি, বিষয়বস্তু ও নাম সব মিলিয়ে ছবিটি এক বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×