
[আগেই বলে নিচ্ছি আমি প্রেমে অবিশ্বাসী একজন মানুষ। আমার মতে প্রেম ভালবাসা হল অভ্যাসের বিষয়। যে কোন মেয়েকে ভালবাসতে চেষ্টা করলেই ভালবাসা যায়। ]
সব কিছুর একটা লাইফ সাইকেল থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে সব কিছু চলে। যেমন দিনের পর রাত, রাতের পর দিন। মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে শিশু, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য তার পর মৃত্যু। চক্র থাকবেই কিন্তু
আমার প্রেমিক বন্ধুদের আমি যখনি জিজ্ঞেস করি , আদর্শ প্রেমের স্টেপ গুলা কি ? তারা কেউ বলতে পারে না আমি তাদের কে জিজ্ঞেস করি দোস্ত, প্রেম কি? তখন তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি এই গ্রহের কোন প্রানী না!! কেঊ কেঊ বলে দোস্ত এইটা তোর ফিল্ড না । একেক্টা প্রেম একেক রকম।
ফাজলামি নাকি। সব প্রেমের নিশ্চয় কোন একটা সাধারন চক্র আছে।সময় সীমা আছে। কেঊ না বল্লেও আমি বেশ কিছু দিনের গবেষনায় প্রেমের একটা লাইফ সাইকেল দাড়া করাইলাম। আপনারা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
প্রেমের লাইফ সাইকেল শুরু করার আগে চলুন প্রেমের সংজ্ঞা জেনে নিই। আমার মতে প্রেম হল অনেকটা শ্বাস কষ্টের মত। কোন একটা মেয়েকে আমি কেন পাবনা কেন আরেক জন পাবে এই ঈর্ষা থেকে শ্বাসকষ্টের শুরু। এই শ্বাসকষ্ট শুরুতে গোপন অবস্থায় থাকে। এবং মাঝে মাঝে রাতে ঘুমানোর আগে জানান দিতে থাকে। যে যত বড় বীর সে এই শ্বাস কষ্টে বেশি দিন টিকে থাকে এটাই অনেকের ধারনা। আসলে এটা ঠিক নয়। অনেক বীরদাবিকারী কেও আমি স্বল্পসময়ে কাত হয়ে যেতে দেখেছি।
যাইহোক আর কেচাল না করে এবার আসুন প্রেমের লাইফ সাইকেলে আসা যাকঃ ছেলে মেয়ের পরিচয় থেকে শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত একটি প্রেমের সাধারন্ত
৭ টি পর্ব থাকে।আমি প্রতিটি পর্বের আমার মত ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করলাম।
১।পরিচয় পর্বঃ সাধারনত গল্প উপন্যাসে দেখাযায় এই পর্ব খুব মজার হয়ে থাকে। প্রেমিকে সাথে প্রেমিকার ধাক্কা টাইপের ঘটনা তার পর আবার দেখা এমন বাস্তবে হয় না। বাস্তবে সবার চোখ থাকে এবং একবার কারোসাথে ধাক্কা লাগ্লে বাকি সাড়া জীবন তার সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। বাস্তবে সাধারন্ত কাজিন, বন্ধু ,ছাত্র অথবা বন্ধুর ছোট বোন-আত্মীয় এদের সাথে প্রেম হইয়ে থাকে।ঈদানিং অবশ্য মোবাইল, ফেসবুকেও পরিচয় হচ্ছে। দুই একটা ক্ষেত্রে নাটকীয় ঘটনা হয়তো ঘটে কিন্তু পরিমানে কম। প্রথম দেখাতেই প্রেম কথাটা পুরাই ফাউল। প্রথম দেখাতেই সেক্স জেগে উঠতে পারে বাট প্রেম কিছুতেই নয়।
প্রথম দেখার দিনক্ষন সিনেমাতেই মনে রাখা সম্ভব বাস্তবে না! প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সাথে দেখা হয় এদের যে কেউই হতে পারে আপনার প্রেমিক অথবা প্রেমিকা । কাজেই প্রেম হবে কি হবে না এর উপর প্রথম দেখার তেমন কোন প্রভাব নাই!
২। যোগাযোগ পর্ব/বন্ধুত্ব পর্বঃ এই পর্বে যোগাযোগ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়, আগে যোগাযোগ না থাকলে সৃষ্টি করে নেওয়া হয়। বর্তমানে মোবাইল, ফেসবুকের যুগে এটা তেমন কঠিন কিছু নয়। আমার মনে হয় এই পর্বটা জনগুরুত্বপূর্ন। কারন এই পর্বেই একজন আরেক জন কে প্রকৃতভাবে জানে। এই পর্বের শেষের দিকে ছেলে মেয়ে একে অপরের ভাল বন্ধু হয়ে উঠে।
৩। সিম্প্যাথি প্রদর্শন পর্বঃ এই পর্যায়ে প্রেম প্রেম খেলার শুরু। সাধারন্ত ছেলেরাই এই খেলা শুরু করে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী মেয়েরাও এই খেলা শুরু করতে পারে। এই পর্বে ছেলেরা মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করে সে তার প্রতি কতটা যত্নবান। ছেলে ঘন ঘন কল করে মেয়ের খুজ নিতে চেষ্টা করে। সাধারন্ত এটা মোবাইল কলের মাধ্যমেই বেশি হয়ে থাকে। এই পর্বের কথা বার্তা নিম্নরুপ।
-হ্যালো............
.........
খাইছো।
না হইলে ছেলে বলবেঃ দেখ,সবারই কিন্তু সময় মত খাওয়া দরকার ।নইলে শরীর খারাপ করবে।
হ্যা হইলে ছেলে বল্বেঃ কম করে খাবা, হইলে তুমি মোটা হয়া যাবা ।এখন তোমারে অনেক সুন্দর লাগে।
এই পর্যায় হল মেয়ের সাথে একমত হওয়া আর উপদেশের পর্যায়।
৪।প্রেম পর্বঃএই পর্ব সবচেয়ে সুন্দর বলে মনে হয় আমার কাছে।এখানে ছেলে মেয়ে সবাই একে অপরের খোজ খবর নেয়। কিন্তু এই পর্বের স্থায়িত্ব সবচেয়ে কম। এই পর্বে ছেলে মেয়েকে সারাক্ষন কানে মোবাইল ফোন গুজে রাখতে দেখা যায়। একজন আরেক জনের সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না । মেয়েরা একটু বেশি আহ্লাদি হয়ে যায়। অন্য কোন ছেলের সাথে ফ্লাটিং করা বাদ দেয়। এবং ধীরে ধীরে প্রেমিক ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারেনা। এই পর্বে বেশির ভাগ মেয়েই প্রেমিক কে তাদের স্বামী হিসেবে মনে মনে কল্পনা করে নেয়। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা তেমন বেশি গঠেনা। এই পর্যায়ে মোবাইল আলাপের নমুনাঃ
-হ্যালো......।
............।
খাইছো?
না হইলেঃ কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ। তুমি জাননা তুমি না খেলে আমার কষ্ট হয়।
হ্যা হইলেঃ কি খাইছো?
ভাত আর মাছ।
কি মাছ? কয়টা কাটা ছিল মাছে। তার পর মাছ থেকে নদী নালা খাল বিল আকাশ হয়ে আবার ফিরে আসা।
পুরাই থ্রিলিং!!
এই পর্যায়ে প্রেমিক প্রেমিকারা কিস (মোবাইলে অথবা সরাসরি) করে থাকে সাধারন্ত।
৫। সিম্প্যাথি আদায় পর্বঃ এই পর্ব পুরাই ছেলেদের খেলা। পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে সিম্প্যাথি প্রদর্শন পর্বের কথা ? এই পর্বে ছেলেরা তার হিসাব চুকায়। ছেলের কোন ব্যপারে মেয়ে কিছু না ভাবলে ছেলে ক্ষেপে আগুন হয়া যায়। এই সময় ছেলেরা মেয়েদের কে তাদের একচেটিয়া সম্পত্তি ভাবে। ছেলেরা মেয়ের বন্ধু বান্ধব কাউকে মেয়ের পাশে সহ্য করতে পারে না।
ছেলেরা মেয়েদের কে ইমোশনালি ব্লাকমেইল গুলা এই পর্বেই করে থাকে। আগেই বলেছি প্রেম পর্বে মেয়েরা তাদের প্রেমিক কে মন থেকে মোটামুটি স্বামি হিসেবে মেনে হয় কাছে ছেলেদের কাজ হাসিল করতে তেমন সমস্যা হয় না। প্রথমে একটু গাই গুই করলেও পরে ঠিকি অন্যায় আবদার গুলো মেনে নেয়। এই পর্যায়ে যে সব কথা বার্তা হয় তা সেন্সর না করে পাঠকদের সামনে বলা ঠিক হবেনা যদিও......তারপরো কিছুটা বল।
-হুম্মম্ম.........এখন একটু আদর কর!!(ছেলে)
-উহু
-না কর(ছেলে)
-না
তাইলে কিন্তু একমাস দেখা করবোনা তোমার সাথে কথাও বল্বো না(ছেলে)
এই পর্যায়ে সাধারন্ত মেয়েরা দুর্বল হয়ে পরে। এবং ছেলেদের কাজ হাসিল সহজ হয়ে যায়!!
৬। হু হ্যা পর্বঃ এই পর্বে ছেলেরা বা মেয়েরা যারাই সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে চায় তারা মূল ভূমিকা রাখে। এই পর্বে কেউ কারো কথা ঠিক মত ভাবে না ।কারো কথা শুনে না। খালি হু হা করে। এই পর্যায়ে অন্য পক্ষ বুজতে পারে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা যাবে না । এই পর্যায়ের কথা বার্তা নিম্নরুপঃ
-খাইসো?
-হু।
কি খাইসো?
-হু
-কি কও?
-অ হ্যা কি? আবার বল শুনিনাই।
-কিছু না>(রেগে)
-আচ্ছা ।। তোমারে পরে কল করবো এখন বিজি আছি।
৭। ব্রেক আপঃ সবচেয়ে ছোট পার্ট । কিন্তু ঘটবেই।সবাই জানে এটা ঘটবে। কিছুই করার নাই। এক মাঘে শীত যায় না যেমন সত্যি এক প্রেমে জীবন যায় না এটাও তেমন সত্যি।
** বিয়ের পর প্রেম এমনিতেই হু হ্যা পর্বে চলে যায়।
** আমার নিজস্ব অনুসন্ধান। কারো সাথে নাও মিলতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৪